বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৯ মে ২০২১

শুভ জন্মদিন হুমায়ুন ফরীদি


বিনোদন প্রতিবেদক হ

হুমায়ুন ফরীদি সম্পর্কে তার অগ্রজ শিল্পী আল মনসুর বলেছিলেন, ‘এ মাটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চির উজ্জ্বল অভিনেতা হলেন হুমায়ুন ফরীদি।’ তিনি যে বাংলাদেশের অভিনয়জগতের এক উজ্জ্বল তারা-এ বিষয়ে কারো দ্বিমত পোষণ করার কথা নয়। আজ প্রয়াত এই গুণী শিল্পী ও শক্তিমান অভিনেতার জন্মদিন।

১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে হুমায়ুন ফরীদি জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত এই অভিনেতা সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমায় এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ফরীদি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের হূদয়ে আসন গেড়ে নেন। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জের মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ প্রথম অভিনয়ে করেন হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৭৬ সালে নাট্যজন সেলিম আল-দীনের উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব। ফরীদি ছিলেন এর অন্যতম প্রধান সংগঠক। এই উৎসবে ফরীদি নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরণ্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

হুমায়ুন ফরীদি ঢাকা থিয়েটারে শকুন্তলা, ফণীমনসা, কীর্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, মুনতাসীর ফ্যান্টাসি, ভূতের মতো তুমুল জনপ্রিয় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ফরীদি হয়ে ওঠেন ঢাকা থিয়েটারের প্রাণভোমরা। বনে যান সে সময়ের মঞ্চ নাটকের অদ্বিতীয় ব্যক্তি। নাট্যপাড়ায় হুমায়ুন তখন শক্তিমানদের একজন।

আতিকুল ইসলাম চৌধুরীর ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এর মধ্য দিয়ে টিভি পর্দায় আগমন। তবে ১৯৮৩ সালে সেলিম আল-দীনের রচনা এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় সেই সময়কার জনপ্রিয় নাটক ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’তে টুপি দাড়িওয়ালা গ্রামের মিচকা শয়তান সেরাজ তালুকদারের যে চারিত্রিক রূপ তিনি দিয়েছিলেন, আর সেই নাটকে তার সেই সংলাপ ‘আরে আমি তো পানি কিনি; পানি দুধ দিয়া খাইবা না খালি খাইবা বাজান’ বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এরপর একে একে করেছেন হঠাৎ একদিন, দুরবিন দিয়ে দেখুন, কোথাও কেউ নেই, বকুলপুর কত দূর, ভবের হাট-এ রকম আরো অসংখ্য তুমুল দর্শকপ্রিয় টিভি নাটক।

বাঙালির মধ্যবিত্ত সামাজিক জীবনধারাকে তিনি আনন্দিত করে তুলেছিলেন। ফরীদির নাটক মানেই বিটিভির সাদা-কালো পর্দায় পুরো বাঙালির চোখ আটকে যাওয়া। হতাশ করতেন না তিনি। এত প্রাণবন্ত, এত জীবন্ত, যেন আমাদের চারপাশের মানুষগুলোই জীবন্ত হয়ে যেত ফরীদির অভিনয়ে।

আর ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রের অভিনয় যারা দেখেছেন তারা ফরীদিকে স্থান দিয়েছেন হূদয়ের একেবারে মাঝখানে।

নব্বই দশকে এসে নাম লিখিয়েছিলেন ‘বাণিজ্যিক ধারার বাংলা ছবিতে। ‘হুলিয়াদ’ দিয়ে প্রথম সিনেমাতে অভিনয়। ফরীদি অভিনয়ে এতটাই অনবদ্য ছিলেন যে একসময় নায়কের চেয়ে বাংলা সিনেমাপ্রেমী জাতির কাছে ভিলেন হুমায়ুন ফরীদি বেশি প্রিয় হয়ে ওঠেন।

একটু একটু করে বাংলা সিনেমায় ভিলেনের সংজ্ঞাটাও যেন পরিবর্তন হতে থাকে। দহন, আনন্দ অশ্রু, বিচার হবে, মায়ের অধিকার, একাত্তরের যীশু, ভণ্ড, পালাবি কোথায়, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া, হিংসা, বিশ্ব প্রেমিক, অপহরণের মতো জনপ্রিয় এবং একই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে সফল ২৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।

হুমায়ুন ফরীদির রক্তে মিশে ছিল অভিনয়। নাট্যজগতের সবাই বুঝে ফেলেছিল ধূমকেতুর জন্ম হয়েছে, একদিন শাসন করবে এই যুবক। সেদিনের হিসাব এক চিলতেও ভুল হয়নি, এরপর টানা তিন দশক তার ক্যারিশম্যাটিক, তার ম্যাজিকাল অভিনয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন পুরো বাঙালি জাতিকে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১