বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১

প্রতিবন্ধকতা যখন স্বপ্নজয়ের হাতিয়ার


মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি বগুড়া। থানা সারিয়াকান্দি। জন্ম ১৯৯২ সালে। মহিদুলের বাবার নাম মো. ইয়াকুব আলী সরকার। মায়ের নাম মোসা. তহমিনা বেগম। মোট তিন ভাই। মহিদুল সবার ছোট। ডিগ্রি পাস করেন মাদরাসা থেকে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটপাগল ছিলেন তিনি। যেখানেই ক্রিকেট সেখানেই মহিদুল। এভাবেই চলছিল সব ঠিকঠাক। ২০০৮ সালে একটি ঘটনা মহিদুলের জীবনকে অনেকটাই পরিবর্তন করে দেয়। সেদিন মাঠে খেলছিল ক্রিকেটপাগল ছেলেটি। হঠাৎ বল এসে লাগে তার ডান হাঁটুতে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায় সে। ব্যথা পায় প্রচণ্ডভাবে। ব্যথা পাওয়ার পর সেই জায়গাটা ফুলে যায়। গ্রামের ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কে জানত এই ব্যথা থেকে পা ধীরে ধীরে ইনফেকশনের দিকে যাবে। ছয় মাস পর আবার ডাক্তার দেখানে হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মহিদুলের ডান হাঁটুর নিচ থেকে পা কেটে ফেলা হয়। এই কষ্টের যেন কোনো সীমা ছিল না। যে ছেলেটি পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়াত, সেই ছেলেটির ঠাঁই হলো হুইরচেয়ারে।

মহিদুল বলেন, ‘ক্রিকেটের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক ছিল। ক্রিকেট ছিল আমার প্রিয় খেলা। অপারেশন হওয়ার পর অন্য মানুষের ক্রিকেট খেলতে দেখতাম। নিজের খারাপ লাগত এই ভেবে যে আমি ক্রিকেট খেলতে  পারব না। তখন আমার একজন বন্ধু বলল, আমাদের মতো যারা আছে তাদের আলাদা একটা ক্রিকেট টিম আছে। আমি সে অনুসারে ইন্টারনেট ঘাঁটা শুরু করলাম। তখন আমার মোহসীন ভাই ও নাহিয়ান ভাইয়ের সাথে কথা হয়। মোহসীন ভাই বললেন, সামনে আমাদের টুর্নামেন্ট হবে। তুমি যদি  ভালো খেলতে পার তাহলে তোমাকে নেওয়া হবে। সে সময় একটি ট্যালেন্ট হান্ট হয়। সেখানে আমি ভালো খেলি এবং বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিমে চান্স পাই। ২০১৭ সালে ইন্ডিয়া টিম বাংলাদেশে আসে। প্রথমে ওই খেলাতে অংশগ্রহণ করি। এভাবেই শুরু। তারপর ইন্ডিয়া, নেপালে গেছি। সেখানে খেলেছি। জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পরিক্রমায় ছিলেন মহিদুল। ২০০৮ সালের আগে এক জীবন। তারপর আরেক জীবন। জীবনের এই ভিন্ন ভিন্ন ধাপে সবাই তার পাশে ছিলেন কি? এই পরিস্থিতিতে মনোবল কেমন ছিল? মহিদুল বলেন, ‘আসলে আমার যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমার পাশে দু-একজন ছাড়া অনেকেই আমার কাছে আসেনি। যেমন, মান্নান,মামুন আমার খুব ভালো বন্ধু। ওরা আমার পাশে ছিল সব সময়। এখনো আছে। কিন্তু অন্য অনেক বন্ধুদের কাছে পাইনি। এ নিয়ে অবশ্য আমার কোনো অভিযোগ নেই। পরিবারের দিক থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। আসলে আমি সে সময় হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম।  ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব; ভবিষ্যৎ চিন্তা তো দূরের কথা। কিন্তু আমি যখন ক্রিকেটে আসলাম, নতুন করে খেলা শুরু করলাম, তারপর ধীরে ধীরে আমার হতাশা কেটে যেতে শুরু করে। প্রথমদিকে ঘরের বাইরে বের হতাম না। আস্তে আস্তে বের হওয়া শুরু করলাম। এখন ভালো লাগে এই ভেবে যে, আমি আগে যেমন খেলতাম, এখনো ক্রিকেট খেলতেছি। আমাকে আস্তে আস্তে করে সবাই চিনছে। এখন নিয়মিত খেলি। দেশ-বিদেশে যাই। অনেকে এগুলো পজিটিভলি নেয়। আগে যারা মূল্যায়ন করত না, এখন তারা মূল্যায়ন করে। যেঁচে এসে কথা বলে। আসলে এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম।

মহিদুল একজন ফ্রিল্যান্সার। বিয়ে করেছেন। একমাত্র মেয়ে মারিয়াকে নিয়ে সুখের সংসার। নিজের পরিবারের খরচ নিজেই চালান। স্বপ্ন দেখেন হুইলচেয়ারে নিজের ঝলকে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যাবেন অনন্য উচ্চতায়। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হোক।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১