বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ জুন ২০২২

পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য ছুটে আসে বানভাসিরা


যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এখনো চারদিকে থৈ-থৈ করছে বন্যার পানি। যদিও বন্যার পানি পরিমাণে কমে যাচ্ছে। পানি কমলেও চরাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগ কমেনি। বানভাসি মানুষগুলোর ঘরে নেই প্রয়োজনীয় খাবার। রয়েছে শিশু খাদ্য সংকট। বেড়েছে নানা ধরণের পানিবাহিত রোগবালাই। হাতে টাকা-পয়সাও নেই। পানিবন্দি থাকায় রোজগারের পথ অনেকটা বন্ধ।

এমন অবস্থায় বন্যার পানিতে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আটকে রয়েছে তারা। নৌকা ছাড়া কোথাও কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। চরাঞ্চলের এমন পরিস্থিতির নৌকাযোগে কেউ পরিদর্শন বা ঘুরতে গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দরজা বা উঠানের কাছে এসে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন বানভাসি অসহায় মানুষগুলো।

তারা নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছেন। পানিবন্দি থাকায় যারা নৌকার কাছে আসতে পারেন না তারা নৌকাকে উদ্দেশ্য করে হাঁক-ডাক বা হাতের ইশরা দিচ্ছেন। আবার অনেকে ভেলা ও ছোট নৌকা নিয়ে ঘিরে ধরে ত্রাণের জন্য আকুতি জানায়।

সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদী চরাঞ্চলের গাবসারা, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

কোনাবাড়ী এলাকার বানভাসি জোয়াদ্দার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় ত্রাণ নিয়ে কোন সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক সংগঠন বা কোন এনজিও আসেনি। তাই খাবারের খুব সংকটে আছি। এ পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি।

বেলটিয়াপাড়া গ্রামের বানভাসি বিমলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, একরাতে পানির প্রবল স্রোতে নিমিষেই বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যায়। ঘরে থাকা চাল-ডালসহ প্রয়োজনী কোন কিছু সরাতে পারেনি। আমরা বেঁচে আছি কি না তা কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।
বানভাসি করিম মিয়া বলেন, রাস্তায় পলিথিনের ছাপড়া ঘর তুলে আছি। কৃষি কাজ করতাম, বন্যার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আবার গরুর গো-খাদ্যে সংকটে আছি।

আরও জানায়, চারদিকে পানি, কোথাও যাবার জায়গা নেই। এখন সব কাজ বন্ধ। খুব কষ্টে দিন কাটছে। টিউবওয়েল ও টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া পোকা-মাকড় ও সাপের ভয়ে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না।

অর্জুনা ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এখন পর্যন্ত কাউকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দিতে পারেননি। এদিকে, বাসুদেবকোল এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি, বেশ কয়েকটি মসজিদ ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা এবার ভেঙে গেছে। বন্যার সময় তাদের জন্য নৌকাও প্রদান করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ছোট মনিরকে নিয়ে পরিদর্শনে যাব এবং এমপি ত্রাণ সহায়তা প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এসময়ে বানভাসিদের চলাচলের জন্য ইউএনও’র পরামর্শে ডিঙি নৌকা প্রদান করেছি। এছাড়াও যেসব এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙেছে সেগুলোতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছি। তবে, সরকারিভাবে কোন কিছু না পাওয়ায় কাউকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী দিতে পারেননি।

নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য আব্দুর করিম জানান, এখনো কাউকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া যায়নি। তবে, এমপি মহোদয়ের নির্দেশনায় পানিবন্দিদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য ১২ টি নৌকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সাধ্যমতো বানভাসিদের নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি।

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, আমার ইউনিয়নের খানুবাড়ী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ২০০ পরিবারের বসতভিটাসহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি ছিল। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আলম আকন্দ শাপলা জানান, যদিও পানি অনেকটা কমেছে গেছে। কিন্তু দুর্ভোগ বেড়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো ধরণের ত্রাণ সহায়তা পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: ইশরাত জাহান জানান, এখনো ত্রাণ পায়নি। ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করব।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোছা: নার্গিস আক্তার জানান, দু’একদিনের মধ্যেই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১