বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২১

লকডাউন : ৪৯ শতাংশ নারী নিরাপদ নয়


করোনা মহামারীর প্রকোপ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে ৪৯ শতাংশ নারীই নিজেকে নিরাপদ মনে করেন না। কোভিডকালীন ও তার পরবর্তীসময়ে ঘরে এবং বাইরে নারী নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘সরকারের আর্থসামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা : নারীরা কতটা উপকৃত হয়েছে’ শীর্ষক আয়োজিত ওয়েবিনারে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন তার প্রবন্ধে এসব তথ্য উপস্থাপনা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. রওনক জাহান ওয়েবিনার সংলাপটি পরিচালনা করেন। ফাহমিদা খাতুন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ৪৯ শতাংশ নারী ও কিশোরী বলছে লকডাউন পরিস্থিতিতে তারা নিজেকে নিরাপদ মনে করেন না। কারণ কোভিড পরবর্তীসময়ে ধর্ষণ ও অভ্যন্তরীণ নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পারসোনা হেয়ার অ্যান্ড বিউটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও নারী উদ্যোক্তা কানিজ আলমাস খান বলেন, আমাদেরকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেটা যেন টিকে থাকে, সেজন্য সরকারের সহযোগিতা চাই। অনেক পার্লার বন্ধ হয়ে গেছে। পুনরায় চালু করার জন্য ঋণ নিচ্ছেন না অনেক পার্লার মালিক। কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন ব্যবসা চালু হবে কি না। অন্যদিকে ঋণ নিতে যে বিভিন্ন কাগজপত্রের নামে ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদাপত্র থাকে, তা কাটিয়ে অনেকেই ঋণ নিতে আগ্রহী নন।

আমি নিজে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমাদের অনেক ক্ষুদ্র পার্লার ব্যবসায়ীকে সরকারের প্রণোদনা হিসেবে ঋণের বিষয়টি বলেছি। অধিকাংশ আমাকে বলেন, শুধু চার শতাংশ কেন, বিনা সুদে হলেও ঋণ নেবেন না। তারা ঋণ চান না, প্রকৃত অর্থে প্রণোদনা চান। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের প্রনোদনা দিলে ব্যবসা চালু করতে পারবেন।

পার্লার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তিনি আগামী তিন বছরের ভ্যাট ও কর মওকুফ করার দাবি জানান। বলেন, ন্যূনতম বাসা ভাড়া দিয়ে হলেও অনেকে পার্লার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু ভ্যাট ও কর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিষয়েও নতুন করে বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে।

এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে ৭৮ ভাগ নারী ইনফরমাল অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি দেশের জন্য ভালো সংবাদ। তিনি (কানিজ আলমাস) কিছু দাবি করেছেন। ভ্যাট ও কর মওকুফের বিষয়টি আমি সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লীলা রশীদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে প্রণোদনার মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যূনতম বরাদ্দ ছিল পাঁচ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ৭২ শতাংশ ঋণ ছাড় করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ নারীদের জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৬২ শতাংশ ঋণ নারী উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দিয়েছে। বাকি ২৮ শতাংশ দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ঠিক করে ঋণ দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের উদ্দেশ্য পূরণে নারী উদ্যোক্তা মূলত ঋণ দিয়েছে। কাগজে-কলমে নারী উদ্যোক্তা হলেও প্রতিষ্ঠান চালান পুরুষ উদ্যোক্তা। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী বা মার নামে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। আসলে মূলত নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা নেওয়ার জন্য কাগজে-কলমে রাখা হয়েছে।

২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লকডাউন সময়ে ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী ও ১৯ শতাংশ গার্মেন্টশ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের হার ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের প্রেগনেন্সি বেড়েছে ৩০ শতাংশ, যা নারী স্বাস্থ্য বিবেচনায় চিন্তার বিষয়ে।

সংলাপে সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের নারী প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম প্রমুখ।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১