আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অঙ্গ সংস্থা- শুল্ক মূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এনবিআরে। প্রতিবেদনে গত আড়াই দশক ধরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি খাতে পাওয়া নগদ প্রণোদনা সুবিধাকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়ে বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ড লাইসেন্সবিহীন রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসি বাতিলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেয় এনবিআর। তাদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকরা। তাদের মতে, রপ্তানিকারকদের প্রণোদনার যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার নেই এনবিআরের। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে শিগগির বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এনবিআর প্রণোদনার কোনো পার্ট না। এনবিআর তো আর ইন্ডাস্ট্রি চালায় না। এমন নয় যে, এনবিআরে যারা বসেন তারা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। ব্যবসায়ীদের অবস্থাটা সরকার বুঝবে। আমাদের যদি সক্ষমতা এতো ভালো থাকতো তাহলে তো আমরা পিছিয়ে পড়তাম না। এখন আবার আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। প্রণোদনা দেওয়ার কারণেই আমরা সেটা পারছি।’ এনবিআরের উদ্যোগের বিষয়ে কিছু বলবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে (এনবিআর) দ্বিমত বা একমত কোনোটাই পোষণ করি না। ওনাদের আমি চ্যালেঞ্জও করছি না। ওনারা হয়তো ওনাদের বুঝটা বুঝেছেন, কিন্তু আমাদেরটা আমাদের বুঝতে হবে। সারা পৃথিবীতে প্রণোদনা দেওয়া হয়, সেখানে আমাদের যদি বন্ধ করা হয় সেটি নেতিবাচকই হবে।’ এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস : এক্সপোর্ট, বন্ড অ্যান্ড আইটি) খন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা জানিয়ে কথা বলতে অপারগতার কথা জানান। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদেরকে আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে। জিঞ্জিরা কিংবা দুর্গাপুরের মার্কেটের সাথে প্রতিযোগিতা নয়, বিশ্বের চীন, ভারত, মিশর, ইন্দোনেশিয়ার মতো বড় বড় রপ্তানিকারকদের সাথে প্রতিযোগিতা করেই তারা টিকে আছেন। এসব দেশে শত বছরের পুরোনো ব্যবসার ভিত আছে। অথচ বাংলাদেশ সে হিসেবে একেবারে নবীন। আন্তর্জাতিক বাজারে কেবল প্রবেশ করেছে। তাই রপ্তানিকারকদের সুযোগ দিতে হবে। এনবিআরের ভূমিকাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে এটিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের অপব্যাখ্যা উল্লেখ দাবি করেন রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সরকার রপ্তানিকারকদের জন্য স্থানীয় কাঁচামাল ক্রয়ের ওপর নগদ সহায়তা দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারও রয়েছে। ওই নিয়ম মেনে স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল ক্রয়ের উপর রপ্তানিকারকরা নগদ সহায়তা গ্রহণ করছেন। এনবিআরের সংস্থা এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবে এনবিআরের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। তার মতে, বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কথা বলে অনেক সুযোগ-সুবিধা যাচ্ছে। বিপরীতে রাষ্ট্র কিছু পাচ্ছে না। বাজার প্রতিযোগিতামূলক থাকবেই।’ তিনি বলেন, প্রণোদনা সুবিধার সুযোগ নিয়ে অনেক ব্যবসায়ী সে অনুযায়ী কাজ করে না। তারা প্রণোদনা সুবিধা নেওয়ার জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল এনে স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি করে।’ তাঁর মতে, প্রণোদনা সুবিধা তাদেরকেই দেওয়া উচিত যারা বিপরীতে রিটার্ন দিতে পারবে। আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা নিয়ে কেবল তার ব্যবসার উন্নতি করলো কিন্তু সে বাজার দখল করতে পারলো কিনা সেটি সরকারকে দেখতে হবে। কর, শুল্ক এগুলো সব দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, এগুলো এনবিআর কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বার্থে নয়। কিন্তু অর্থনীতির স্বার্থ উপেক্ষিত হলে সেটির যৌক্তিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।’ তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রকৃত রপ্তানিকারকরা যাতে এই সুবিধা পায় সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১