বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২১

দুই মিল নিতে আগ্রহী চীন

এ মাসেই হচ্ছে পাটকল ইজারা


চলতি মাসের যে কোনো সময় দেশের বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলগুলো ব্যক্তি বা কোম্পানি পর্যায়ে ইজারা (লিজ) দেওয়া শুরু হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকলগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে পাওয়া প্রস্তাবগুলো গৃহীত নীতিমালার আলোকে পরীক্ষার জন্য সরকার গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়।

মিলগুলো দ্রুত চালু করে উৎপাদন বাড়িয়ে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনতে ইজারা পদ্ধতিকে চূড়ান্ত করে এগুচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে অবসায়নকৃত শ্রমিকদের মধ্যে অভিজ্ঞ ও দক্ষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিও পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেকারত্ব নিরসনে সরকারের আমন্ত্রণে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুটমিল লিজ নিতে চায় তারা।  চীনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে মিল দুটো পরিদর্শন করে গেছে।

এদিকে সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ থাকলেও বেসরকারি পাটকলগুলোয় পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেবব্রুারি) করোনাকালেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। যেখানে একই সময়ে পোশাক, চামড়া, চামড়াজাত পণ্যসহ অন্য অনেক খাতের রপ্তানি কমেছে।

প্রাথমিকভাবে পাটকল পুনরায় চালুর জন্য চারটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল সরকার। প্রথমত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), দ্বিতীয়ত যৌথ উদ্যোগ, তৃতীয়ত সরকার টু সরকার (জিটুজি) এবং সর্বশেষ পরিকল্পনা ছিল ইজারা বা লিজ দেওয়া। বিশ্লেষণ শেষে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে-ইজারা দেওয়া কারখানাগুলো বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। লাভ-লোকসানে কোনো অংশীদারিত্ব থাকবে না। ইজারা দেওয়ার পর সরকারের দেওয়া শর্ত পালন করছে কিনা তা তদারকি করবে বিজেএমসি। এ ছাড়া অগ্রাধিকার হিসেবে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য থাকবে লিজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি। এ জন্য কঠোর নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছে পাট মন্ত্রণালয়।

তবে পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করে তারপর চালুর দাবি জানিয়েছে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী এ দাবি জানান। তাদের মতে, বিশ্বব্যাপী চাহিদা পূরণ ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া হলে তা দেশের শিল্প ও অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উদ্যোক্তাদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। সরকারের লক্ষ্য পাটকলগুলোর শ্রমিকরা যেন কাজে ফিরে আসে। এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকলগুলো চালু করতে সরকার গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মাদ আবুল কালাম জানান, আশা করছি এ মাসের মধ্যেই লিজ প্রক্রিয়া শুরু হবে। মার্চের শেষ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। যারা অংশ নেবে তাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। এরপর প্রস্তাব চাওয়া হবে। যাদের প্রস্তাব দেশের জন্য কল্যাণকর বিবেচিত হবে তাদেরকেই লিজ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে যে কয়টা ভালো বলে মনে হবে সে কয়টাই দেবে সরকার। বাকিগুলোর জন্য পরে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আলোকে উন্নত দেশগুলোয় ২০২২ সাল থেকে পাট ও তুলাজাতীয় পণ্যের ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তখন পাটজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা দেখা দেবে। তিনি আরো বলেন, পাটশিল্প নিয়ে ভাবনা-চিন্তা, গবেষণা বা জরিপ না করে কিছু সংখ্যাক ট্রেড ইউনিয়ন নেতার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ও আমলাদের পরামর্শে আকস্মিকভাবে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।

প্রসঙ্গত, সোনালি আঁশে সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। প্রতিষ্ঠাকালে বিজেএমসির আওতায় ছিল ৭০টিরও বেশি পাটকল। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে এখন রয়েছে মাত্র ২৫টি পাটকল। প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসান দিয়েছে বিজেএমসি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১