বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১২ মে ২০২২

ডেসটিনির রফিকুলের ১২ বছরের কারাদণ্ড


গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায়ে তার দুই শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

একইসঙ্গে গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তার  তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।

এ মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের মোট ২ হাজার ৩ শ’ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানের যত সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছিল তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

একইসঙ্গে এ সম্পত্তি বিনিয়োগকারীদের নিকটে বন্টেনের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতিকে প্রধান ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে অর্থ মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব, সমবায় মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব, পুলিশের ডিআইজি ও চার্টার একাউন্টটিংকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি ডেসটিনির সকল সম্পত্তি সমন্বয় করবে এবং তা এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টন করবেন।

রায়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের দশ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড, ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, সাঈদ-উর-রহমান, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিনের দশ বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের নয় বছরের কারাদণ্ড, ৩০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছরের কারাদণ্ড, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দীবা, জমশেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়বুর রহমান ও নেপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আট বছরের কারাদণ্ড, ৪০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছর কারাদণ্ড, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন ও সুমন আলী খানের নয় বছরের কারাদন্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছর ছয় মাস কারাদন্ড, আবুল কালাম আজাদ, সাইফুল ইসলাম রুবেল, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলমের আট বছরের কারাদন্ড, ১২৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছর ছয় মাস কারাদন্ড, ড. এম হায়দারুজ্জামানের ছয় বছরের কারাদন্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদন্ড, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের ছয় বছরের কারাদন্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড, কাজী মো. ফজলুল করিমের পাঁচ বছরের কারাদন্ড, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড,  মোল্লা আল আমীনের আট বছরের কারাদন্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড, শফিউল ইসলামের সাত বছরের কারাদন্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর ছয় মাসের কারাদন্ড, জিয়াউল হক মোল্লা, খন্দকার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলমের পাঁচ বছরের কারাদন্ড, দশ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড, ওমর ফারুকের পাঁচ বছরের কারাদন্ড, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড, সুনীল বরণ কর্মকার ওরফে এসবি কর্মকারের আট বছরের কারাদন্ড পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছরের কারাদন্ড, ফরিদ আকতারের আট বছরের কারাদন্ড, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদন্ড, এস সহিদুজ্জামান চয়নের আট বছরের কারাদন্ড, ১৫ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদন্ড,  আবদুর রহমান তপন ও  মো. শফিকুল হকের সাত বছরের কারাদন্ড, এককোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড, মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান ও জেসমিন আক্তার মিলনের পাঁচ বছরের কারাদন্ড, এককোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একবছরের কারাদন্ড, এসএম আহসানুল কবির, এএইচএম আতাউর রহমান রেজার আট বছরের কারাদন্ড, দশ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদন্ড, গোলাম কিবরিয়া মিল্টনের আট বছরের কারাদন্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’বছরের কারাদন্ড, মো. আতিকুর রহমানের সাত বছরের কারাদন্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা. অনাদায়ে দু’বছরের কারাদন্ড এবং খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেনের সাত বছরের কারাদন্ড, এককোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ মোট আসামি ৪৬ জন। তাদের মধ্যে জামিনে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মো. দিদারুল আলম, লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল। কারাগারে আছেন এমডি রফিকুল আমীন ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অন্য ৩৯ আসামি পলাতক।

অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারি পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে পৃথক মামলা করেন।

২০১৪ সালের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মোজাহার আলী সরদার। এতে ডেসটিনির গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলায়ই আসামি হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এমন ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১