• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ফুটবল

জিদানের খোলা চিঠি

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০২১

আবারো রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব ছাড়লেন জিনেদিন জিদান। কিন্তু কেন? এ নিয়ে ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই। তবে তার সমর্থকদের সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এ কোচ। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসে খোলা চিঠি লিখেছেন এ ফরাসি। বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো। 

প্রিয় মাদ্রিদিস্তারা,

২০ বছর আগে যখন প্রথম রিয়ালে এসেছিলাম, জার্সিটা গায়ে চড়িয়েছিলাম, তখন থেকেই আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি। আমার সব সময় মনে হয়েছে আমাদের মধ্যে বিশেষ কিছু একটা রয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ক্লাবের খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে আমি পেয়েছি দারুণ সম্মান। তবে সবকিছুর পর আমি মাদ্রিদের একজন ভক্ত। সেসব কিছুর কারণে আমি চিঠিটা লিখছি, আপনাদের বিদায় জানাতে এবং বেঞ্চ ছাড়ার সিদ্ধান্ত আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে।

২০১৯ সালে আমি যখন আট মাসের বিরতির পর আবার যখন মাদ্রিদে ফেরার প্রস্তাবটা গ্রহণ করলাম, তখন শুধু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ চেয়েছিলেন বলে নয়, আপনারাও চেয়েছিলেন বলে আমি ফিরেছিলাম। রাস্তায় যখন আমার আপনাদের একজনের সঙ্গে দেখা হতো তখন আপনাদের সমর্থন পেতাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনারা আবার আমাকে চাইছেন। রিয়ালের মূল্যবোধটা আমি নিজে ধারণ করি। এই ক্লাবটা তার মেম্বার, ভক্ত সমর্থক ও পুরো বিশ্বের। সে জন্য এই মূল্যবোধ নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করেছি, দৃষ্টান্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। মাদ্রিদে ২০ বছর থাকা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপার। কিছু লোক বিরোধিতা করলেও ২০০১ থেকেই ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন সেটা অনেক বড় ব্যাপার। সেজন্য আমি হূদয় থেকে বলছি, আমি প্রেসিডেন্টের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

এখন আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি কারণগুলো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই। আমি চলে যাচ্ছি, তবে আমি নৌকা থেকে লাফ দিচ্ছি না বা কোচিং করাতে করাতে ক্লান্তও নই। মে ২০১৮ সালে আড়াই বছর পর যখন আমার অনেকগুলো ট্রফি হয়ে গিয়েছিল তখন আমি যখন আমি চলে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ক্লাবটি শীর্ষ পর্যায়ে থাকতে নতুন নির্দেশনা দরকার। আজ বিষয়টা আলাদা। আমি চলে যাচ্ছি, কারণ আমার মনে হয়েছে, ক্লাব আমার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়েছে, মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদে চলার জন্য যে সমর্থন দরকার সেটাও আমি ক্লাব থেকে পাচ্ছি না। আমি ফুটবল বুঝি, মাদ্রিদের মতো ক্লাবের চাহিদা কী জানি। আমি জানি যখন আপনি জিতবেন না আপনাকে চলে যেতে হবে। তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা সবাই ভুলে গেছে, সবকিছুই ভুলে গেছে আমি কীভাবে দলকে তৈরি করেছি। খেলোয়াড় ও ক্লাবের আরো প্রায় ১৫০ জন লোকের সঙ্গে আমি যে সম্পর্ক তৈরি করেছি সেটাও ভুলে গেছে। আমি জন্মগত বিজয়ী এবং এখানে ট্রফি জিততে এসেছি। কিন্তু এখানকার মানুষগুলো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অনুভূতি, জীবন; এসব অনেক সময় বিবেচনায় নেওয়া হয় না বলে আমার মনে হয়েছে। কিন্তু একটা গ্রেট ক্লাবের জন্য এই ব্যাপারটা বোঝা জরুরি। এমনকি এটা নিয়ে কথা বলার জন্য আমাকেও তিরস্কার করা হয়েছে।

আমরা একত্রে সবাই যে অর্জন করেছি তার সম্মান আমি প্রাপ্য। আমি আশা করেছিলাম, গত কয়েক মাসে ক্লাব ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অন্য সব কোচ থেকে আলাদা হবে। আমি কোনো সুবিধা আশা করিনি, অবশ্যই না। আজকাল বড় ক্লাবের ডাগআউটে কোচদের আয়ু থাকে দুই মৌসুমের মতো, এর বেশি নয়। এর চেয়ে বেশি সময় থাকতে হলে মানবিক সম্পর্কটা দরকার। টাকা, ক্ষমতা বা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়েও এটা বেশি জরুরি। আপনাকে অবশ্যই এসবের যত্ন নিতে হবে। সে জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছিল যখন আমি সংবাদ পড়ি যে আর একটা ম্যাচ হারলেই আমাকে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হবে। এটা আমাকে ও পুরো দলকে আহত করেছে কারণ ইচ্ছে করে মিডিয়ায় এ রকম নেতিবাচক কিছু বার্তা ফাঁস করা হয়েছে, যেটা আরো বেশি সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছে। আমার ভাগ্য ভালো যে, আমার এমন একটা স্কোয়াড ছিল যারা আমার জন্য জীবনও দিতে পারে। যখন ব্যাপারগুলো বাজে হয়ে যাচ্ছিল তারা দারুণ জয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে। তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে, আমিও তাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। অবশ্যই আমি বিশ্বের সেরা কোচ নই, তবে খেলোয়াড়, মেম্বার, কোচিং স্টাফ বা রিয়ালের যে কারো যে শক্তি আর আত্মবিশ্বাস দরকার, সেটা আমি দিতে পারি বলেই মনে করি। আমি জানি দল কী চায়। মাদ্রিদে ২০ বছরে আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি ভক্তরা সব সময় জয় চায়, কিন্তু তার আগে কোচ, স্টাফ, খেলোয়াড়সহ সবাইকে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। আমি নিশ্চিত করতে পারি, সেই শতভাগ আমি দিয়েছি।

এই সুযোগে আমি সাংবাদিকদেরও একটা কথা বলতে চাই। আমি শত শত সংবাদ সম্মেলন করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে ফুটবল নিয়ে খুব কমই কথা হয়েছে। আমি জানি আপনারা ফুটবল ভালোবাসেন, এই খেলাটাই আমাদের একত্রে রেখেছে। কিন্তু কোনো সমালোচনা না করে কিংবা উপদেশ না দিয়ে বলতে চাই, খেলাটা নিয়ে হয়তো আমরা আরো বেশি কথা বলতে পারতাম, কারণ দিন শেষে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চলেন ফুটবলকে ভুলে না যাই। এই ফুটবলের যত্ন নেই।

মাদ্রিদিস্তারা, আমি সব সময়ই আপনাদের একজন ছিলাম, থাকব।

চল মাদ্রিদ!

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads