বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২১

আল্লাহর অস্তিত্ব : বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ (১)


আবদুল্লাহ শাকের

 

সাধারণ মানুষ হিসেবে এবং বিজ্ঞানের অধ্যয়ন ও গবেষণায় জীবন উৎসর্গকারী এমন কারো মনে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে আদৌ সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকতে পারে না। নিশ্চয় আল্লাহ আছেন। তবে তার অস্তিত্ব দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে প্রমাণ করা যায় না। গবেষণাগারের নিয়মমাফিক পারা যায় না তাকে কোনো প্রকার বিশ্লেষণ বা পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করে দেখা। তিনি হচ্ছেন প্রাকৃতিক বিচারের ওপরে। তিনি দেহাতীত, প্রজ্ঞাবান, সৃজনশীল এবং  সর্বশক্তির আঁধার। তার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্যে যদিও আমরা সাধারণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি না। তবুও আমরা মানুষ ও প্রকৃতিতে তার অস্তিত্বের যে অগণিত প্রমাণ ছড়িয়ে আছে; তা নিয়ে গবেষণা করতে পারি। এসব প্রমাণ যেমন সুস্পষ্ট; তেমনি বিশ্বাসজনক। আমরা এখানে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ উল্লেখ করব। যারা অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞান যে আল্লাহর অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে-সেটাও তারা অকপটে বলেছেন।

 

এক. উদাহরণস্বরূপ পানির কথা ধরা যাক। এর সূত্রগত ওজন ১৮ সে.। এই থেকে কেউ এই ভবিষ্যদ্বাণী করবে যে, সামান্য তাপ ও চাপে পানি গ্যাসে পরিণত হবে। অ্যামানিয়ার সূত্রগত ওজন ১৭ সে. সত্ত্বেও বায়ুমণ্ডলের চাপে ৩৩ সে. তাপমাত্রায় গ্যাসে পরিণত হয়। পর্যাবৃত্ত পথে অবস্থানের দিক থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং এর সূত্রগত ওজন হচ্ছে ৩৪ সে.। আর ৫৯ সে. তাপমাত্রায় পৌঁছে এটা গ্যাসে পরিণত হয়ে থাকে। সাধারণ তাপমাত্রায় এই যে পানি তরল অবস্থাতেই বিদ্যমান থাকে, তা এমনই একটি ব্যাপার; যা মানুষকে একদণ্ড থমকে দিয়ে ভাবিত করে তালে।

 

তবে পানির আরো অনেক কয়টি বিশেষ ধর্ম রয়েছে; যা খুবই চিত্তাকর্ষক এবং এই সকল ধর্ম একত্রিত করলে তা আমার কাছে পরিকল্পনার শক্তিশালী প্রমাণ বলে প্রতীয়মান হবে। সাধারণভাবে বলা চলে, আমাদের পৃথিবীর প্রায় তিন চতুর্থাংশ পর্যন্ত পানি বিস্তৃত। তাই এই পানি তাপমাত্রা ও আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক রকম প্রভাব সৃষ্টি করে। পানির সবগুলো ধর্মের মধ্যে যদি একটি অনুপম সমন্বয় না থাকত, তাহলে তাপমাত্রায় যে কী ভয়াবহ পরিবর্তন দেখা দিত তা সহজেই কল্পনা করা যেতে পারে। পানি গলার জন্যে অত্যন্ত বেশি তাপের প্রয়োজেন হয়। গলার পরে তরল অবস্থায়ও দীর্ঘ সময় থাকে এবং বাষ্পীভূতের জন্যে অত্যধিক তাপমাত্রার প্রয়োজেন হয়। এই কারণে তাপমাত্রার পরিবর্তনের ব্যাপারে পানি আশ্চর্য রকমের অভিঘাত (শক) শাষেক। অন্যথায় তাপমাত্রার জন্যে পানি যে সৃষ্টি প্রতিবন্ধ রয়েছে, যদি উক্ত প্রতিবন্ধ না থাকতো তাহলে এই পৃথিবী জীবনধারণের জন্যে অনেক কম উপযাগীে এবং মানুষের কর্মতৎপতার জন্যেও অত্যন্ত কম আনন্দদায়ক হতো। পানির আরো অনেক অনুপম বিশেষ ধর্ম রয়েছে; যা প্রত্যক্ষ করলেই আমার মন এই ধারণায় সংবেদনশীল হয়ে উঠে যে-নিজ সৃষ্টির প্রতি যথেষ্ট সচেতন; সৃষ্টিকর্তার পক্ষেই একমাত্র এইসব বিশেষ ধর্মের ব্যবস্থা আগে থেকে করা সম্ভব। (থমাস ডেবিট পার্কস; রিসার্চ কেমিস্ট)

 

দুই. তাপ গতিবিদ্যা (heat)-এর দ্বিতীয় আইন বা Law of entropy নামে অভিহিত আইন অধিকাংশ সময় প্রমাণ করে যে, শেষ  গোষ্ঠী ভুল করেছেন। বিজ্ঞান সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এই মহাবিশ্ব অনাদিকাল থেকে কখনই বিরাজমান হতে পারে না| Law of entropy বলে যে , উত্তপ্ত বস্তু থেকে ততোধিক শীতল বস্তুতে সব সময় তাপ প্রবাহিত হচ্ছে এবং তাপ প্রবাহের এই নিয়মকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপরীতগামী করার জন্য কখনো পাল্টানো যায় না। মাপা শক্তির তুলনায় অমাপ্য শক্তির অনুপাত হচ্ছে  entropy ; যাতে করে বলা যায় যে, মহাবিশ্বের entropy সব সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব মহাবিশ্ব এমন এক সময়ের দিকে যাচ্ছে যখন সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা সমান হবে এবং তখন প্রয়াজেনীয় আর কোনো শক্তিই থাকবে না। পরিণামে আর কোনো রাসায়নিক ও ভৌত প্রক্রিয়া থাকবে না এবং সকল প্রাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু যেহেতু এখনও পৃথিবীতে প্রাণী বিরাজমান এবং রাসায়নিক ও ভৌত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে; কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব অনাদিকাল থেকে অবস্থান করছে না। অন্যথায় এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কাজে লাগানারে উপযোগী শক্তি বহুদিন আগেই শেষ হয়ে যেতো। আর সেই সঙ্গে প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্তব্ধ ও থমকে যেতো। কাজেই সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিজ্ঞান এই কথাই প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই আমাদের এই মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল। আর এই কথা প্রমাণ করতে গিয়ে বিজ্ঞান সেই সঙ্গে আল্লাহর সত্ত্বাকে প্রমাণ করে। যারই সূচনা রয়েছে সেই আপনা থেকে আরম্ভ হয়নি। অধিকন্তু এর জন্য এক পরম ও চরম প্রস্তাবক একজন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রয়েছেন। (এডওয়ার্ড লুথার কেসেল; প্রাণিতত্ত্ববিদ ও কীটতত্ত্ববিদ)

তিন. ‘কেন আমি খোদাকে বিশ্বাস করি?’ এ প্রশ্নের খাটি জবাব হবে, কারণ আমার আব্বা-আম্মা আমাকে তাই বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন। তারা সে সঙ্গে আমাকে ‘স্যান্টা ক্লজ অর ইষ্টার বানিজ’ এটাও বিশ্বাস স্থাপন করতে শিখিয়েছেন। যতই দিন যেতে লাগলো, যদিও আমি ছেলেবেলাকার এসব চিত্তাকর্ষক রূপকথার কাহিনীর মধ্যদিয়ে দেখছিলাম, তথাপি আল্লাহর সৃজনীজ্ঞান আর ক্ষমতায় আমি অধিকতর বিমুগ্ধ হই। ফলের বাগানকারীর ছেলে হিসেবে বিভিন্ন ধরনের আপেল, পীচ ও নাশপাতির ব্যবহার এবং কেন্নে উইকের পূর্বে ওয়াশিংটন অঞ্চলের শূন্য ডিগ্রির নিচে আরো ২০৭ তাপমাত্রায় আংশিকভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার উল্লেখযাগ্যে ব্যাপারটি আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিতো। সারা শীতকালে মনে হতো যেন এসব গাছ একেবারে মরে গেছে। তারপর প্রতিটি বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তারা থাকো থাকো অদ্ভুত রকমের সুন্দর সুন্দর ফুলে যখন সাজতো তখন সেই মনোরম দৃশ্য আমাকে করে তুলত রোমাঞ্চিত, বিমোহিত। কিন্তু যেহেতু এসব ফলের গাছ আমাদের জলবায়ুতে সম্পূর্ণ সহনশীল নয় তাই বিলম্বিত তুষার অনেক সময় এ ফুলকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতো এবং তখন বাগানে আর ফল ধরত না। পরিণামে আমাদেও ছোট্ট উপত্যকাটির মানুষকে তখন বড় কষ্টে দিনাতিপাত করতে হতো। এসব দেখে হরহামেশা গোড়া থেকেই আমার মনে একটি চিন্তা দোলা দিতো- আচ্ছা আল্লাহ যদি ভালোই হবেন তাহলে তিনি কেন বার বার এভাবে ফসলের ক্ষতি হতে অনুমতি দেন? শিগগিরই এ প্রশ্নের জবাব মিলল। এতে আল্লাহর দোষ নেই; দোষ মানুষের। আমাদের কেন্নে উইকের জলবায়ু যেসব ফলের ভালো উৎপাদন হয় না, সেগুলিকে আমরা জন্মাতে চেষ্টা করছি। যেসব স্থানে মূলত এ ফল জন্মে সেখানে রোপণ করছি না। অতএব দেখা যাচ্ছে যদিও সব ফলই নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে জন্মায়, তবুও প্রতিটি ফলে এ জলবায়ুর সহনশীলতা অত্যন্তই সীমাবদ্ধ। আর একমাত্র এ কারণেই কেবল সতর্কতার সঙ্গে বৃক্ষ জন্মানো ও তাদের নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তিত তারা সহনশীল হয়ে উঠতে পারে। তাহলে নিশ্চয় করে বলা চলে যে, সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী কেবলমাত্র তাদের পরিবেশের জন্যই সৃষ্টি হয়নি। অধিকন্তু জন্ম বা উৎপত্তিবিষয়ক স্থীতি পরিবর্তন- ক্ষমতার অসম পরিমাণসহ সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রয়াজেন দেখা দিলে, যাতে উদ্ভিদ ও প্রাণী অন্য কোনো পরিবর্তিত জলবায়ুতে নিজেদের সহনশীল করে নিতে পারে, তারই জন্য এ ব্যবস্থা বিদ্যমান। উদ্ভিদ ও প্রাণীরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে ক্ষমতাকে পর্যবেক্ষণ করাকেই জাতি বিশেষের জন্ম ও বংশ সম্বনীয় বিদ্যা বা অভিহিত করা হয়। তারপর পীচের বীচির চারার জাতি প্রকারান্তর জন্মাতে গিয়ে ছেলেবেলায় যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এবং গবেষণা করেছি, তাই আল্লাহ সম্পর্কে যত বেশি পারি জানার জন্য আগ্রহী করে  তোলে আমাকে। (ওয়াল্টার এডওয়ার্ড ল্যামার্ট; সুপ্রজননবিদ্যাবিদ)

[চলবে...আগামীকাল পড়ুন, দ্বিতীয় পর্ব]

 

লেখক: শিক্ষার্থী, দাওয়াহ ও উচ্চতর গবেষণা সেন্টার, মাহাদুল ফিকরি ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া, ঢাকা।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১