বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২

থমথমে কালাইহাটা, চলছে মাতম

বগুড়ার গাবতলীতে বিজিবির গুলিতে ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল এলাকার দোকান বন্ধ ছিল প্রতিনিধির পাঠানো ছবি


বগুড়ায় ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নারীসহ চারজন নিহতের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামে, চলছে মাতম। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কালাইহাটা বাজারের দোকানপাট বন্ধ রেখে গ্রামের লোকজন বাজারে অবস্থান করছেন। সকাল থেকে গ্রামে প্রবেশ করেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য। দুপুরে নিহত চারজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জীবন ও নির্বাচনী সামগ্রী রক্ষার্থে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বিজিবি সদস্যরা গুলি চালায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন কালাইহাটা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় স্থানীয় জনগণ চরম উত্তেজিত। তারা সংবাদ কর্মীদের দেখলেই ‘ম্যাজিস্ট্রেটের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গত বুধবারে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে। কালাইহাটা বাজার ছাড়াও শত শত মানুষ ভিড় করছে নিহতদের বাড়িতে এবং কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে। ভোট কেন্দ্রের মাঠ জুড়ে পড়ে আছে অংসখ্য ইটপাটকেল আর ভাঙা কাঁচের টুকরো। প্রিসাইডিং অফিসারের ও ভোটগণনার কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভোটের পরের দিন শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষার্থীরা কেউ আসেনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউছুফ আলী বলেন, ভোটের দিন সন্ধ্যায় গুলিতে চারজন মারা যাওয়ার পর আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের মালিয়ান ডাঙ্গা এবং কালাইহাটা গ্রামে আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি। কালাইহাটা ভোট কেন্দ্রের ফলাফলের ওপর নৌকা মার্কার জয়-পরাজয় নির্ভর করছিল। সেই কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে নৌকা মার্কার কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা ভোট কেন্দ্রে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি সদস্যরা গুলি ছোড়ে। পরে রাত ১০ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে নৌকা মার্কার প্রার্থী ইউনুছ আলী ফকির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘জনগণকে শান্ত করতে সেখানে আমার দেওয়া বক্তব্যের অডিও ও ভিডিও রেকর্ড আছে।, জনগণ শান্তি বজায় না রেখে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।’ তিনি বলেন, অন্য আট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর ওই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবি করেন তারা। একপর্যায়ে কয়েকশ নারী ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে আমার গাড়িসহ বিজিবির ব্যবহূত মাইক্রোবাস, ভোট কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষের দরজা জানালা ভাঙচুর করে তছনছ করে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা আত্মরক্ষার্থে প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষে অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্ধ লোকজন সেই কক্ষে হামলা চালিয়ে দরজা জানালা ভেঙে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে বিজিবি সদস্যরা গুলি বর্ষণে বাধ্য হন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, সেখানে নিহত কালাই হাটা গ্রামের খোরশেদ হোসেন (৬০), আব্দুর রশিদ (৫৫), আলমগীর হোসেন (৪৫) ও কুলসুম আক্তারের (৫৫) লাশ ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ভোট কেন্দ্রে হামলা এবং চারজন নিহতের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব থানা প্রিজাইডিং অফিসার বাদি হয়ে মামলা করবেন বলে উল্লেখ করেন ওসি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১