বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১

রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি

ছুটি বাতিল, সতর্ক পুলিশ


দেশজুড়ে বিশেষ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এমনকি ছুটিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের দ্রুত নিজ কর্মস্থলে ফেরারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ঘিরেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া এলাকাকেন্দ্রিক ব্লক রেইডও দেওয়া হবে রাজধানীতে। তবে কোনো রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়নি।

জানা গেছে, গুজব ছড়িয়ে সারা দেশে সহিংস পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য আগে থেকেই এ প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে অনেক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রয়েছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ফের কোনো সহিংসতা না হয়, এজন্যও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব কারণে পুলিশে বিশেষ সতর্কবস্থা বা নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়।

গতকাল বুধবার থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিকপাড়া হিসেবে বিবেচিত গুলশান, বারিধারা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাকেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। রাতে বাড়ানো হয়েছে  চেকপোস্ট সংখ্যা। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ব্লক রেইড দিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের।

এদিকে, র্যাবের পক্ষ থেকেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশি টহলের পাশাপাশি বেড়েছে র্যাবের টহল। তাদেরও ব্লক রেইডের  নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, এটি পুলিশের স্বাভাবিক কাজ। অনেক সময় নিরাপত্তা বাড়ানো হয় আবার অনেক সময় নিরাপত্তা স্বাভাবিক রাখা হয়। তবে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয় সে কারণে পুলিশ সতর্ক থাকে।

অন্যদিকে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে রেড অ্যালার্ট জারি করতে হবে। তাই জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই টহল ব্যবস্থা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সবসময়ই সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এ নির্বাচনে ফের যেন কোনো সহিংসতা না হয়, এ জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

অনুরূপভাবে রাজধানীতেও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না হয়, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের টহল ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এটি পুলিশের একটি চলমান প্রক্রিয়া। কাউকে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ ছিল। বর্তমানে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় ওয়ারেন্ট বেড়েছে এবং রিসিভ করছি আমরা। এর ফলে আমাদের বিশেষ ওয়ারেন্ট অভিযানে যেতে হয়। গতকাল বুধবার থেকেই আমরা ওয়ারেন্ট অভিযান শুরু করেছি। এছাড়া শীতের সময় চুরি ও ছিনতাই বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসে অনেক রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম আছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রয়েছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অফিসারদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা অপরাধীদের ধরতে এলাকাভিত্তিক ব্লক রেইড করার পরিকল্পনা করেছি। 

পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকায় কর্মরত যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে বাইরে ছিলেন, তাদের গতকাল বুধবার দিনের প্রথমভাগে কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরে যাদের যাওয়ার কথা ছিল, তাদের সফর বাতিল করতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে জন্য পোশাকে সাদা পোশাকে নজরদারি রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত থানা এলাকায় কোনো ধরনের নেগেটিভ খবর নাই। তিনি বলেন, আমরা সবাই সতর্ক রয়েছি।

গুলশান থানার পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। ইতিমধ্যে টহল ও নজরদারি আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বিশেষ অভিযানে তিন হাজারেরও বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ইয়াবাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদব্র‍্য, অস্ত্র, বিস্ফোরকসহ নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল।

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, গত ১৬ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট মাদকবিরোধী অভিযানে ২ হাজার ৯৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এসব অভিযান চলাকালে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৩২৮ পিস ইয়াবা, ৫ কেজি ২৩০ গ্রাম হেরোইন, ৮ হাজার ৮৩২ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৫৯০ লিটার বিদেশি মদ, ১০ হাজার ৫১ লিটার দেশি মদ ও দেড় হাজার কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়েছে।

একই সময়ে পুলিশের অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার অভিযানে ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযানে ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫২৫টি দেশীয় অস্ত্র ও ৫৭টি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলাকালে পুলিশের নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেলবিরোধী অভিযানে নিবন্ধনহীন ৩ হাজার ১৪০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। চোরাই ৩৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৯৮টি। গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন।

এদিকে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশিল পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনা মেনে সেই মোতাবেক আমরা কাজ করছি।

চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবসময় প্রস্তুত থাকি। এক্ষেত্রেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন সেইভাবেই নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকেও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১