• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
'সময় এখন তাহাদেরই'

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া

'সময় এখন তাহাদেরই'

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ জুন ২০১৯

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঘোষিত বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ-সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। তিনি বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে লেখা দেখা গেছে, ‘সময় এখন আমাদের : সময় এখন বাংলাদেশের’। আবার বছর খানেক আগে টিভির পর্দায় একটি পণ্যের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট হিসেবেও শোনা গেছে, ‘সময় এখন আমাদের’। আসলে সময় এখন ‘তাহাদের এবং একমাত্র তাহাদেরই’।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সরকারের আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আনুষ্ঠানিক দলীয় প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি আরো বলেন, সময় যে এখন শুধু তাহাদেরই, তা বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। বাজেটের শিরোনাম থেকেই উন্নয়নের ‘গীত’ প্রকৃষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই তথাকথিত উন্নয়নের ‘গীত’ আর মানুষ শুনতে চায় না। কর আর দ্রব্যমূল্যের চাপে ভোক্তা সাধারণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। আয়-বৈষম্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি জনগণ এখন আর উন্নয়নের মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মন্তব্য করে বিএনপি অভিযোগ করেছে, বাজেটের আকার দিন দিন বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবিরোধী বলেও দাবি করেছে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রী পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট বৃদ্ধির এ প্রগলভ্তা বছর শেষে চুপসে যেতে দেখা যায়। এ বাজেট নিয়ে জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কেননা প্রত্যেক বছর বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাটছাঁট করা হয় তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তঃসারশূন্যতাই প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন, এ বাজেট জনগণের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গেছে। এটা গণবিরোধী বাজেট। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একইভাবে বাজেটও দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, চলতি বছর বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাজেটের আকার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বর্তমান বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এ হিসাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত করের পরিমাণ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সিংহভাগই ধরা হয়েছে এনবিআর থেকে। অথচ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় বেশ ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর এবার আরো বড় আকারের আদায়ের পরিকল্পনা। এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাতে ঘাটতি বরং আরো বাড়বে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআর আদায় করতে পেরেছে এক লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি তিন মাসে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হয় কি না সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে যা নেতিবাচক বলেই মনে হয়। তা ছাড়া মোট রাজস্বের মধ্যে বড় অংশ হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক আইন ২০১২ কার্যকর করা হবে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর থাকবে পাঁচটি। এই স্তরভিত্তিক ভ্যাট হার অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা রেয়াত নিতে না পারলে এটি আবগারি শুল্কের মতো হয়ে যেতে পারে। রেয়াতের টাকা কীভাবে দেওয়া হবে সেই বিষয়ে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন আইনে ব্যবসায়ীরা রেয়াত চাইতে শুরু করলে সরকারকে নিজের পকেটের টাকা দিতে হবে। এ জন্য বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। এভাবে নতুন আইনটি কার্যকর হতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।

সরকারের পক্ষে যদি ভ্যাটের রেয়াতের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে ভ্যাট কার্যত আবগারি শুল্কে পরিণত হবে। এতে করের ওপর আবার কর আরোপ হবে। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম সাড়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে; যার চাপ পড়বে সম্পূর্ণ ভোক্তার ওপর। ভ্যাট মূলত ভোক্তা পরিশোধ করে, যা বিভিন্ন স্তরে মূল্য সংযোজনের প্রেক্ষিতে রেয়াতের মাধ্যমে সমন্বিত হয়ে ভ্যাট প্রদানকারীকে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু এই রেয়াত দেওয়ার কোনো সংস্কৃতি এ দেশে গড়ে ওঠেনি। ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads