বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২

কমেছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা


মানুষের জীবনে নববর্ষের আনন্দ যেন উপচেপড়া। তাইতো এত আয়োজন, এত সাজ, এত যাত্রা। তবে পয়লা বৈশাখ ছাড়া অন্য দিনগুলোতে বাংলা তারিখের কথা জানা থাকে না অনেকের। তারিখ দেখবে-জানবে কোথায়? ঘরে যে আজ আর বাংলা ক্যালেন্ডার নেই। বাংলা ক্যালেন্ডারের সে যুগও আর নেই। বাঙালির নিজস্ব ক্যালেন্ডার চর্চাও আর নেই। বিয়ে অনুষ্ঠান বা স্বল্প কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যিক ক্ষেত্র ছাড়া বাংলা তারিখের প্রয়োজনও আজ যেন ফুরিয়েছে। তবু আজো একটি বাংলা ক্যালেন্ডারের স্মৃতি অমলিন আছে বাঙালির অন্তরে।

গত তিন থেকে চার দশক আগেও বাঙালির প্রতিটি ঘরে দেখা যেত বাংলা দিনলিপি। বাঙালির জীবনে অপরিহার্য অঙ্গ ছিল বাংলা ক্যালেন্ডার। এর সময়েও পোপ গ্রেগোরিয়ান দিনলিপি খুব বেশি চোখে পড়ত না। এর আগে হোসেন শাহী জমানার আল্লাউদ্দিন হোসেন শাহীর আমলে (পনেরো শতকে) বাঙালির নিজের ক্যালেন্ডার চর্চা শুরু হয়েছিল। ওই প্রথম ইসলামিক দিনলিপির চন্দ্র গণনার নিয়ম কানুনের সঙ্গে সংস্কৃত প্লিতদের সূর্য গণনার নিয়ম-কানুন মিশিয়ে তৈরি হলো বাঙালির নিজের মতো একটি ক্যালেন্ডার। তাতে একদিকে রইল চাঁদ দেখার হিসেব-নিকেশ আর একই সঙ্গে রইল সূর্যের গতি-গ্রহণের নানা হিসেব। মাটির বাড়ির দেয়ালের গায়ে আঁচড় কেটে বাড়ির কর্তারা দিনলিপি আঁকিয়ে রাখতেন বছরের প্রথম দিনে। তখনই বাংলার লোককাব্যে যুক্ত হলো একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ, ছয়ে ঋতু, নয়ে নবগ্রহ শব্দগুলো। বলতে গেলে ছায়াদণ্ডে সূর্যের আলো আর ছায়ার বাড়া-কমা দেখে দিন হিসেবের জন্য বাঙালির হাতে এল আঁকা লেখাযুক্ত দিনলিপি বা ক্যালেন্ডার। বাদশা আকবরের আমলে আরেকবার বাঙালি পেয়েছিল বাংলার উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বাদশাহি ক্যালেন্ডার। তার কারণ অবশ্য ভিন্ন ছিল। বাংলার জমি থেকে কর আদায়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্যে এমন বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরির প্রকল্প নিয়েছিলেন আকবর। সেই ক্যালেন্ডারের নাম ছিল তারিখ-ই-ইলাহি। মাস, তারিখ, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদির নামে সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার করার পাশাপাশি ইসলামী নামকরণও রাখা হয়েছিল সেখানে। বাদশা আকবরের রাজকীয় গ্রহবিদ ফতুল্লাহ সিরাজি নির্মাণ করেছিলেন এমন বাংলা ক্যালেন্ডার। দেখতে দেখতে নতুন যুগ আসে। বাংলা ক্যালেন্ডারে আসে হরেক প্রকার রূপ। আবার কিছু বিষয় অপরিবর্তিত থেকে যায়। যেমন ছটি ঋতু রইল দিনলিপিতে, প্রত্যেক ঋতুর জন্য ধার্য হলো দুই মাস। আবার প্রত্যেক মাস নামাঙ্কিত হলো একেকটি নক্ষত্রের নামে। যেমন বিশাখা নক্ষত্রের নামে হলো বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামে হলো জ্যৈষ্ঠ, উত্তর আষাঢ় নক্ষত্র থেকে এলো আষাঢ়, শ্রবণা থেকে এলো শ্রাবণ, ভাদ্রপাদা থেকে ভাদ্র, আশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃতিকা থেকে কার্তিক, পুস্যা থেকে পৌষ, আগ্রৈহনী থেকে আগ্রহায়ণ, মাঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন, চিত্রা থেকে চৈত্র। পাশাপাশি নবগ্রহ থেকে সাতজনকে বাছাই করে নেওয়া হলো সাতটি দিনের নাম। সব মিলিয়ে ফসল ফলানোর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ঋতু-মাসের হিসেব ধার্য করা হলো।  সেকালের নিয়ম মেনে আজকের ১৪২৯ লিখতে হচ্ছে। রাহু-কেতু-গ্রহণনির্ভর ক্যালেন্ডারে বাঙালি যুক্ত করল তাদের স্বদেশ নেতাদের প্রতি ভালোবাসাময় ছবি। পঞ্জিকার অফিস থেকেই প্রকাশ পেত এমন তারিখ যুক্ত ক্যালেন্ডার। একসঙ্গে বারো মাসে তেরো পার্বণের নানা হিসেব থাকত এসব ক্যালেন্ডারে। এরপর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসে রঙিন ছবি। হালখাতার দোকানদার নিজের নাম দিয়ে ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে থাকে। সেই চল আজও আছে। বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে। গত দুই দশক জুড়ে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা নেই বললেই চলে। এই অবস্থাই প্রমাণ করছে গ্রাম-শহরে নববর্ষের আনন্দ বাড়লেও কমেছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা। হয়তো আমাদের অতি আধুনিকতা আজ বাংলা দিনলিপিকে বিলুপ্ত করে ফেলেছে। হাতের ডিজিটাল ঘড়ি আর পকেটে থাকা মোবাইলটা তারিখ-সময় সবই দেখায়। তবে তা ইংরেজির, বাংলা তারিখ নয়।  


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১