• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিএনপি

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুন ২০২১

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিভিন্ন সময় রাজনৈতিকভাবে সীমিত পরিসরে সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দলটি। সর্বশেষ চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার জোর দাবি তোলেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু কার্যত জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে দলের একাধিক নেতাকর্মীও এমনটি মনে করেন।

গত দেড় মাস ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে বলে একাধিক বিবৃতি-সংবাদে জানান দলের শীর্ষনেতারা। অবশ্য বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টিকে প্রতিবারই ‘পারিবারিকভাবে’ দেখা হচ্ছে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে মোকাবিলা করতে দলগতভাবে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়েও যেমন কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি, তেমনি সাংগঠনিকভাবেও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কাজে লাগাতে সমর্থ হয়নি।

নেতারা জানান, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে খালেদা জিয়ার করোনা আক্রান্তের খবরে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে দোয়া-দরুদে মনোযোগ দিয়েছেন, তার আগে দলীয় প্রধানের মুক্তির প্রশ্নে ততটাই নিষ্ক্রিয়তা দেখান তারা। ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঝটিকা বিক্ষোভ কর্মসূচি দেখা গেলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর দলটির সব কর্মসূচিই ছিল ভার্চুয়াল।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলের আইনজীবীদের মতো খালেদা জিয়ার মুক্তি ও স্বাস্থ্য প্রশ্নে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যেমন মুখ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি, একইভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ ফরেন রিলেশন্স কমিটিও দলীয় প্রধানের প্রশ্নে দেশের বাইরের কোনো বন্ধুরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক ব্যক্তি-সংগঠনকে যুক্ত করতে পারেনি।

ফরেন উইংয়ের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, কোভিড বাস্তবতায় বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকের কোনো সুযোগ না থাকায় ওয়ান-টু ওয়ান বৈঠকে কোনো কোনো নেতা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ইস্যুতে কথা বলেছেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তারের পর কয়েক দফায় ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হলেও গত বছরের মার্চ থেকে সেই সুযোগ আর হয়নি।

ফরেন উইংয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ, ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের ঢাকাস্থ কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয় এবং তারা খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনা করে চিঠিও দিয়েছেন। তবে এই উইংয়ের আরেক সদস্য বলেন, কার্যকর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি ফরেন উইং।

স্থায়ী কমিটি ও ফরেন উইংয়ের একজন সদস্য বলেন, গোটা পৃথিবীর আন্তর্জাতিক রাজনীতি আগের জায়গায় নেই। পরাশক্তি দেশগুলো এখন যে প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে, তাতে এ ধরনের ঘটনাকে তারা কীভাবে দেখবে, তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, নেতাদের কেউ কেউ তো বরাবরই শীর্ষ নেশধত্বকে  বোঝান যে বিভিন্ন দেশে তাদের যোগাযোগ আছে, বন্ধু আছে; কিন্তু এই সময়ে তো তার কোনো বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি।

ফরেন রিলেশন্স কমিটির টিম লিডার ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দলীয়ভাবে প্রত্যেক দিন ম্যাডামের চিকিৎসার বিষয়টি বলা হচ্ছে। সেক্রেটারি জেনারেল, দলের স্থায়ী কমিটি ও অন্য নেতারাও বিষয়টিকে প্রতিদিন তুলে ধরছেন। এখন তো দেখছি, আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। চিকিৎসার জন্যও আন্দোলন করতে হবে। পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় গেছে, পড়াশোনার জন্যও আন্দোলন করতে হবে।’

আমীর খসরু আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বলা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও একজন সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী। আ স ম রব সাহেবকে জেল থেকে সরাসরি জার্মানে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের সরকার। সরকারের লোকজন নিয়মিত দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যায়।’

দলের একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর স্থায়ী কমিটির অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার মায়ের বিষয়টি নিজে ও পারিবারিকভাবে হ্যান্ডেল করা হচ্ছে বলে জানান। আর এ কারণেই দায়িত্ব দেওয়া না হলে আগ বাড়িয়ে কোনো নেতাই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়টিতে যুক্ত হননি। যে কারণে নেতারা, এমনকী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বারবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিকিৎসার বিষয় এবং বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া সবই পরিবার দেখছে।

জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপরসন গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ৩ মে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। ওই সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি দলের প্রধানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার নেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করেন। এরপরই আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারো কথাই শুনবেন না। তিনি যা বুঝবেন, তাই করবেন। এই সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের কাছে কোনো দাবিই মুখ্য নয়।’ বিএনপির প্রবীণ এই নেতা আরো বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে অনুযোগ ও অভিযোগ দিয়েও লাভ হবে না। শেখ হাসিনা কারো কথাই শুনবেন না। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক চাপ, যেটা বিএনপিকে সৃষ্টি করতে হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads