বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২১

করোনাযুদ্ধে জয়ের প্রত্যাশা *স্বাগতম বাংলা নববর্ষ ১৪২৮

রুদ্ধ দুয়ারে এলো বৈশাখ


বিদায় ১৪২৭। আজ বুধবার বাঙালির নতুন বর্ষবরণের দিন। স্বাগতম ১৪২৮। নতুন বছর মানেই মঙ্গল শোভাযাত্রা, মেলা, ইলিশ-পান্তা খাওয়া, হালখাতা খোলা, আর কত কী! কিন্তু এ বছরটাও অন্য বছরের থেকে আলাদা। কারণ করোনা সংকটে হতাশা আর আশঙ্কার কালো মেঘ জমেছে বিশ্বজুড়ে। তবুও নতুন বছরে নতুন সূর্য উঠবে করোনাযুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। এবার কঠোর লকডাউনে ঘর থেকে বের হওয়াই মানা। সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতে হবে। কিন্তু তাতে কী! কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবসভ্যতা রক্ষার যুদ্ধে ঘর থেকেও আজ বাংলা নববর্ষের সূর্যোদয় দেখছে বাঙালি জাতি। গত বছরের মতো এবারো প্রিয়জন বা কাছের মানুষ, বন্ধু ও আত্মীয়দের পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায় বা মুঠোফোনের মাধ্যমে।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাসের অদৃশ্য জীবনবিনাশী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে মানুষ। লকডাউনের কারণে ঘরে থাকায় বাইরের অনেক আয়োজনকে চার দেয়ালের মধ্যে নিয়ে এসে, দেশের মানুষ আজ বরণ করছে নতুন বছরকে। প্রতিটি দিনের চেয়ে আজকের দিনটি তো একেবারেই আলাদা। আজ উষার আলোয় জেগে উঠে সারা দেশ। কিন্তু মঙ্গলের প্রত্যাশায়, সব মানুষের কল্যাণ কামনায় বেরোবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহর-নগর-গ্রামগঞ্জে বসবে না বৈশাখি মেলা।

প্রভাতের প্রথম কিরণে কোটি বাঙালির কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হবে না সেই উজ্জীবনী আবাহন, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ তারপরও বছরের প্রথম দিনে প্রার্থনা, জীর্ণ-পুরোনোকে দূরে সরিয়ে আনন্দের ডালি নিয়ে আসুক নতুন বছর। সৃষ্টিকর্তা যেন সবাইকে ভালো রাখেন। সুস্থ রাখেন। যে ঘোর আতঙ্ক আমাদের গ্রাস করেছে, তা কেটে যাক। এবারের বৈশাখের তাপস নিঃশ্বাস বায়ে বছরের আবর্জনা শুধু নয়, দূর হয়ে যাক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েপড়া মহামারীও। ঘরে বসে এই প্রার্থনাও জানাতে হবে।

বিগত বছরের গ্লানি, জরা, আবর্জনা ভাসিয়ে দিয়ে ঘরে থেকেও প্রাণের তানপুরায় মানুষ শুনছে বাঙালির বর্ষবরণের আবহমান সুরধ্বনি। বাতাসে কিংবা ইথারে ভেসে আসা কল্লোলে কণ্ঠ মিলিয়ে আজ বাঙালি গেয়ে উঠছে, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।’ নতুন বছরের নতুন এ সূর্য বাঙালিকে দিচ্ছে দুঃসময়কে জয় করার দুরন্ত শক্তি। বিশেষ এক পরিস্থিতিতে এবার রমনার বটমূলে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষবরণের আয়োজন নেই, নেই রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা।

কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলা নববর্ষের নানা আয়োজনে এবারও উৎসবের সুরধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে কোটি বাঙালির হূদয়ে। ছায়ানট সোস্যাল মিডিয়ার বার্তায় জানিয়েছে, এবার করোনাজনিত পরিস্থিতিতে বর্ষবরণের আয়োজন হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। নতুন বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানানো এখন আর উৎসব নয় বরং জীবনযুদ্ধে জয়ের শপথ।

নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি নববর্ষকে ডিজিটালি স্বাগত জানানোর যে আহ্বান রেখেছে;  তাতে সাড়া দিয়ে ছায়ানট এবার সীমিত আকারে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে।

বর্ষবরণ ১৪২৮ অনুষ্ঠানটির সমপ্রচার শুরু হবে সকাল ৭টায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও এই অনুষ্ঠান দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে। সমপ্রচারে আগ্রহী বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও বিটিভি সমপ্রচারিত অনুষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে।

ছায়ানটের সভাপতি সানজীদা খাতুন এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে বাঙালির আপন সত্তার স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আর মানবকল্যাণের ব্রত নিয়ে ১৯৬১ সালে ছায়ানটের জন্ম। এই সংগঠন আজন্মই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। লক্ষ্য অর্জনে ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের ভোরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আসছে এই সংগঠন। ১৯৭১ সালে দেশকে শত্রুমুক্ত করার সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ছাড়া আর কখনো বন্ধ হয়নি রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বমানব আজ বিপর্যস্ত। বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে না মানবজাতি। লড়াই চলছে, পাশাপাশি চলছে বিপন্ন মানবসমাজকে জাগিয়ে রাখার, বাঁচিয়ে রাখার অনন্ত প্রয়াস। এই জীবনযুদ্ধে মনোবল অটুট রাখা অনিবার্য। তাই নতুন বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানানো এখন আর উৎসব নয় বরং জীবনযুদ্ধ জয়ের শপথ। তাই পিছু না হটে নববর্ষ বরণে ছায়ানট আয়োজন করেছে উজ্জীবনী সুরবাণীর।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে পহেলা বৈশাখ ভোর সাতটা থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এ অনুষ্ঠানের ফ্রেশ ফিড পাবে। অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সামপ্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সানজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সমপ্রচার হবে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা : প্রাণঘাতী করোনাসংক্রমণজনিত দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনও হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে, ডিজিটাল মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে প্রথম বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। বাঙালির নববর্ষের এই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ইউনেস্কো বিশ্বসংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবছর মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের মিলন ঘটলেও, এবার আমরা বিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। মানে সবাইকে ঘরে থাকতে এবং নিরাপদ থাকতে বলছি। কারণ এবারের ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের এখন ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তিনি জানান, এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার পোস্টারটি অন্তর্জালের মাধ্যমে ঘুরবে সারা দেশে, সারা বিশ্বে। শোভা পাবে রাজধানীর দেয়ালেও।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১