বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২১

‘পূজা’য় মুসলিমদের অংশগ্রহণ ইসলাম কী বলে


প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা কৃষ্টি-কালচার রয়েছে। প্রত্যেকের স্বতন্ত্রতা ধরে রেখেই বসবাস করতে হয় সমাজে। একমাত্র ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে’ ভোগা ব্যক্তি ছাড়া কেউ অন্যের কৃষ্টি, কালচার বা সংস্কৃতি গ্রহণ করে না। মুসলিমদের রয়েছে সমুজ্জ্বল, স্বতন্ত্র কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য। তাহলে একজন মুসলিম কী করে তার কৃষ্টি, কালচার হিসেবে অন্যের সংস্কৃতি ধার করতে পারে? সামনে আসছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা। অনেক মুসলিম ভাই-বোনদের দেখা যায় হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা এবং অনুষ্ঠানে গিয়ে অংশগ্রহণ করতে! কিন্তু এটা কি মুসলিমদের জন্য বৈধ? অনেকেই বলে, আমরা তো সেখানে পূজা করতে যাচ্ছি না, শুধু দেখতে যাচ্ছি।’ আচ্ছা, কোনো হিন্দু কি আপনার সাথে মসজিদে যায় আপনার নামায দেখতে? আপনার কোরবানিতে সে সম্মতি প্রকাশ করে?

পূজা-অর্চনা স্রেফ ধর্মীয় ব্যাপার। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু সমস্যাটা হলো যখন এক ধর্মের ইবাদাত-আরাধনা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। হিন্দুদের ওপর যেমন মুসলমানদের নামাজ চাপিয়ে দেয়া অন্যায়, তেমনি হিন্দুদের দুর্গাপূজাও মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়। যখন মক্কার মুশরিকরা নবিজির কাছে প্রস্তাবনা পেশ করল যে, ‘এসো আমরা একবছর আমাদের মূর্তিগুলোর পূজা করি, আর পরের বছর আল্লাহর ইবাদত করি।’ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা সুরা কাফিরুন নাযিল করেন : ‘বলুন, হে কাফিররা! আমি ইবাদত করি না, তোমরা যার ইবাদত কর। তোমরাও তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। আমি ইবাদতকারী নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা তার ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের দীন তোমাদের জন্যে, আমার দীন আমার জন্যে।’ [সুরা কাফিরুন]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে যে জাতির সাদৃশ্য বা সাযুজ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ [আবু দাউদ, আসসুনান : ৪০৩১] উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেছেন, ‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে।’ [আবদুর রাযযাক, আলমুসান্নাফ : ১৬০৯]

দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার ১৫৫২৬৪ নং ফতোয়ায় বলা হয়, পূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাদের প্রোগ্রামে চাঁদা দেয়া কুফর, শিরক এবং নাজায়েয কাজে সাহায্য করার নামান্তর। এটা কোরআনের আলোকে সম্পূর্ণ নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করো না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ২] এছাড়াও ৬২৪৬৪ ও ৬৩৯৫০ নং ফতোয়ায় বলা হয়, “হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হারাম। পরস্পর সম্পর্কের ভিত্তিতে হোক অথবা চাপে পড়ে; কোনো অবস্থাতেই যাওয়া জায়েয নয়। ঘুরেফিরে দেখার জন্যও যাওয়া যাবে না।

কুরআনের হুকুম, ‘আর পাপিষ্ঠদের (কাফিরদের) প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।’ [সুরা হুদ, ১১ : ১১৩] তাদের প্রতি সামান্য ঝুঁকলে এবং তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখলেই যদি জাহান্নামে যাওয়ার শঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের কুফরি ও শিরকি উৎসবে অংশগ্রহণ করা তো আরও মারাত্মক হবে। তেমনিভাবে তাদের অনুষ্ঠানে দেব-দেবী এবং ভূত-প্রেতের নামে যেসব মিষ্টি ও প্রসাদ উৎসর্গিত করা হয়, সেগুলোও খাওয়া জায়েয নয়।” মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুর’আন উল্লেখ করেন- “আল্লাহ্ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস খাওয়া। আর যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে।” অর্থাৎ যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয় সেটা আমাদের জন্য আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন। আর এই কারনেই পূজার প্রস্বাদ খাওয়া হারাম।

কেউ কেউ তো পুজোয় অংশগ্রহণকে গর্বের বিষয় বলে মনে করে! বলে, ‘গিয়েছি তো কী হয়েছে? গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাব? আমার ঈমান ঠিক আছে।’ প্রিয় ভাই, একটু ভেবে দেখুন, মূর্তিপূজা হচ্ছে শিরক। পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো শিরক। এই পুজোগুলো তো শিরকে পূর্ণ। একজন তাওহিদবাদী মুসলিম কী করে এধরনের শিরকি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারে? আল্লাহর সাথে শিরক করা মানে তাকে অপমানিত করা। সন্তানের সামনে তার পিতাকে অসম্মান করা হলে কোনো সুসন্তান কি সেটা ‘ইনজয়’ করতে পারে? আপনি যদি সত্যিই আল্লাহতে বিশ্বাসী হন, তাহলে কখনই আপনার সৃষ্টিকর্তার এরকম অপমান আপনি উপভোগ করতে পারেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।’ [সুরা লুকমান, ৩১ : ১৩]

মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আ.) মূর্তিপূজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।” [সূরা মুমতাহিনা : ৪] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর।’ [সহিহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৭৮] ইরশাদ হয়েছে- ‘হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।’ [সূরা হজ : ৭৩] ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।’ [সূরা আন নিসা : ১১৬] যেখানে আপনার উচিত ছিল তাদের মূর্তিপূজার কলুষতা থেকে তাওহিদের দিকে আহ্বান করার। সেখানে আপনিই কিনা লিপ্ত হয়ে গেলেন মূর্তিপূজায়? তাওবা করুন। ফিরে আসুন। আল্লাহর তাওহিদকে পূর্ণরূপে আঁঁকড়ে ধরুন। সমস্ত শিরক ও জাহিলিয়াতকে পরিত্যাগ করুন। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ স্লোগানের পরিবর্তে ‘ধর্ম যার, উৎসবও তার’ স্লোগান ধরুন।

লেখিকা : সাবরিনা ওবায়েদ আনিকা

শিক্ষার্থী (বাংলা বিভাগ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১