• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
পাল্লেকেলেতে ভুল নয় ছিল বোকামি

সংগৃহীত ছবি

ফুটবল

পাল্লেকেলেতে ভুল নয় ছিল বোকামি

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দল পাল্লেকেলেতে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা গেছে, পাল্লেকেলের পিচ ছিল ব্যাটিং সহায়ক। দুই দলের প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় দেখে তো সেটাই মনে হওয়ার কথা। কিন্তু এমন পিচেও জয়লাভের একটা সুযোগ নিতে পারত টাইগাররা। অথচ জয়লাভের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেননি মুমিনুল বাহিনী। এই বিষয়টিকে ভুল বলা না হলেও বোকামি বলতেই হবে। 

২১ এপ্রিল প্রথম দিন বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৩০২ রান। দারুণ বিষয়। দেশের বাইরে এমন সুন্দর সূচনা বাংলাদেশের ২১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে। ৮ উইকেট হাতে থাকা মানে বিশাল ব্যাপার। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ঠিক টেস্ট স্টাইলে না খেলে ওয়ানডে স্টাইলে খেলা উচিত ছিল। তাহলে দ্বিতীয় দিনের খেলাশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয়তো ৬০০ রান অতিক্রম করতেও পারতো। যদিও দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টি বাধা সৃষ্টি করে। আর ক্রিকেটের সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক যে অনেক গভীর, সেটা সকলেরই জানা। তাই বৃষ্টিতে যে ম্যাচের স্বাভাবিক গতিতে বিঘ্ন ঘটাবে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দুটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার। এখানকার আবহাওয়ার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই, সেটাও মাথায় রাখা দরকার ছিল টাইগারদের। আর এ সময়ের বৃষ্টি যে খুব কম স্থায়ী হয়, সেটারও প্রমান মিলেছে পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচে। ২২ এপ্রিল দ্বিতীয় দিনের শেষে এবং ২৫ এপ্রিল পঞ্চম দিনের শেষে খানিক বৃষ্টি হয়েছে। যাইহোক, বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনে একেবারেই স্লো রান তুলেছে। টেস্ট মানেই যে ওভারে ২-৩ রান করতে হবে, সেটা কিন্তু নয়। স্লো রান তোলা ছিল বড় ধরনের বোকামি। আবার তৃতীয় দিনেও বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমসহ সকলেই সেই ভুলটির পুনরাবৃত্তি ঘটান। লিটন দাস ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করলেও মুমিনুল ও মুশফিকরা ব্যাট হতে খেলেছেন সেই টেস্ট স্টাইলে। অথচ তৃতীয় দিন ব্যাটসম্যানদের খেলা উচিত ছিল টি-টোয়েন্টি স্টাইলে। তাহলে বাংলাদেশের রান ৬০০ অতিক্রম করা কোনো কঠিন বিষয়ই হতো না। যেখানে উইকেট ছিল হাতে, সেখানে ধীর গতিতে রান নেওয়ার কোনোই যুক্তি নেই। এখানেই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড কিংবা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য।

শ্রীলঙ্কা যখন প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামে, তখন নিশ্চয়ই পিচের অবস্থা প্রথম দিনের মতো ছিল না। তাই লঙ্কানদের ব্যাটিং শুরু হলে সব বোলারদের পরীক্ষা করতে পারতেন মুমিনুল। কিন্তু দেখা গেল, বিশেষজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলামকে অনেক পড়ে বোলিং আক্রমণে আনেন অধিনায়ক। অথচ বিশেষজ্ঞ স্পিনার যারা নন, তাদেরকেই তিনি প্রথম দিকে বেশি ব্যবহার করেন। এখানে অবশ্য তারও দোষ নেই। আমাদের দেশে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করা হয় না। টেস্ট ক্রিকেট যে সবচেয়ে কঠিন ও ব্যাকরণী খেলা, সেটার ধারণাও তো দেওয়া হয়নি আমাদের ক্রিকেটারদের। মুমিনুল লঙ্কানদের ইনিংসে মোট ৭ জন বোলার ব্যবহার করলেও কাকে আগে কাকে পরে আনলে ভালো হতো, সেটা খুব খুব একটা বুঝতে পারেন নি। যদি তিনি বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতেন, হয়তো সুফল পেতেও পারতেন। এখানেও ছিল বাংলাদেশের আরেক বোকমি। ফলে তৃতীয় দিনেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ম্যাচটি ড্রর পথে এগুচ্ছে। তারপরও স্বাগতিক দল তাদের ইনিংসের শেষ দিকে দ্রুত রান নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করতে সক্ষম হয়।

ব্যাটিং পিচ ছিল পাল্লেকেলেতে। যেখানে বাংলাদেশ দল ১৭৩ ওভারে ৭ উইকেটে করে ৫৪১ রান (গড়ে ৩.১২), সেখানে শ্রীলঙ্কা ১৭৯ ওভারে ৮ উইকেটে করে ৬৪৮ রান (গড়ে ৩.৬২)। ওভার প্রায় সমান, কিন্তু রান গড়ের পার্থক্য .৫০। আর রানের পার্থক্য ১০৭। আরো লক্ষণীয় বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাটিং করে প্রথম দুই দিন পিচ ভালো থাকা অবস্থায় আর শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং করে তৃতীয় ও চতুর্থ দিন পিচ নষ্ট হয়ে যাওয়া অবস্থায়। পিচ বুঝে ব্যাটিং না করাও এক ধরনের বোকামি।

বাংলাদেশ দল ড্র করেছে, টেস্ট পয়েন্ট ২০ পেয়েছে, তার বিদেশের মাটিতে। সবমিলে অবশ্যই মন্দ নয়। কিন্তু বোকামিগুলো না করলে হয়তো ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয়লাভের একটা চেষ্টা করতে পারত। নয়তো ম্যাচটির আকর্ষণ আরো বাড়াতে সক্ষম হতো। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ওই বোকামিগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads