বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২১

সবই নিয়তের ওপর নির্ভরশীল


পৃথিবীতে দুই প্রকার ব্যাক্তি রয়েছে। একজন আখেরাতের কাজ করেও জাহান্নামি। অন্যজন দুনিয়াবি কাজ করেও জান্নাতি। দেখলে মনে হবে, প্রথম ব্যক্তি আখেরাতের কাজ করছে। আর অপরজন দুনিয়াবি কাজ করছে। মূলত তার উল্টো। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, এরকম কেন হবে বা এর হেতু কী? এর একটিই মাত্র হেতু। আর সেটি হলো নিয়্যাত। আল্লাহতায়ালা মানুষের কার্যকলাপ দেখেন না। তার নিয়্যাত দেখেন। তার কাজের ফয়সালাও নিয়্যাত অনুযায়ী হবে।

প্রথমজন আখেরাতের কাজ করে মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষ তাকে বুজুর্গ বলবে। দীনদার নেক্কার ব্যক্তি বলবে। যদি বেশি বেশি করে নামাজ আদায় করে, লোকেরা তাকে নামাজি বলবে। অপরজন দুনিয়াবি কাজ তথা ক্ষেত-খামারে কাজ করেও আখেরাতের সামানা অর্জন করে নিল। জমিনে লাঙ্গল চালায় আর মনে মনে আল্লাহর যিকির। দেখলে মনে হবে, এগুলো দুনিয়াবি কাজ। মূলত এগুলো দুনিয়াবি কাজ নয়। কারণ, তাদের নিয়্যাত ছিল শুদ্ধ। তারা মনে করেন, আমার এই ক্ষেত-খামার থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এর বদলা স্বয়ং আল্লাহ আমাকে কিয়ামতের দিন  দেবেন।

বুখারি শরিফের শুরুতেই একটি হাদিস উল্লেখ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন ‘প্রত্যেক কাজই তার নিয়তের ওপর বর্তাবে।’ (বুখারি) কাল কিয়ামতের ময়দানে তিনজন ব্যাক্তিকে সর্বপ্রথম দাঁড় করাবেন। তন্মধ্যে একজন হবে শহীদ, ২য় জন হবে বড় আলেম, অপরজন হবে দানকারী। আল্লাহতায়ালা শহীদি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কেন শহীদ হয়েছ? শহীদ ব্যক্তিটি বলবেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার রেজামন্দির জন্য শহীদ হয়েছি। আপনার দীনকে বুলন্দ করতে আমি দিগ্বিদিক  ছুটেছিলাম রণক্ষেত্রে। কালিমার পতাকা উড্ডীন করতে আমি জিহাদে যোগদান করে ছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি আমাকে রাজিখুশি করতে শহীদ হওনি। আমার দীন বুলন্দ করতেও তুমি শহীদ হওনি; বরং তুমি শহীদ হয়েছ, মানুষ তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। শহীদদের খ্যাতি অর্জন করবে। তখন আল্লাহতায়ালা ফেরেস্তাদের আদেশ দেবেন, এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের অন্দরমহলের গন্ধকাষ্টে নিক্ষেপ করো। ফেরেস্তারা আদেশ পেয়ে এই ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

এবার জিজ্ঞাসা করবেন বড় আলেমকে। তুমি কেন ইলম অর্জন করেছ? ব্যক্তিটি প্রশ্নোত্তরে বলবেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনাকে রাজিখুশি করতে আমার অর্ধেক হায়াতকে ইলমের রাস্তায় কোরবান করে দিয়েছি। মানুষকে আপনার দিকে আহ্বান করতে আমি ইলম অর্জন করেছি। মানুষকে গোমরাহি থেকে সঠিক পথের দিশা দিতে আমি এই ইলমকে হাছিল করেছি। তখন আল্লাহতায়ালা বলবেন, না, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি ইলম হাছিল করেছ মানুষ তোমাকে বড় আলিম বলবে, বড় বুজুর্গ বলবে। দীনদার-নেক্কার বলবে। মানুষ তোমাকে হাদিয়া তোহফাহ দিবে। সুতরাং,তুমি তোমার বদলা দুনিয়েতেই পেয়ে গেছ। এখানে তোমার কোনো বদলা নেই। ফেরেস্তাদের আদেশ দেবেন জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য। ফেরেস্তারা আদেশ পেয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। অতঃপর ডাকা হবে দানশীল ব্যক্তিকে। জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কেন দান করেছ? দানশীল ব্যক্তিটি উপরোল্লিখিত ব্যক্তির ন্যায় উত্তর  দেবে। বলবে, আমি পুরো জীবনের অর্জিত মাল দান করেছি আপনাকে রাজি খুশি করতে। আল্লাহতায়ালা বলবেন, না। তুমি দান করেছ মানুষ তোমাকে দানশীল বলবে। মানুষ তোমার দানের আশায় তোমার মুখাপেক্ষী হবে। সুতরাং, তুমি তোমার জাযা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছ। এখানে তোমার কোনো বদলা নেই।

তাদের কাজগুলো ছিল আখেরাতের। কিন্তু নিড় হলো জাহান্নাম। আল্লাহতায়ালা মানুষের নিয়্যাত দেখেন। সবকিছুর ক্ষেত্রে একই হুকুম। যদি আমি কাপড় পরিধান করি মানুষকে দেখানোর জন্য, তাহলে আমি সাওয়াবের ভাগীদার হতে পারবনা। যদি আমি এই কাপড় সতর ডাকার নিয়্যাতে পরিধান করি, তাহলে এক ডিলে দুই পাখি মারার মতো। সাওয়াবও পেলাম, কাপড় পরিধানও করলাম!

এভাবে আমার প্রতিটি কাজে যদি নিয়্যাত সহিহ থাকে, তাহলে আমার কাজও সম্পাদন হলো, সাওয়াবও হাছিল হলো। তাই নিজেকে যাচাই করে নিই। আমি কোন ব্যক্তির কাতারে শামিল হচ্ছি। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন!

লেখক :মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

আলেম, প্রাবন্ধিক


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১