বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১

হারাম ভক্ষণকারী জান্নাতে যাবে না


মাওলানা মাহাথির মোবারক

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের পর অন্যতম ফরজ কাজ হলো হালাল উপার্জন করা। ইবাদত-বন্দেগি কবুল হওয়ার জন্য অন্যতম একটি শর্ত হলো হালাল উপার্জন করা। হালাল উপার্জন ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নহে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজ আমরা হালাল উপার্জন হতে বহু দূরে সরে দাঁড়িয়েছি। দুনিয়ার লোভে পড়ে আমরা টাকা পয়সার  পেছনে পাগলের মতো ছুটেছি। বড়লোক হওয়ার জন্য আজ হালাল হারামের বিবেচনা না করে সামনে যা আসতেছে তাই আমরা হাত ভরে নিচ্ছি। আজ আমরা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে হারামে আরাম খুঁজছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো হারামে কোনো আরাম নেই। হালাল উপার্জনে আল্লাহতায়ালা যে বরকত দিয়েছেন হারামে তা নেই। সুতরাং গভীর  দৃষ্টি দিলে পরিলক্ষিত হয় হারাম উপার্জন কারীর চেয়ে হালাল উপার্জনকারী বেশি সুখে ও শান্তিতে বসবাস করে। হারাম উপার্জনকারীর পেছনে একের পর এক বিপদ লেগেই থাকে।

 

আবার অনেক লোক আছে নামাজও পরে আবার হারামও খায়। হজও করে আবার সুদও খায়। মসজিদে নামাজে যাওয়ার সময় হারাম খেয়ে নামাজে যায়। এমনকি গায়ের পোশাকটিও হারাম টাকায় তৈরি করা। নামাজ শেষে লম্বা মোনাজাত ধরে হুজুরদেরকে জিজ্ঞেস করে আমার দোয়া কেন কবুল হয় না? বা আমার ওপর থেকে কেন বালা-মসিবত দূর হয় না? হারাম ভক্ষণ করে বালা-মসিবত দূর হওয়ার আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত-১৭) অন্যত্র তিনি বলেন, অতপর নামাজ শেষ হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমআ, আয়াত-১০)

 

নিজ হাতে হালাল উপার্জন করা সমস্ত নবীদের সুন্নত। আমাদের মহানবী (সা.) নিজ হাতে কাজ করতেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হালাল জীবিকা উপার্জন ও তা গ্রহণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামে মৌলিক ইবাদতগুলো কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো হালাল রুজি। যার রুজি হালাল নয়, তার সব ধরনের সালাত, সাওম, হজ, জাকাত সব কিছুই বরবাদ হয়ে যাবে। কিছুই কবুল হবে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দু-হাতের উপার্জিত হালাল খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য আর কিছুই নেই।’ (সহিহ বুখারি) তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রুজি দিয়ে সে নিজে ও তার পরিবার-পরিজন প্রতিপালনের চেষ্টা করে সে আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো।’ অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হারাম ভক্ষণকারীর শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি হারাম ভক্ষণ করে সারা দিন-রাত নামাজ পড়ে তারপরও তার এক রাকাত নামাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছবে না। অর্থাৎ তার নামাজ কবুল হবে না।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ)

 

আবু ইয়ালার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে লোকেরা! সম্পদের প্রাচুর্যতাই ধনী নয় বরং আসল ধনী হচ্ছে মনের ঐশ্বর্য। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাকে তাই দেবেন যা তিনি তার রিজিকে রেখেছেন। সুতরাং সৎভাবে উপার্জন করো। যা হালাল করা হয়েছে তা গ্রহণ করো এবং যা হারাম করা হয়েছে তা বর্জন করো। কেননা হারাম উপার্জনকারী কখনো জান্নাতে যাবে না এবং সে কখনো মুমিন হতে পারবে না।’ আর আল্লাহতায়ালা বলেন, মুমিনরাই জান্নাতের প্রথম কাতারে থাকবে। অর্থাৎ তারাই সবার আগে জান্নাতে যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে হারাম থেকে বেঁচে হালাল উপার্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : খতিব, মসজিদে বাইতুন নুর, মাওনা, গাজীপুর

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১