আপডেট : ১৭ মে ২০২১
টানা সাতদিন ধরে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রকম্পিত গোটা ফিলিস্তিন। এই হামরায় এখন পর্যন্ত ৫৫ শিশুসহ মারা গেছে ১৮৮ ফিলিস্তিন। আহত হয়েছে এক হাজারেও বেশি। সবশেষ গতকাল রোববার গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ২৬ জন আহত হয়। তবে এই হামলার পাল্টা জবাবে ইসরাইলের অভ্যন্তরে এ পর্যন্ত দুই হাজার রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে হামাস। এসব হামলায় ইসরাইলের এক সামরিক কমকর্তাসহ ৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট। ইসরায়েলের এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে শুধু মুসলিম দেশগুলোই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে মিছিল সমাবেশ। তারপরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভ ও বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার আহ্বানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরাইল ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে; বরং আগের তুলনায় এই হামলা আরো জোরদার করেছে। তাদের এই হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলি হামলার শুরুর পর রোববারের হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। গাজায় চালানো ওই বিমান হামলায় হামাসের গাজা উপত্যকা প্রধান ইয়েহইয়া আল সিনওয়ারকে টার্গেট করা হয়েছিলে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। এর আগে গত শনিবার গাজায় অবস্থিত আল জাজিরা ও এপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১২ তলাবিশিষ্ট ভবনটি গুড়িয়ে দেয় বর্বর ইসরাইল। জালা টাওয়ারটিতে হামলার এক ঘণ্টা আগে ইসরাইলি বাহিনী টেলিফোনে আল জাজিরা ও এপির কর্মকর্তাদের হামলার কথা জানিয়ে ভবন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া, তাদের বর্বরতার হাত থেকে রেহাই মিলছে না হাসপাতাল, স্কুল এবং জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরও। ইসরাইলের এমন বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে লন্ডন, স্পেন, কেপটাউন, এথেন্স, সারাজেভো ও আজারবাইজানসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। পোড়ানো হয় ইসরাইলি পতাকা। ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি জানিয়ে ১৫ মে শনিবার লন্ডনের হাইড পার্কে হাজার হাজার লন্ডনবাসী মিছিল করেছেন। বিক্ষোভকারীরা নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে স্লোগান দেয় এবং ফিলিস্তিনি শিশু-হত্যার বিচার দাবি করে। তবে যখন ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন দেশটির পক্ষে আবারো নিজেদের অবস্থানের কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও জেন সাকি ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন রয়েছে। সাকি দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা টিম মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা হ্রাস ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। মার্কিন মুখপাত্র এমন সময় এ দাবি করলেন যখন ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের পাশবিক হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আমেরিকার বিরোধিতার কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এমনকি ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের একপেশে সমর্থনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন খোদ মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা। প্রতিনিধি পরিষদে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্য আয়ান্না প্রেসলি সংসদ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার ৩৮০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্যের ঘোর বিরোধিতা করেন। এদিকে, ইসরাইলি হামলার পাল্টা জবাবে ইসরাইলের একটি বিমান ঘাঁটি, দুটি আয়রন ড্রোম স্টেশন এবং একটি রাসায়নিক কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস। ইসরাইল বাহিনী বিমান ঘাঁটিটি গাজা উপত্যকার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করে আসছিল। হামলা সম্পর্কে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা ইসরাইলের হাতজেরিম বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছি। এই বিমান ঘাঁটি থেকে ইহুদিবাদীদের জঙ্গিবিমান উড়ে গিয়ে গাজার জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছিল।’ হামাস আরো বলেছে, তারা নেজেভ মরুভূমির নাহাল ওজ কিবুৎজ রাসায়নিক কারখানায় আত্মঘাতী শিহাব ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। হামাসের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘আয়াশ’ ইসরাইলের কয়েকটি বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছে। তাদের এই প্রতিরোধে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি হতবাক হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অন্যতম মুখপাত্র ফাউজি বারহুম বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের মুখে তার সংগঠন তেল আবিবের ওপর রক্তক্ষয়ী পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিশোধের নিয়ম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলের যে কোনো হামলার উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত। হামাস চলমান সংঘাতে গোলার জবাবে গোলা, শহরের বদলে শহর এবং ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে সমীকরণ বদলে দিতে পেরেছে। ইরানের তাসনিম নিউজকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন হামাসের এই মুখপাত্র। ফাউজি বারহুম বলেন, হামাস যোদ্ধারা তেল আবিব লক্ষ্য করে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে ১৫০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, এটি ছিল ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য নজিরবিহীন ঘটনা। অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা ইজাদ্দিন আল কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, ‘আল্লাহর সাহায্যে আমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৬ মাস যুদ্ধের চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রেখেছি।’
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১