বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ মে ২০২২

রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ স্পট


রাজধানীর ১৫ স্পটকে ছিনতাইয়ের জন্য অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বিশেষ মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা ইউনিট এমনকি র‍্যাবও করবে এ মনিটরিং। দিন দিন রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের এ সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে। এছাড়াও রাজধানীজুড়ে ছিনতাইকারীদের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।

ডিএমপির সূত্র জানায়, রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি ছিনতাইয়ের স্পটের মধ্যে রয়েছে, আজমপুর, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, ৩০০ ফুট, মতিঝিল ব্যাংকপাড়া, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শেরেবাংলানগর রোড, জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে, হাতিরঝিল, বনানী, মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ রোড।

এসব স্পটে দিনে-দুপুরে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি অনেক সময় পুলিশের পোশাক পরেও ছিনতাই ডাকাতি সংঘটিত হয়ে থাকে। এ কারণে সকল স্পটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে বিশেষ পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

সূত্র মতে, রাজধানীতে বছরজুড়েই কমবেশি চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে নজরে আসে না। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের পুলিশ রেকর্ড না করার প্রবণতাও বাড়ছে। যার ফলে অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে ।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে কয়েকভাবে ছিনতাই হয়। তবে এর মধ্যে যারা একেবারে নিয়মিত ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে। এর আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে একজনের পেছনে কাজ করতে থাকে, পরে সুবিধাজনক স্থানে পেলে সর্বস্ব লুটে নেয়।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, নিয়মিত ছিনতাইসহ প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ আসে। কয়দিকে মনোযোগ দেওয়া যায়।

ডিসি মশিউর বলেন, যারা পেশাদার ছিনতাইকারী তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পুলিশের পোশাক পরে অপরাধ করছে। এরা বিভিন্ন সময় মতিঝিল ব্যাংক পাড়া, উত্তরা এয়ারপোর্ট, কুড়িল-বিশ্বরোড, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শংকর ও অভিজাত এলাকাসহ রাজধানীর প্রবেশমুখে সক্রিয় থাকে।

ছোট-বড় যে অপরাধই হোক না কেন, সেটা থানায় অবহিত এবং মামলা করার আহ্বান জানিয়ে ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, অরপাধের রেকর্ড থাকলে আগে-পরে অপরাধীকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।

ডিসি বলেন, রাজধানীতে বিশেষ করে কয়েকটা স্পটে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটে বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তরা এয়ারপোর্ট, আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ও ৩০০ ফুট, মতিঝিল ব্যাংকপাড়া, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি। এসব স্পটের মধ্যে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় বেশি অপরাধ করে পেশাদার চক্রটি।

উত্তরা এয়ারপোর্ট, আজমপুর বাসস্ট্যান্ড এবং সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ি এলাকায় বিভিন্ন গাড়ির চালক-সহকারীরা এসব অপরাধ করে। তারা যাওয়া-আসার মধ্যে সুযোগ সুবিধামতো যাত্রী তুলে এগুলো করে-বলেন মশিউর রহমান।

ডিসি বলেন, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনাও একটু কষ্টসাধ্য। কারণ অপরাধের কোনো আলামত থাকে না। এছাড়া পথে হওয়ায় ভুক্তভোগীরা কোন থানায় যাবে, কার কাছে বলবে-এই দোলাচলে আইনি সহায়তা আর নেয় না। এর মধ্যে ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজারে ছোটখাটো যা ঘটে, সেটা এখানকার ফুটপাথের হকাররাই বেশি করে থাক।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, রাস্তায় চলার পথে চেইনসহ স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ছিনিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পথচারীরা অনেককে ধরে ফেললে তারা স্বর্ণালঙ্কার খেয়ে নেয়। পরে পুলিশে দিলে দেখা যায় ভুক্তভোগী তার জিনিস উদ্ধারের পরে আর মামলা করতে চায় না। এতে করে অপরাধীরাও ছাড়া পেয়ে যায়। আর মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে ফের মার্কেটে বিক্রি করে।

র্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে র্যাব বরাবর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আসছে। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে র্যাব সাদা পোশাকে নজরদারি করে থাকে।

 ভুক্তভোগী খলিল হাওলাদার একজন  খুচরা কাপড় বিক্রেতা। তিনি বলে ন, প্রতিদিনকার মতো গত বছর ২৬ এপ্রিল ভোরে ভুলতা-গাউছিয়া মার্কেটে যাওয়ার জন্য ভাটারা বিশ্বরোড এলাকার বিআরটিসি বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে থাকি। এসময় একটি সিএনজি এসে কোথায় যাবেন জিজ্ঞাসা করলে বলি গাউছিয়া মার্কেট যাব। ওই পথে যাবে বলে আমাকে তুলে নেয় সিএনজিতে। পরে সিএনজি পিংক সিটি আবাসিক এলাকায় যাওয়ার পর হঠাৎ আমার পাশে বসে থাকা দুইজন হাত-মুখ চেপে ধরে মারধর শুরু করে। এর একপর্যায়ে আমার হাত-পা বেঁধে সব ছিনিয়ে নিয়ে পিংক সিটি আবাসিক এলাকায় ফেলে যায়। ঘটনার দিন ভাটারা থানায় একটি ছিনতাই মামলা করি।

প্রতিবার ঈদের আগে মলম পার্টিসহ চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে এবার ঈদের আগে তেমন কোনো পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি তাদের। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিলেন বলে জানান এক কর্মকর্তা।

রাজধানীতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি র্যাব নিয়মিত ছিনতাই-চাঁদাবাজ ধরতে অভিযান চালায়। ঈদের আগে গত এক মাসে চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) একটি অভিযানে ২৭ জন আর র্যাব-৩ তিনটি অভিযানে ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবি জানায়, গত বছর প্রথম তিন মাসে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ৩৪৪টি, যার মধ্যে গাড়ি চুরি ৮৩টি। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ৪১১টি। এর মধ্যে গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে ৯৭টি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে।

রাজধানীতে নানা পন্থায় অন্তত পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার অভিযোগে গত মাসে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পুলিশ আসামিদের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখেছে, তাদের মধ্যে একজনের নামে ৬টি আর বাকিদের নামে দুটি করে মামলা রয়েছে।

মামলা পর্যালোচনাকারী ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রটি এত মানুষের সর্বস্ব লুটে নিলেও কেউ মামলা বা সাধারণ ডায়রি (জিডি) পর্যন্ত করেনি। একজন ব্যক্তি অফিসের চাপে পড়ে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মামলা করায় এই চক্রকে আইনের আনা সম্ভব হয়েছে। সাধারণ মানুষ যদি ভুক্তভোগী হওয়ার পরে মামলা না করে, তাহলে অপরাধীদের ধরা সম্ভব নয়।

প্রতিমাসে ঢাকা মহানগরের অপরাধ পর্যালোচনা সভা হয়, এতে মামলা থেকে শুরু করে সব বিষয় উঠে আসে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অপরাধের ধরন ও মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ নেন। বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করে গোয়েন্দা বাহিনী। রাজধানীর প্রতিটি থানার মামলাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এসময় ছিনতাইয়ের মামলা পেলে তার আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়।

রাজধানীতে গত মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশের টহল বা চেকপোস্ট বাড়ানো হচ্ছে। তবু কমছে না ছিনতাইয়ের ঘটনা। টহল-চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ঘটনা ধরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে ছিনতাইয়ের ঘটনা কমবে না। এসময় তালিকা করে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন কমিশনার।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১