• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

রাজনীতি

আমলাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কৌশলী আওয়ামী লীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ জুলাই ২০২১

দেশে সম্প্রতি নানা ইস্যুতে আলোচনায় আসা আমলাদের নিয়ে কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবশ্য সরকারের দায়িত্বশীলরা আমলাদের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক দেখছে। ভিন্ন দৃষ্টি দলের অন্য নেতাদের। 

গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আমলাদের নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যারা এ জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নাই যিনি এ করোনাকালীন নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। মাফ করবেন, কথাটা বলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানি না। এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন।’

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাঠে যান না-এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিজ জেলা ভোলায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক না। এটা একটা রাজনৈতিক সরকার। রাজনীতিবিদদের যে একটা কর্তৃত্ব বা কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে (রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রম) এমপিরা সচিবদের ওপরে। বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে।’

গত ২৯ জুন সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার শেষ দিন ছিল। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সূত্র ধরে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাজেট নিয়ে বিরোধী দলের সদস্য, আমাদের এমপিরা... বাইরেও অনেকে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তারা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। বোধ হয় উপলব্ধিটা তাদের নেই। তবে তারা বিষয়টি বুঝবেন, এটা প্রত্যাশা করি।’

এদিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘রিলিফের কাজ তো সবসময় প্রশাসন ও লোকাল গভর্নমেন্ট করে। এমপি-সাব (সংসদ সদস্য) নিজের একটা-দুইটা ইউনিয়নের কথা বলতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে কে রিলিফ পেতে পারেন, সেটা মেম্বার বা এলাকার নেতারা জানতে পারেন। তাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে তা আছে। তারা তালিকা করেন। সেটা ইউনিয়ন হয়ে উপজেলায় পাস হয়। তারপর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিতরণ (রিলিফ/ত্রাণ) হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’ 

রাজনীতিতে আমলাদের প্রাধান্য বেড়েছে-এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমলারা তাদের যেটুকু কাজ তা-ই করছেন। করোনার কারণে রাজনীতি নেই, মিছিল-মিটিং হয় না। সভা-সমাবেশ, সম্মেলনও বন্ধ। ফলে রাজনীতিবিদরা ভিজিবল (দৃশ্যমান) নন। এ কারণে মূলত রাজনীতিতে আমলাদের প্রাধান্য বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।’

আমলাদের কর্মপরিধি নিয়ে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তাদের কর্মপরিধি নিয়ে আমি এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টি নিয়ে কাউকে ইস্যু তৈরির সুযোগ দেওয়াও ঠিক হবে না। যদি বলতে হয় আরো পরে বলব। এখন যারা এ বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের জিজ্ঞাসা করুন।’

বিষয়টিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গত ২৯ জুন সচিবালয়ে এক সরকারি কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জেলাপর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। খাদ্য বিতরণ ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড বজায় রয়েছে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। ইউএনও, ডিসিরা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। মানুষ আরো সাহসী হচ্ছেন। কোনো শ্রেণি-পেশার মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি এখন এমপি। প্রশাসন পরিচালনা করি না। কাজেই এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। আমার কথা হলো সুচের কাজ সুচ করবে। সুতার কাজ সুতা। এটাই হলো নিয়ম। প্রধানমন্ত্রীও সেটা বলেন। শুধু কাপড় হলে তো কাফন হয়ে যায়। সুঁই, সুতারও দরকার পড়ে।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, রাজনৈতিক নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে, এটা নয়। জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাজ করবেন। এতে মর্যাদাহানি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সব জায়গাতেই আমরা আমলাদের দেখি। তারাই আসল, অন্যরা সব গৌণ হয়ে যায়। এটা যখন বেশি হয়ে যায় তখনই স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হয়। আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব থাকবে। তাদের দায়িত্ব থাকবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই, বিশেষ করে গণতন্ত্রে।’

জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ আইন, নীতি, বিধি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন, তদারকি করবেন এবং সংসদের মাধ্যমে জনগণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। মাঠে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে প্রশাসন। রাজনৈতিক সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সচিবগণ জেলায় জেলায় করোনা ও ত্রাণের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। সচিবগণ সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন। এতে রাজনীতিবিদদের কোনোভাবেই ছোট করা হয়নি। বরং মহামারির সময় কাজের গতি আরো ত্বরান্বিত হয়েছে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads