বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২১

জনশক্তি রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা


করোনার পরিস্থিতির দ্বিতীয় ধাক্কায় বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। করোনা পরিস্থিতির প্রথম ধাক্কা সামলে ওঠার কাছাকাছি সময়ে জনশক্তি রপ্তানিতে কিছুটা সুবাতাস বইছিল। কিন্তু ফের দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হওয়ায় হতাশ এই খাতের ব্যবসায়ী ও বিদেশগামী কর্মীরা। নতুন করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কমপক্ষে ২৫ হাজার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখা এই খাতটি এমনতিইে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। তিনি জানান, এ মাসের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মীর ভিসা ও বিমানের টিকিট কনফার্ম করা আছে। এখন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেলে এসব কর্মী কেউ যেতে পারবে না এবং তাদের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। এতে জনশক্তি ব্যবসায়ী এবং বিমানের টিকিট নেওয়া কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ইতোমধ্যে যাদের ভিসা ও টিকিট কনফার্ম করা হয়েছে তাদের টাকাগুলো ফেরত পাওয়াও কষ্টকর হবে। এজন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যাদের টিকিট কনফার্ম করা হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা। কারণ কর্মী গ্রহণকারী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনো বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ফলে শুধু টিকিট কনফার্ম করা ২০ থেকে ২৫ হাজার কর্মীকে সে দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে এই সেক্টরের সবাই উপকৃত হবে। কারণ এসব ভিসা ও টিকিট বাবদ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশই করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। আমরাও করোনা প্রতিরোধে তাদের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে এ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারি।

তিনি আরো জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা এখনো আছে। কিন্তু কর্মী প্রেরণের বিষয়ে সরকারি বিশেষ ব্যবস্থানার উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে কর্মী যাওয়া কমে গেলেও সৌদি আরবে এখনো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি জানান, করোনার প্রথম ধাক্কা কিছুটা কমে আসায় বৈদেশিক শ্রমবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হওয়ায় এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমরা নিজেরাও জানি না।

জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মতে, বিদেশে এই খাতের কর্মী গ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর অবস্থা করোনার কারণে নাজুক। এই পরিস্থিতিতে এসব কোম্পানির অনেকগুলোই বর্তমান কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে নতুন করে কর্মী নেওয়ার বিষয়টি অনেক কোম্পানি চিন্তাই করতে পারছে না। তারা জানান, গত এক বছরের বেশি সময় করোনা পরিস্থিতিতে হাজার হাজার বিদেশি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে অথবা কর্মকাণ্ড সীমিত করে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মীর বিদেশে চাকরির সুযোগ হলেও করোনার কারণে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেটা কেউই বলতে পারছে না। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের সেই সক্ষমতা আর থাকবে কি না কারো জানা নেই। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর যে লক্ষ্যমাত্রা থাকে সেটাও পূরণ করা আর সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখানে দেখা যায়, কমবেশি মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ১৭২টি দেশে কর্মীরা যায়। কিন্তু করোনাকালে জনশক্তি রপ্তানি শুধু সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নির্ভর হয়ে পড়েছে। পরিসংখানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারিতে বিদেশে কর্মী গেছে ৮৫ হাজার। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই গেছে ৬৫ হাজার কর্মী। এসব কর্মীর বেশিরভাগই তাদের পুরনো কর্মস্থলে যোগ দিতে যাচ্ছেন। অথচ করোনার আগে প্রতি মাসেই ৬০ থেকে ৮০ হাজার কর্মী বিদেশ যেত।

সৌদি আরবগামী এক কর্মী আরিফুর রহমান বলেন, আমার ফ্লাইট আছে ১৭ এপ্রিল। এখন আমাদের ফ্লাইট যদি পরিবর্তন হয় বা না যেতে পারি তার খরচ কে বহন করবে? উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে সৌদি আরবে আছেন প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ফ্লাইট পরিচালনায় বাধা না থাকলেও এ ক্ষেত্রে করোনা মুক্তির সনদ চায়। এ ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি নিতে এবং নিয়ম মেনে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১