বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২১

পায়রায় হচ্ছে না গভীর সমুদ্রবন্দর

মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়েও শঙ্কা


দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে ২০১৩ সালে শুরু হয় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। অবশেষে উপকূল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। তাই মাতারবাড়ীতে সরকারের গভীর সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। যেসব কারণে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে এসেছে, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রেও একই কারণ বিদ্যমান বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য প্রায় সত্তর কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এ ছাড়া জায়গাটি ঠিক বন্দরের জন্য যথাযথ নয় বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। আর এসব কারণে গভীর সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, মূলত আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারকে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে। কারণ ভারতের বিশাখাপত্তম ও বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমারের গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যেও আরো সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ভারত। এসব কারণে পায়রায় বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং এর অর্থনৈতিক উপযোগিতা নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘সরে আসার সিদ্ধান্তটা সরকারের রাজনৈতিক। কারণ শুরুতে এটা সোনাদিয়ায় করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা নিয়ে জাপানি একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ চলছিল। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অনুরোধ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেটাকে সোনাদিয়া থেকে সরিয়ে পায়রায় নিয়ে আসা হয়। শুরুতে পায়রায় সমুদ্রবন্দর করার সম্ভাব্যতা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, বিশেষ করে নাব্য ধরে রাখার বিষয়ে। কিন্তু সরকারের শুরুতে ধারণা ছিল, নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ধরে রেখে চলমান রাখা যাবে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে ভারত ও মিয়ানমারসহ এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বন্দর গড়ে উঠেছে। ভারতের বিশাখাপত্তম ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যে গভীর সমুন্দ্রবন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে। মিয়ানমারেও আমাদের অনেক কাছেই একটি সমুদ্রবন্দর হয়েছে। এসব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকার দেরিতে হলেও পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।’ তবে সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিপিডি’র এই গবেষক।

এদিকে সরকার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মূলত অভ্যন্তরীণ কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মাতারবাড়ীতে ছোট আকারের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এখন কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সবাই সরে যাচ্ছে। সরকারকেও বিভিন্ন সংস্থা কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারও বিষয়টিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। এ কারণে অনেকগুলো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা থাকলেও এ নিয়ে কিছুটা দোদুল্যমানতায় রয়েছে সরকার। খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মনে করেন, যদি সরকার কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসে তাহলে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, পায়রার মতো মাতারবাড়ীরও একই পরিণতি বরণ করবে কি না সে আশঙ্কা অমূলক নয়, যদিও সেখানকার প্রেক্ষাপটটা কিছুটা ভিন্ন। যদি সরকার কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসে, তাহলে মাতারবাড়ী শুধু কয়লার উদ্দেশ্যে ব্যবহার না তাহলে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পুনর্মূল্যায়ন এই অর্থে যে এটি কত বড় আকারের হবে, কী উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার হবে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কতটা, আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কতটা ব্যবহার হবে সেটি নিশ্চিত করা। যদি বিদ্যুৎ প্রকল্প না হয় সে ক্ষেত্রে অন্যান্য উপকরণ রয়েছে সে অনুযায়ী কত আকারের গভীর সমুদ্রবন্দর হবে সেই প্রেক্ষাপটগুলো পূনর্বিবেচনার দরকার।’

সিপিডি গবেষকের মতে, বড় বড় যেসব প্রকল্পের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগসূত্র রয়েছে সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে সরকারের আরো ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ করা এগুতে হবে, নইলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বৃহৎ প্রকল্পগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে সেগুলোর অর্থনৈতিক উপযোগিতা, আঞ্চলিক বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে তড়িঘড়ি করে করা হয়। ফলে পরে এসব সিদ্ধান্ত থেকে আবার সরে আসতে হয়। এসব ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলোর কমিটমেন্ট আদায় করে নেওয়া দরকার, যাতে করে প্রকল্পগুলো পরবর্তীতে অকার্যকর হয়ে না যায়। এটি শুধু পায়রার ক্ষেত্রেই নয়, আরো যেসব বড় প্রকল্প রয়েছে বিশেষ করে যেগুলোর সঙ্গে ভারতসহ অন্য দেশগুলোর যোগসূত্র রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে তাদের কমিটমেন্টটা নিশ্চিত করা দরকার। নতুবা আঞ্চলিকভাবে বন্দর ব্যবহার নিয়ে যে ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হচ্ছে সেখানে এ ধরনের বড় বিনিয়োগ আমাদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১