বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে মৌলবাদী-ফ্যাসিস্টরা এক হয়েছে’


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. এস এ মালেক বলেছেন, শুধু অসাম্প্রদায়িক চেতনাই নয়, স্বাধীনতাকেও আজ বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে শেখ হাসিনা ১২ বছর ধরে সুন্দরভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এতে অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, ফ্যাসিস্ট এবং রেপিস্ট সকলে এক হয়েছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য। শুধুমাত্র একটা লোককে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য। এটা কি একটা দেশের রাজনীতি হতে পারে?

গতকাল শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি সময় রাত সাড়ে ৮টা ও বাংলাদেশে সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় ‘বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রয়ায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে আজকের বাস্তবতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

সভাটির আয়োজন করে মাসিক মুক্তমঞ্চ। সঞ্চালনা করেন মাসিক মুত্তমঞ্চের প্রধান সম্পাদক নোমান শামীম।

ডা. এস এ মালেক বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ইলেকশনে গেছে বিএনপি ততবার স্টে আউট হয়েছে। ইলেকশন না হওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটা স্তম্ভ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িকতা না থাকলে দেশে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ কোনোটাই তো নিরাপদ থাকে না। একবার চিন্তা করেন ৭৫ সাল থেকে ৯৬ সাল এই ২১ বছরে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে তারা কী বলেছিলো, ওরা ছিল পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা এসেছিলো পাকিস্তানকে পরাজিত করতে পেরেছিলাম বলে।  পাকিস্তানের রাজনীতি তো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ছিলো, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি ছিলো।

তিনি বলেন, এই দেশে বাঙালি হিন্দু রাজারা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করেনি? বাঙালি মুসলমান রাজারা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেনি?   এমনকি সিরাজ উদ দৌলার সময়েও সাম্প্রদায়িকতা ছিলো। একমাত্র শেখ মুজিব, তিনি অনুধাবন করলেন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, এবং খ্রিষ্টান, এই চারটি সম্প্রদায়কে যদি এক জাতীয়তাবাদের মধ্যে আনতে হয়, তাহলে আইডিয়াল প্রিন্সিপ্যাল হচ্ছে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’। এই অসাম্প্রদায়িকতা বিপর্যস্ত হল তখন, যখন ইংরেজরা সু-কৌশলে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান দুটি সম্প্রদায়কে ভাগ করে দিলো। এতে লাখো পাকিস্তানি থেকে গেলো ভারতে, আর লাখো ভারতীয় থেকে গেলো পাকিস্তানে।

এস এ মালেক আরো বলেন, সাম্প্রদায়িকতার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল কারণ সম্পত্তি। আর বঙ্গবন্ধু চাইলেন টু শ্যাটার ইট ডাউন। এবং চাইলেন একটা আইডিয়াল স্টেট করার জন্য,  এই সাব কন্টিনেন্টে যেটা নাই, এই বিশ্বের কোথাও নাই।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িকতা বলতে কী বুঝতেন আমরা অনেকেই তা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকবে, আর রাজনীতিতে প্রত্যেকটা জিনিস যার যার জায়গায় থাকবে। আমরা এটাকে মিশিয়ে ফেলি। অনেক সময় নিজের স্বার্থ আদায়ের জন্য মিশিয়ে ফেলি, অনেক সময় না বুঝে মিশিয়ে ফেলি।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য দুই বছরের মতো সময় আছে। তবে সেই নির্বাচন এবার শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতি নিয়েই হবে না। এই নির্বাচনে আমাদের অন্যতম স্লোগান হবে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ যাতে টিকে থাকে। দেশের লোক যেভাবেই হোক না কেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চায়। তবে মানুষ আওয়ামী লীগের গুণে আওয়ামী লীগতে ক্ষমতায় চায় এটা আমি বিশ্বাস করি না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চায় নেত্রী শেখ হাসিনার গুণে। তাই যতটা সময় নেত্রী সুস্থ আছেন ততটা সময় আওয়ামী লীগের ভয় নাই।

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি পাকিস্তানের এসেম্বেলিতে দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রেখেছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা যাবে না। ১৯৭০ সালে ২৮ অক্টোবর নির্বাচনের আগে রেডিও ও টেলিভিশনে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেও তিনি স্পষ্ট ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেছিলেন, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছিলেন।  এছাড়াও  তিনি যতবার বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার বক্তব্যে একটি জিনিস কমন ছিলো, সেটা হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা।  রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা আনা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ছাত্ররাজনীতি করেছেন, কলকাতায় রাজনীতি করেছেন, পাকিস্তানে রাজনীতি করেছেন তখন এই সাম্প্রদায়িকতা ছিলো রাজনীতিতে একটা বড় সমস্যা। এ নিয়ে ভারত পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগেই থাকতো। তাই এই দাঙ্গা থেকে, সাম্প্রদায়িকতা থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র দর্শন ছিলো অসাম্প্রদায়িকতা। এবং স্বাধীন বাংলাদেশে যে সংবিধান বঙ্গবন্ধু প্রণয়ন করেছিলেন, সেখানে চারটি মূলনীতির একটি ছিল  ধর্ম নিরপেক্ষতা।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ, অস্ট্রেলিয়ার সহ-সভাপতি ডা. লাভলী রহমান বলেন,  বঙ্গবন্ধু একজন খাঁটি মুসলিম এবং একজন সেকুলার পলিটিশিয়ান। একটি মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছেন এবং তিনি ছিলেন মডার্ন। পাকিস্তানের ধর্মের নামে যেভাবে খুন, শোষণ করা হয়েছিল তার থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে উনি  যে রূপ দিয়েছিলেন তার চারটির মধ্যে প্রথম ছিল সেকুলারিজম। তিনি চেয়েছিলেন শান্তিপূর্ণ মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে। তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে এক করেছিলেন। ১৯৭২-৭৫ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা স্বপ্ন ছিল দারিদ্রমুক্ত, অপরাধ মুক্ত, নিরক্ষরতা মুক্ত।

এ ছাড়া আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট অজয় দাস গুপ্ত। তিনি বলেন, ১৯৬৯ - ১৯৭১ সালে যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছিল সে সময় কী আমরা জানতে চেয়েছিলাম কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ,  কে মুসলমান? তখন একটাই শপথ ছিলো,সেটা হলো  আমরা বাঙালি।  সেই বাঙালিয়ানা থেকে সরে আসায় আজকের দিনের সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। তারপরও আমাদের আস্থার জায়গাটি হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১