বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

দিনের পথে অবিচল থাকুন


আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী

আমরা মুসলমান। দীন আমাদের মৌলিক ভিত্তি। দিনের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ঈমান ও আমলের সুউচ্চ সৌধ। আল্লাহ আমাদের রব। ইসলাম আমাদের ধর্ম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের রাসুল এবং আদর্শ। আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে, ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল ও আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। মানসিকভাবে প্রশান্ত। আলহামদুলিল্লাহ।

ইসলামে দুদোল্যমানতার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনা অকাট্য। মজবুত পাহাড়ের চেয়েও সুদৃঢ়। আমৃত্যু দিনের ওপর সুদৃঢ় অটল অবিচল থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কখনো ডানে, কখনো বামে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোরআন মাজিদে বিভিন্ন আয়াতে দিনের ওপর অটল অবিচল থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে। পুরোপুরি ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে দিনের সুনির্মল পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া  কোরআনের মৌলিক নির্দেশনাগুলোর অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ!  ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিত জেন, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২০৮)

হাফেজ আবুল ফিদা ইমাদুদ্দীন ইসমাঈল ইবনে উমর ইবনে কাসির (রহ.) (জন্ম- ৭০০ হিজরি মৃত্যু-৭৭৪ হিজরি)  তার তাফসিরগ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইহুদিদের মধ্য থেকে মুসলমান হওয়া কয়েকজন রাতের বেলায় তাওরাত পড়া এবং ‘শনিবার’ বিষয়ক (ইহুদিদের একটি বিশেষ ধর্মীয় নিদর্শন) রীতিনীতির ওপর বহাল থাকার বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন। তখন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে শুধুমাত্র ইসলামী নিদর্শনকে আঁকড়ে ধরে অন্য সব রীতিনীতি উপেক্ষা করে দিনের ওপর সুদৃঢ় অটল অবিচল থাকার নির্দেশনা দিয়ে উপরিউক্ত আয়াতটি নাজিল করেন। (তাফসিরুল কোরআনিল আজীম ১/৩০৯ দারুল হাদিস কায়রো মিসরের সংস্করণ)

দীনের ওপর সুদৃঢ় অবিচল থাকতে হবে ঠিক সেভাবে; যেভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে। নিজের পক্ষ থেকে সামান্য পরিবর্তন পরিবর্ধন করারও কোনো সুযোগ নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী!  তোমাকে যেভাবে হুকুম করা হয়েছে, সে অনুযায়ী তুমি নিজেও সরল পথে অবিচল থাক এবং যারা তাওবা করে তোমার সঙ্গে আছে তারাও। আর সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছুই কর, তিনি তা ভালোভাবে দেখেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত-১১২) আবু আমর সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে গিয়ে আবেদন করে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল!  আপনি আমাকে ইসলাম বিষয়ক এমন একটি কথা (পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা) বলুন, আপনার অবর্তমানে যে বিষয়ে আমার আর কারো দ্বারস্থ হওয়া লাগবে না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুফিয়ান (রা.)কে লক্ষ করে বলেন, ‘তুমি বল যে, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর (মৃত্যু পর্যন্ত) তুমি এর ওপর অটল অবিচল থাক।’ অর্থাৎ আমৃত্যু দীনে ইসলামের ওপর সুদৃঢ় অটল অবিচল থাক। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৫, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং-৪১৩)

ইসতিকামাহ আলাদ-দীন তথা দীনের ওপর অটল অবিচল থাকার কী অর্থ? ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে শরফ নববী (রহ.) (জন্ম-৬৩১ হিজরি মৃত্যু-৬৭৬ হিজরি)  রিয়াযুস-সালিহীন কিতাবে (পৃষ্ঠা ৪৬, দারুল হাদিস কায়রো মিসরের সংস্করণ)  উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম বলেন, ইসতিকামাহ আলাদ-দীনের অর্থ হচ্ছে : ‘সব সময় সুদৃঢ়ভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে যাওয়া’। হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) ইসতিকামাহ-এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘ইসতিকামাহ হচ্ছে সব কাজ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই সম্পাদন করা।’ (তাফসিরুল  কোরআনিল আজিম ৪/১১৬)

দীনের ওপর অটল অবিচল থাকা একজন মুমিনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। শত ঝড় ঝাপটা আর প্রতিকূলতার মাঝেও একজন মুমিন দীনের পথে অটল অবিচল থাকে সুদৃঢ় পাহাড়ের মতো। দীনহীন অনৈসলামিক পরিবেশে মুমিনব্যক্তি গা না ভাসিয়ে ঈমানের পথে দাঁড়িয়ে থাকে সটান মিনারের মতো। এভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন মুমিন যখন দীনের পথে অবিচল থেকে আখেরাতের পথে রওয়ানা হয় আসমানের ফেরেশতারা তখন দলবেঁধে ওই ব্যক্তিকে কোরাস গেয়ে জান্নাতের  সুসংবাদ শুনায়। পবিত্র  কোরআন মাজিদে বড় চমৎকার করে সে নয়নাভিরাম হূদয়প্রশান্তিকর চিত্রটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ!  তারপর তারা তাতে অটল অবিচল থাকে, নিশ্চয়ই তাদের কাছে (মৃত্যুর সময়) ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে (এবং বলবে)  যে, তোমরা কোনো ভয় করো না এবং কোনো কিছুর জন্য চিন্তিত হয়ো না আর আনন্দিত হয়ে যাও সেই জান্নাতের জন্য, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেওয়া হতো। আমরা পার্থিব জীবনেও তোমাদের সাথী ছিলাম এবং আখেরাতেও থাকব। জান্নাতে তোমাদের জন্য আছে এমন সব কিছুই, যা তোমাদের অন্তর চাবে  এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে এমন সব কিছুই যার ফরমায়েশ তোমরা করবে। এসব সেই সত্তার পক্ষ থেকে প্রাথমিক আতিথেয়তা, যিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত : ৩০-৩২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, তারপর এতে অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয় দেখা দেবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা হবে জান্নাতবাসী। সেখানে তারা থাকবে সর্বদা। এটা তারা যে আমল করত তার প্রতিদান।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত -১৩, ১৪)

চারদিকে ভয়াল বিপর্যয়। দীনহীনতার তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দীনের বিমল পথে অটল অবিচল থাকা আজ ভীষণ কষ্টসাধ্য। তাই তীব্র প্রতিজ্ঞায় মুষ্টিবদ্ধ হাতে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে দৃপ্তপদে। সুদৃঢ় পাহাড়ের মতো অটল অবিচল থাকতে হবে দীনের পথে। এতে করে সফলতার ফল্গুধারা বয়ে যাবে আমাদের জীবনজুড়ে। পরকালেও চিরকালীন প্রশান্ত সুখময় সুরভিত জীবন নসিব হবে। এরচেয়ে বড় সফলতা আর কী হতে পারে।

লেখক : খতীব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১