বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৬ মে ২০২২

আসন্ন বাজেটের লক্ষ্য হবে মন্দা কাটানো


আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এবারো বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচনকে। সেইসঙ্গে মাথায় রাখতে হচ্ছে মহামারি ও বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি। তাই এবারের বাজেটের লক্ষ্য থাকবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটানো চেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনার কারণে এক বছরের ব্যবধানে জিডিপির অংশ হিসেবে বাজেটের আকার ২ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বাজেটের আকার কমলেও নতুন অর্থবছরে ঘাটতি থাকবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, এখনো করোনার মন্দা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভর্তুকিও বাড়ছে। ভর্তুকির টাকা জোগাতে এবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর।

আগামী অর্থবছরের জন্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ১১ দশমিক ৩ শতাংশ)। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের হার কমানো হয়েছে প্রায় ২ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নতুন বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি টাকা। কর-বর্হিভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ দুই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার কোটি ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১১ লাখ উপকারভোগী বাড়ছে। অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে ৮টি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা সংক্রান্ত, বাকি ১১টি খাদ্য সহায়তার।

সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএসএস) মধ্যবর্তী উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকলেও এখানে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, খাদ্য, কৃষি ভর্তুকি, ক্ষুদ্র ঋণসহ নানা কার্যক্রমের বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক কল্যাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্ম সৃজন, অবসর ও পারিবারিক ভাতা এবং অন্যান্যসহ মোট ছয় খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে ১৮ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তায় ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও রয়েছে।

নতুন বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে ৩২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা রয়েছে। এ খাতের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, বেদে, হিজড়া ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা হয়।

আগামী বছরের বাজেটে মানবসম্পদ উন্নয়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রাথমিক ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তিতে এ টাকা ব্যয় হবে।

কর্মসৃজন খাতে নতুন বাজেটে ১৯ হাজার ৭০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। কাবিখা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে এই টাকা ব্যয় হয়। অবসর ও পারিবারিক ভাতায় নতুন বাজেটে ২৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে রয়েছে ২৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

বয়স্ক, বিধবা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিতে এ টাকা ব্যয় হবে। নতুন বাজেটে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আওতা বাড়ছে শুধু বয়স্ক ও বিধবাদের ক্ষেত্রে। এই কর্মসূচির আওতায় নতুন করে আরো ১০০ উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে যুক্ত হবে ১১ লাখ নতুন উপকারভোগী। সবমিলিয়ে নতুন বাজেটে যাদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮ লাখে। তবে এবার ভাতার পরিমাণ বাড়বে না। এ কর্মসূচির আওতায় গত তিন অর্থ বছর ধরে উপকারভোগীরা মাসে ৫০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দারিদ্র্যবিমোচনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের কাজ চলছে। সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রণীত হবে আগামী বাজেট।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১