বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২১

বাবার তুলনা শুধুই বাবা


পৃথিবীতে ছোট্ট একটা শব্দ বাবা। বাবা মানে আদর। বাবা মানে আবদার। বাবা মানে শাসন। বাবা মানেই নীরব ভালোবাসা। আমরা বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখি না। বাবা নিজের প্রতি বড্ড কৃপণ হন। নিজের প্রতি খুবই হিসেবি হন। পরিবার আর সন্তানদের জন্য তার ভান্ডারের সব দিতেও তিনি কার্পণ্যতা করেন না। কম পয়সায় কোন জিনিসটা পাওয়া যায় আর তা নিজের জন্য নিয়ে আসাটা মনে হয় আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। যেখানে সামান্য জ্বর সর্দিতে আপনি, আমি কাবু। সেখানে শরীরের অস্বাভাবিক জ্বর ও অসুস্থতা নিয়েও তিনি নিজের মতো করেই সুস্থতার ভান করে চলেন প্রতিটি ক্ষণ। বিছানায় শুয়েও সন্তানদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে চিন্তায় বিভোর। হাজার দুঃখ-ব্যথায়ও বাবার চোখে পানি আসে না সহজে। বাবা যেন কঠিন কোনো এক পদার্থের তৈরি। তাই সন্তানের সুখে, দুঃখে বাবার স্থানই সবচেয়ে বেশি উপরে। বাবার তুলনা শুধুই বাবা।

বাবার সংজ্ঞাটা অনেকে অনেকভাবেই করতে পারেন। বাবার সংজ্ঞাটা এভাবেও বলা যায়, বাবা হলেন নীরব বয়ে চলা নদী। কখনো জোয়ার, কখনো ভাটার মাঝে দিন কাটে তার। নীরবে বহমান হয়ে চলেন জীবনের প্রতিটি ধাপ। যিনি জীবনের সমস্ত উপার্জন দিয়ে বাড়িঘর গড়ে তোলেন ঠিকই। কিন্তু বাড়িঘরে থাকার সবচেয়ে কম সময় যিনি পান তিনি হলেন বাবা। বাবার বাড়িঘরে দীর্ঘসময় রাজত্ব করি আমরা। অথচ যিনি বানালেন তিনি হয়তো বাড়িঘরের সেই সুখের সময়গুলোতে পাশে থাকেন না। থাকেন আলোকবর্ষ দূরে। নিজের সবটুকু দিয়ে যিনি সন্তানদের আগলে রাখেন তিনি হলেন বাবা।

একথা চিরসত্য যে, পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বেশি ধৈর্যশীল কেউ থাকেন তারা হলেন বাবা। বাবা হলেন নির্ভীক নাবিকের মতো। যে নাবিক শত ঝড়, তুফানের মাঝেও জাহাজ বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। বাবাও তেমন সকল বাধা-বিপত্তি থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে জীবনের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে যান। বাবা তিনিই যিনি সন্তানের আনন্দের খবরে না হেসে, গম্ভীর গলায় বলেন আরো ভালো কিছু হতে হবে। পরক্ষণেই আড়ালে গিয়ে সন্তানের সাফল্যে নীরবে চোখের অশ্রু ঝরান। বাবাকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমি রাখি না। তবে কিছুটা অনুভব করি বাবা বড্ড একঘেয়ে একটা মানুষ। জীবনের সুখের সময়টা সবার সাথে ভাগ করে নিলেও দুঃখের ভাগটা কাউকে দিতে অনিচ্ছুক এই মানুষটি।

আর বাবার স্বপ্নকে পূরণ করতে সন্তানদের যে অবহেলা বর্তমান ও অতীত সময়ে পরিলক্ষিত হয়। তা সত্যিই দুঃখজনক। সেই ছোট্টবেলায় যখন হাটতে গিয়ে আছাড় খেয়ে ব্যাথা পেতাম আমাদের তখন বাবা ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ওষুধ। আমরা তখন বাবার হাতের আঙ্গুলটি ধরে হেঁটে বেড়াতাম। বাবা একটি একটি করে পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিকে চেনাতেন হাত ধরে ধরে। যখন আমাদের ঘুম পেতো মা আমাদের ঘুম পাড়াতেন। কিন্তু বাবা তো সন্তানকে কোলে না নিয়ে কখনো ঘুমাতে পারতেন না। বাবার বুকে মাথা রেখেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বছরের পর বছর কাটিয়েছি আমরা।

আর একটা সময় বয়সের ভারে যখর বাবার দেহটা আর চলতে পারে না। তখন তিনিও সেই ছোট্টবেলার শিশুর মতো হয়ে যান। তখন তিনি খুঁজে বেড়ান সন্তানের হাত। খুঁজে বেড়ান সন্তানের বুকে মাথা রেখে, সন্তানের হাতের কোমল পরশে ক্লান্ত দেহে আসবে ঘুম। তিনিও তখন সন্তানের হাতটি ধরে চলতে চান জীবনের অন্তিম সময়গুলো। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বর্তমান সমাজে বাবার প্রতি যে অবহেলা  আমরা করি। তা সত্যিই সন্তানদের জন্য কলঙ্ক। বাবাদের স্থান তো হবে ঘরে, মনের মসজিদে। আজ বড় নির্মমতার সাথে বলতে হয় বাবার বয়স হলেই তিনি যেন হয়ে পড়েন ঘরের সবার তাচ্ছিল্যের পাত্র। তাদের স্থান হয় তখন ঘরের চিলেকোটা বা বৃদ্ধাশ্রমে। যেখানে শেষ বয়সে সন্তানের পরম ভালোবাসায় থাকার কথা, সেখানে নিসঃঙ্গ জীবনের আধারে কেঁটে যায় বাবার প্রতিটি দিন।

অতএব, আমরা সকল বাবা ও মায়েদের জন্য প্রতিদিন দোয়া করবো ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪) অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ আর একটি উপহার, যা ছোট্ট হলেও তাদের অনেক পছন্দের একটি উপহার, ‘বাবা! খুব ভালোবাসি তোমাকে, খুব ভালোবাসি। যেভাবে পাশে আছো, সেভাবেই থেকো চিরদিন।’ আল্লাহ তায়ালা সকল বাবা ও মাকে সুস্থ রাখুন, ভালো রাখুন, নিরাপদ রাখুন। আমিন সুম্মা আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল

দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১