বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১

হারভেস্টার মেশিন এখন কৃষকের ভরসা


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সর্বত্র মাঠে মাঠে সোনালী ধানে সমারোহ। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে দিকে চোখ যায় পাকা আর পাকা ধান। মাঠে মাঠে দুলছে সোনালি ধান। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। ইতোমধ্যে উপজেলার সর্বত্র ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। পাকা ধান নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা বিপাকে পড়ায় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার মশিনে তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে চলছে ধান কাটার কাজ। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছেন ধান কাটার দৃশ্য। অল্প সময়ে মাঠের ধান কর্তন ও ঝাড়াই-মাড়াই করতে দেখে উৎসুক জনতার মুখে হাসি। ধান কাটা শেষে কেউ কেউ স্বচ্ছ ধান হাতে নিয়েও দেখছেন। যেখানে একজন কৃষকের জমি থেকে ধানকাটা, মাড়াইসহ অন্যান্য কাজে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় সেখানে স্বল্প টাকায় ও শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া করতে পারছেন ওইসব কাজ। এই করোনা কালিন সময়ে ডিজিাল পদ্ধতিতে ধান কাটার সুযোগ পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা খুবই খুশি।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ’এ প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুও। সরকার করোনা মহামারি ঠেকাতে সারা দেশে লকডাউন আওতায় নিয়ে এসেছেন । সরকারের নির্দেশিত সব নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তারা মাঠে নেমে কাজ করছেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ট্রেনসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতে পারছেনা। ফলে কৃষকরা পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। তাছাড়া বোরো ধান কাটার সময় কালবৈশাখী ঝড় শিলা বৃষ্টি, আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকার ধান নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কৃষকের এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সরকার খামার যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমে উদ্যোক্তারাও এগিয়ে এসে মেশিন ক্রয় করেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,চলতি বোরো মৌসূমে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা জমির জমির ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ মৌসূমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

এদিকে এলাকায় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার’ মেশিনটি বেশ পরচিতি লাভ করেছে। স্বল্প সময়ে কম খরচে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া ধান কাটা, খর কাটা সেইসাথে মাড়াই সুবিধা থাকায় অতি সহজে ধান ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা বেজায় খুশি।

জমির মালিক মো. মুসা মিয়া বলেন, তার ১২ বিঘা জমিতে ধান পেকে আছে। শ্রমিকের অভাবে তিনি পাকা ধান কাটতে পারছেন না। কিন্তু এই মেশিন আসায় ধান কাটার বড় একটি চিন্তা দুর হয়েছে। এ যন্ত্রটি দিয়ে ১ বিঘা বা (৩০ শতক) জমির ধান কাটতে ২০ মিনিটি সময় লাগে। এক সাথে জমির ধান কাটা-মাড়াই -ঝাড়া ও বস্তায় ভরা হয়ে যায়। বিঘা প্রতি টাকা দিতে হচ্ছে ১৬ শ থেকে ১৮ শ টাকা নিচ্ছে। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে ধান কাটতে পেরে তিনি খুবই খুশি।

কৃষক মো. আলম খা, মিলন খা, আক্তার হোসেন বলনে, এই করোনা কালিন সময়ে ধান কাটার শ্রমিক ৫০০ টাকা দিয়ে ও পাওয়া যাচ্ছে না। জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। এখন মেশিন আসায় ধান কাটার চিন্তা দুর হলো।

তিনি আরো বলেন, ১ বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিক নিচ্ছে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। সেই সাথে জমির ধান বাড়িতে আনা, তারপর পায়ে চাপা মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করা সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকার উপর খরচ হয়।

মেশিন মালিক মো. তামজিত খান বলেন এ মৌসুমে তিনি একটি হারভেস্টার মেশিন কিনেছেন। সকাল বিকাল পুরোদমে ধান কাটার কাজ করছেন। এই যন্ত্রটি দিয়ে দ্রুত ধান কাটা, শ্রমিকের অভাব দূরীকরণ, স্বল্প খরচ, ফসলের ক্ষতি কম, একই সঙ্গে ঝাড়াই-মাড়াই ও বস্তাবন্দি অতি সহজে করা যায়। তিনি আরো বলেন মেশিনে ধান কাটতে বিঘা প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু মেশিন ছাড়া শ্রমিক দিয়ে জমির ধান কাটালে একজন কৃষকের বিঘা প্রতি ধান কাটা মাড়াই, ঝাড়াই বাড়ি পৌছা পযর্ন্ত ৪ হাজার টাকার উপর খরচ হতো। কিন্তু এখন মেশিন আসায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে । তিনি বলেন মশিনটি গত ৮ এপ্রিল কেনা হয়। এর পর মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে আকাশের অবস্থা ভালো থাকে না । ঝড়সহ যেকোন দুযোর্গ হয়ে ফসল নষ্ট হতে পারে। আগে ধান কেটে ২-৪ দিন ফেলে রাখতে হতো। এতে বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। কিন্তু মেশিনে এক ঘণ্টার মধ্যে এক একর জমির ধান কেটে মাড়াই করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছে। অল্প সময়ে মানুষ ঘরে ধান তুলতে পারছে।

মেশিন চালক মো. সোহাগ মিয়া বলেন ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে দ্রুত ধান কাটা মাড়াই-ঝাড়া এক সাথে হয়ে যায়। এলাকায় এ যন্ত্রটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মূলত শুকনো জমিতে ধান কাটা হয়। প্রতিদিন ৪০-৫০ বিঘা জমির ধান কাটা যায়।

সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন উন্নত দেশে কৃষি কাজে লোকজন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বর্তমানে অনেক প্রযুক্তি আমাদের দেশে চলে এসেছে যা কৃষকদের অনেক সহায়তা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষকরা ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে জমির পাকা ধান কাটছে। এরফলে কৃষকের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম লাঘব হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এই মেশিনটি ক্রয়ে সরকারি সুবিধা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১