বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২

সপ্তাহ শেষেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার


চলতি সপ্তাহের পাঁচদিন ও আগের সপ্তাহের তিনদিন মিলিয়ে টানা আট কর্মদিবস পতন অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারে। জ্বালানি সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ সরকারের গৃহীত অন্যান্য সিদ্ধান্তের বিষয় জানানোর পর গত সোম ও মঙ্গলবার যে ধস নামে তা থেকে বুধবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও পতন রোধ হয়নি। শেষ কর্মদিবসেও সেটি অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শুরু থেকেই পতনমুখী বাজার দুপুর ১টার পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ১২ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ নিয়ে আট কর্মদিবসে সূচক পড়ল ২৪০ পয়েন্ট। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহেই সূচক কমেছে ১৯৭ পয়েন্ট। বুধবার সূচক গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছিল, সেটি আরো কমে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১২৬ পয়েন্টে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাশ্রয়ী নীতি ঘোষণা পুঁজিবাজারে পতন আরো বাড়িয়েছে। গত সোমবার প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে এবং এতেও সামাল দিতে না পারলে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং, সপ্তাহে একদিন পেট্রোলপাম্প বন্ধ, রাত ৮টার পর দোকান বন্ধের ঘোষণা আসে।

সেদিন থেকেই শুরু হয় আতঙ্ক। ৮৭ পয়েন্ট পতন হয় সূচকের। মঙ্গলবার আতঙ্ক এতটাই জেঁকে বসে যে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন আতঙ্কে আগের কর্মদিবসে লেনদেন যে পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল, অনেকটা সেখানে নেমে আসে। কোনো রকমে ৩০০ কোটির ঘর অতিক্রম করে। সেদিনও সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে গিয়ে শেষ বেলায় এসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। তবে এ পর্যন্ত ৬৩ পয়েন্টের পতন স্বস্তি দিতে পারেনি বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার হিসাব বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছরের পর বছর ধরে এটি বিএসইসির চাওয়া ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নিতে রাজি হয়নি।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই চিঠি পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা এতেও কোনো সাড়া দেয়নি। তবে আগের দুই দিনের তলানি থেকে লেনদেনের উঠে আসাটা একটি ইতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখা যায়। বুধবারের পর গতকালও লেনদেন ৬০০ কোটির ঘর অতিক্রম করে।

 

দিনভর হাতবদল হয়েছে ৬৭৬ কোটি ৯৩ লাখ ৪১ হাজার টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা বেশি। গত সোম ও মঙ্গলবার প্রায় সাড়ে ৩০০টি করে কোম্পানির শেয়ারদর হারাতে দেখা যায়। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছু বেশিসংখ্যক শেয়ারের দর বাড়তে দেখা গেল। তবে দর বৃদ্ধির তুলনায় পতনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

গতকাল ১১৫টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১৯টির দাম। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৪৭টি কোম্পানির শেয়ার। লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যার কারণে পুঁজিবাজারে যে ফান্ড ইনজেক্ট হবে তার সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় কোম্পানির উৎপাদন কমে যাবে। মুনাফায় প্রভাব পড়বে। এসব চিন্তা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে না। এখন সবাই চাইবে হাতে টাকা রাখতে। ফলে বিনিয়োগ না হওয়ায় পুঁজিবাজারে এমন পতন দেখা যাচ্ছে।

গতকাল সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে এস আলমের স্টিলসের শেয়ারের। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩ টাকা বা ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। গত ১১ মে থেকে কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি শুরু হয়। ওই দিন ২৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি ১৫ জুনে গিয়ে ঠেকে ৩৬ টাকা ৬০ পয়সায়। এরপর কিছুটা ওঠানামার মধ্যে দিয়ে আজ সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সায়।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ দর বেড়েছে প্রাইম টেক্সটাইল মিলসের। ৪১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে সর্বশেষ ৪২ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার। ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৬২ পয়সা লোকসান দেওয়া কোম্পানিটি পরের বছর মুনাফায় ফিরেছে। ৬২ পয়সা শেয়ারপ্রতি আয়ের বিপরীতে লভ্যাংশ দিয়েছে ২০ পয়সা। আগের বছর লোকসান হলেও ১০ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানি।

দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি। কোম্পানির শেয়ারদরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থামছে না। গতকাল শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। ধারাবাহিক লোকসানে থাকা কোম্পানিটিকে ২০১৭ সালে শেয়ার প্রতি ৬৯ টাকা ৫৫ পয়সা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এর পর আর কোনো তথ্য নেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে নিউ লাইন ক্লোথিংস, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ইয়াকিন পলিমার, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, এইচআর টেক্সটাইল, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ।

এদিকে, সবচেয়ে বেশি দর কমেছে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের। সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ ২ শতাংশ দর কমে শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪৪ টাকা ১০ পয়সায়। বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানের মাধ্যমে এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করলেও গত ৭ জুন থেকে কোম্পানির শেয়ারদর কমছেই।

দর কমার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস। ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর কমে এক হাজার ৯৫৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে এক হাজার ৯১৮ টাকা ৬০ পয়সায় শেয়ার হাতবদল হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি ভালো মুনাফায় থাকলেও গত চার কর্মদিবস এর দর কমে লেনদেন হলো।

একই সমান দর কমে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দুই কর্মদিবস দর কমে শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৮১ টাকা ৬০ পয়সায়।

তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইস্টার্ন ক্যাবলস, পেপার প্রসেসিং, শ্যামপুর সুগার মিল, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, জেনেক্স ইনফোসিস ও ইমাম বাটন।

জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৬১ পয়েন্ট সূচক কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ৯৩ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমিয়েছে তিতাস গ্যাস। এদিন কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পাওয়ার গ্রিডের দর ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৪ দশমিক ০১ পয়েন্ট।

এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, বিকন ফার্মা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইএফআইসি, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও আরএকে সিরামিকসের দরপতনে সূচক কমেছে। সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৪০ দশমিক ০৯ পয়েন্ট।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি ১৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে রবি। কোম্পানিটির দর ১ দশমিক ৬০ শতাংশ দর বেড়েছে। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের দর ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। গ্রামীণফোন সূচকে যোগ করেছে ৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ।

 

এ ছাড়া ওয়ালটন হাইটেক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, বার্জার পেইন্টস, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো সুকুক ও ট্রাস্ট ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট।

 

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১