• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

ইউপি নির্বাচন

অপকৌশলে নৌকার পরাজয়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পাশাপাশি সরকারি বিরোধী পক্ষের অপকৌশলের কারণে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হচ্ছেন। এমনটিই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরাতে নৌকার প্রার্থীদের হারাতে ষড়যন্ত্র চলছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন মহল এতে যুক্ত বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। আর সাধারণ নেতাকর্মীদের ধারণা, বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলেই নৌকার অনেক প্রার্থী হেরে যাচ্ছেন।

তবে নীতি-নির্ধারকরা নেপথ্যে শুধু একটি কারণ আছে বলে মানতে নারাজ। তাদের দাবি, প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরাতে নানা কূটকৌশলে নৌকার প্রার্থীকে হারাতে মাঠে নেমেছে। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দশ বছরে আওয়ামী লীগের হারার নজির খুব কম। নেতাকর্মীদের ভেতর এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করতেই প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলো একাট্টা হয়েছে। তাই প্রথম ধাপের নির্বাচনে নৌকার জয়জয়কার থাকলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকার হেরে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, এটা দলের জন্য খারাপ নজির সৃষ্টি করছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো দাবি করছেন, দলের অভ্যন্তরে একটি বঞ্চিত গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে গত এক দশকে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ‘পকেট লীগ’ সৃষ্টি হয়েছে। আছে সুবিধাবাদী পক্ষও। বলয়ভিত্তিক রাজনীতির চর্চাও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সুতরাং কেন্দ্র-ঘোষিত প্রার্থী পছন্দ না হলেই নৌকাকে হারাতে একজোট হয়ে যায় সবাই।

নৌকার এই পরাজয় ঠেকাতে এবার তাই ভিন্ন কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অনেক ইউপিতে এবার দলীয় নৌকা প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে কিশোরগঞ্জের হাওরের তিন উপজেলার ২৪ ইউনিয়নে থাকছে না আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। ফলে ইউনিয়নগুলোতে উন্মুক্ত থাকছে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা। গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জ্যেষ্ঠপুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

তিনি জানান, চলমান ইউপি নির্বাচনে দেশের কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতা দেখা দিয়েছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪ এর তিন উপজেলার ২৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার অনুরোধ জানাই।

জানা গেছে, পঞ্চম ধাপে আগামী ৫ জানুয়ারি মিঠামইন উপজেলার ৭টি ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। মিঠামইন উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন হলো গোপদিঘী, মিঠামইন, ঘাগড়া, ঢাকী, কেওয়ারজোর, কাটখাল ও বৈরাটি। অষ্টগ্রাম উপজেলার ৮ ইউনিয়ন হলো দেওঘর, কাস্তুল, অস্টগ্রাম সদর, বাংগালপাড়া, কলমা, আদমপুর, খয়েরপুর আব্দুল্লাপুর ও পূর্বঅষ্টগ্রাম। ইটনা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেও ভোট হবে। ইটনা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন হলো রায়টুটি, ধনপুর, মৃগা, ইটনা, বড়িবাড়ী, বাদলা, এলংজুড়ি, জয়সিদ্ধি ও চৌগাংগা। তবে এই এলাকার নির্বাচনি তফসিল এখনো ঘোষণা হয়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের অসন্তুষ্ট নেতাকর্মীদের উসকে দিয়ে তাদেরকে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়ে দিচ্ছে। এতে বিদ্রোহী নির্মূলে কঠোর অবস্থান নিয়েও সুফল পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো আরো জানায়, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে অল্প কিছু জায়গায় ভুল প্রার্থী মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছে এটাও নৌকার পরাজয়ের একটি কারণ।

ভোটাররা বলছেন, দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোট হলে ভালো প্রার্থীরাও নির্বাচনে দাঁড়াতে সুযোগ পাবে। এতে সংঘাত, কলহ বিবাদ অনেকটাই কমে আসবে। প্রার্থী বেশি হলে ভোটাররা যোগ্য লোক বেছে ভোট দিতে পারবেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল হাসান শাহজাহান বলেন, হাওরের তিন উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের। দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিত। তাই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার সিন্ধান্ত হয়েছে। এতে করে দলীয় সংঘাত কমে আসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads