বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২১

কাপ্তাই ট্যুর


অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। একটু রিফ্রেশের জন্য জায়গা খুঁজছিলাম। এর কল্যাণে পেয়ে গেলাম কাপ্তাইয়ের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে জানিয়ে দিলাম। এর মধ্যে ৫ জন সদস্য পেলাম যাওয়ার জন্য।

আমাদের প্ল্যান ছিল কায়াকিং+নৌকা ভ্রমণ করব। গত শনিবারে ভ্রমণের ডেট ঠিক করি। আমরা সবাই চট্টগ্রামের ছিলাম। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাই যেতে হলে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে যাওয়া যায়। বাস স্টেশন থেকে ১৫ মিনিট পরপর কাপ্তাইয়ের বাস ছাড়ে, ভাড়া ৬৫ টাকা। আমাদের প্ল্যান ছিল, সকাল ৮টায় গাড়িতে উঠব, ১০টায় কাপ্তাই নামব। তা আর হলো না। সবাই ৮টায় বাস স্টেশনে চলে এলেও একজনের কোনো খবরই নেই। সবার মন খারাপ হয়ে যায়। এমনিতে সদস্য কম, এর মধ্যে আরো একজন কম। সবাই কল করেও তার সাড়া পাই না। আমরা গাড়িতে ওঠার একটু আগে তার কল আসে, কল দেখে অনেক খুশি ও রাগ দুই ছিল। ওই পার থেকে ভেসে আসতেছে”দুস্ত সরি। মাথা ১০০-তে ১০০ গরম। রাগটা কন্ট্রোল করে তাড়াতাড়ি করে আসতে বললাম। আমরা ৪ জন বাস স্টেশন কাউন্টারের পাশে নাস্তা করলাম। পরোটা আর চা খেলাম। বিল এলো ৪ জনের ৬১ টাকা। যারা সকাল সকাল বের হবেন, নাশতা করে না এলে তারা স্টেশনে নাস্তা করতে পারেন। বাস স্টেশনের কাউকে বাঁশখালী কাউন্টার কোথায় জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে, এর সামনে হোটেলটা। নাশতা করে নিলে ভালো। ২/৩ ঘণ্টার যাত্রাপথ কাপ্তাই যেতে। আমাদের সেই মহান বন্ধু এলো। কাপ্তাইয়ের গাড়ি ছিল; কিন্তু যাত্রী ছিল না। লিচুবাগানের গাড়ি ছিল পাশে। কাপ্তাই যাওয়ার আগে লিচুবাগান পড়ে, ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। কাপ্তাই যেতে হলে লিচুবাগানের গাড়িগুলোতে করে যাওয়া ভালো, কাপ্তাইয়ের বাসগুলো থেকে অনেক ভালো। ৯টা ২০ মিনিটে গাড়িতে উঠি। আমাদের পেছনের সিট মেলে। কিন্তু রাস্তা ভালো থাকায় সমস্যা হয়নি। ৯টা ৩০ মিনিটে গাড়ি ছাড়ে। গাড়িতে  খাওয়ার জন্য মহান লেট বন্ধু ২টা ৫০০ মিলিলিটার কোক আর সমুচা নিল সবার জন্য, খরচ ১০০ টাকা। রাস্তার দুই পাশে  সবুজ গ্রাম দেখতে দেখতে ১১টার মধ্যে লিচুবাগান স্টেশনে পৌঁছে যাই।

গাড়ি থেকে নেমে ৩টা চিপস নিলাম ৪৫ টাকা দিয়ে। লিচুবাগান মোড়ে অনেক ঈঘ েআছে কাপ্তাই যাওয়ার জন্য। লিচুবাগান থেকে কাপ্তাইয়ের ভাড়া ৩০ টাকা করে ঈঘ েপ্রতি জন। যারা কায়াকিং করবেন তারা জুম রেস্তোরাঁয় জন্য ঈঘ েনেবেন ১০০/১৫০ টাকা দিয়ে, আমরা ১৫০ টাকা দিয়ে ঠিক করি। ৩০ মিনিটের মতো লাগে পৌঁছাতে, যাওয়া সময় রাস্তার দুপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মন ফ্রেশ হয়ে যায়। উঁচুনিচু রাস্তা যা পাহাড়ের পাশ কেটে চলে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। জুম রেস্তোরাঁর সামনে কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাবে চালু করে বললে সে নামিয়ে দেবে। নামার সাথে সাথে পিক, সেলফি। এক পাশে কাপ্তাই লেক আর এক পাশে পাহাড় ২টা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। কায়াক ক্লাবের নিচে নেমে  ও পিক তোলা শেষ হয় না। আমরা ৫ জনের মধ্যে ২ জন মেয়েও ছিল। তারা সাঁতার জানে না। ভয়ে করতে চাচ্ছে না কায়াকিং। আবার লোভও সামলাতে না পেরে রাজি হয়ে যায়। ৩টা কায়াক বোট নিলাম। ২০০ করে রাখল স্টুডেন্ট বলে। এমনিতে ২৫০, যাওয়ার সময় স্টুডেন্ট আইডি কার্ড নিয়ে যাবেন, ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট পাবেন। আমরা নিয়ে গেছিলাম ৬০০ দিয়ে ৩টা বোট নিলাম। এক বোটে ২ জন করে বসা যাবে। আমাদের মধ্যে একজন আগে করেছিল কায়াকিং। সেই ১টা নিয়ে চলে গেল আর বাকি ২টা ২ জন করে বসে পড়লাম। সবাইকে লাইফ জেকেট পরতে হবে আর ওরা যা নিয়ম বলবে সেই নিয়মে করবেন। কায়াকে দাঁড়ানো যাবে না, কায়াক করার অবস্থায় নামা যাবে না বোট থেকে, নইলে ১০০০ টাকা জরিমানা করবে। ১ ঘণ্টা কায়াকিংটা ছিল অনেক অনেক অসাধারণ মুহূর্ত  পাহাড়ের মাঝে। পুরো ১ ঘণ্টা কায়াকিং করলাম, ১ মিনিটও ছাড় নেই। কায়াকিং করে অনেক খিদে লেগেছে সবার। কায়াক ক্লাবের পাশে ২টা রেস্তোরাঁ আছে। আমরা ডান পাশে ফ্লোডিং প্যারাডাইস রেস্তোরাঁতে যাই। ভাত-ডাল ৪০ টাকা, আর দেশি মুরগি ১৩০ টাকা এক পিস। ৫ জনের খাবার এবং সাথে ১ লিটার সেভেন আপ ৯৪৫ টাকা বিল এলো। হোটেলের আংকেল ৯০০ টাকা রেখেছে। রেস্তোরাঁ থেকে কাপ্তাই লেক ভিউ অনেকে সুন্দর ছিল। কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁয় সময় কাটালাম লেক দেখে। এর পর জেটিঘাট যেতে হবে। জুম রেস্তোরাঁ সামনে, হেঁটে চলে যাবেন ওইখানে। ঈঘ েরয়েছে একজন ২০/২৫ টাকা করে জেটিঘাট। ঈঘ েচালক ২৫০ বলেছিল, ১০০ দিয়ে রিজার্ভ করি।

কাপ্তাইয়ের যতই ভেতরে যাবেন তত সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। রাস্তার পাশে অনেক পার্ক, জাতীয় উদ্যান, ঘোরার স্পট আছে। যারা সময় নিয়ে যাবেন ওইগুলো ঘুরে দেখবেন। যারা রাত কাটাবেন তারা প্রশান্তি পার্কে থাকতে পারবেন। আমারা জেটিঘাট গিয়ে একটা নৌকা ঠিক করি ঘণ্টায় ১৫০ টাকা। সদস্য বেশি হলে ইঞ্জিন চালিত সাম্পান নেবেন ১০০০ টাকা করে ১  ঘণ্টায়। ওরা আপনাকে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র, কাপ্তাই বাঁধ, লেক ভিউও দেখাবে। চাইলে লেক ভিউতে নামতে পারেন, ১০০টা এন্ট্রি ফি। আমাদের ইচ্ছা ছিল না, তাই যাইনি। লেকের পানি খুব পরিষ্কার আর সবুজ রঙের ছিল। লেকে নৌকা রাইড দিয়ে অনেক ভালো লাগল। যে পরিমাণ আনন্দ পেলাম সে হিসেবে টাকাটা অনেক কম মনে হয়েছে। যারা লেকের পানিতে গোসল করতে চান করতে পারবেন। আমাদের একজন এক্সট্রা কাপড় এনেছিল, বাকিরা আনেনি, তাই করা হলো না। নৌকা ভ্রমণ শেষে এবার ফেরার পালা। শনিবারে ওইখানে হাট বসে, চাইলে কিছু কিনতে পারেন, দাম কম তুলনামূলক। জেটিঘাট থেকে লিচুবাগান ১৭৫ টাকা। লিচুবাগান নেমে একটা দোকানে ঢুকে নাশতা করলাম। কেক, ঠান্ডা খেলো ৪ জন, চা খেলো ১ জন ১১০ টাকা। লিচুবাগান থেকে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন ৪৫ টাকা ভাড়া। আসার সময় ঘুমিয়েছি গাড়িতে। শহরে নামিয়ে দেয় আমাদের ৫টা ৪০ মিনিটে।

এইবার আসি খরচের কথায় : *সকালের নাশতা ৬১+১০০ =১৬১ টাকা। *বহদ্দারহাট টু লিচুবাগান ভাড়া ৪৫–৫ = ২২৫ টাকা। *চিপস ৪৫ টাকা। *লিচুবাগান টু কায়াক ক্লাব রিজার্ভ ১৫০ টাকা। *কায়াকিং ৩ বোট ৬০০ টাকা। *দুপুরের খাবার ৯০০ টাকা। *কায়াক ক্লাব টু জেটিঘাট রিজার্ভ ১০০ টাকা। *নৌকা ভ্রমণ ১৫০ টাকা। *জেটিঘাট টু লিচুবাগান রিজার্ভ ১৭৫ টাকা। *বিকালের নাশতা ১১০ টাকা। *লিচুবাগান টু চট্টগ্রাম শহর ৪৫–৫= ২২৫ টাকা। মোট ৫ জনের খরচ (১৬১+২২৫+৪৫+১৫০+৬০০+৯০০+১০০+১৫০+১৭৫+১১০+২২৫=২৮৪১ টাকা)

প্রতি জনের খরচ হবে (২৮৪১/৫=৫৬৯) টাকা। ৬০০ টাকায় ১ দিনের ট্যুর হিসাবে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে।

বি. দ্র. : কাপ্তাই এলাকা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আমাদের সবার দরকার আমাদের দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা। যেখানে ঘুরতে যাবেন ময়লা যেখানে-সেখানে ফেলবেন না। ময়লা একটা পলিথিনে রেখে ব্যাগের এক পাশে রাখুন।

লেখক:রেজাউল মুক্তাদীর 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১