• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নারী ফুটবলেই আশার আলো

ফাইল ছবি

ফুটবল

নারী ফুটবলেই আশার আলো

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২১

পুরুষ ফুটবলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ খুব বেশি হলে এক/দুই গোলে জিততে পারে নয়তো ড্র করতে পারে অথবা ভাগ্য খারাপ থাকলে পরাজয়বরণ করে মাঠ ছাড়বে। অথচ এবারের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। এছাড়া দেড়শ কোটি মানুষের দেশ ভারতকে লিগপর্বে ১-০ গোলে হারিয়েছে। এটা নারী ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বললে ভুল বলা হবে না।

নিজেদের মাঠ বলে নয়, আসলেই বাংলাদেশ নারী দল চমৎকার খেলেছে। ছোট ছোট পাস, বল রিসিভিংয়ে দক্ষতা, দূরপাল্লার শটে গোল করা, মাঠজুড়ে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখা, পুরো নব্বই মিনিট স্টেমিনা বজায় রেখে খেলা চালিয়ে যাওয়া, গোলের পর গোল করেও গোলের নেশা অক্ষুণ্ন রাখা, বেশি ফাউল না করে পরিচ্ছন্ন খেলা উপহার দেওয়া ইত্যাদি নানা রকমের ইতিবাচক বিষয় লক্ষ্য করা গেছে আঁখি বাহিনীর মধ্যে। এই যে বিশাল সাফল্য, নিশ্চয়ই কম বড় নয়। কিন্তু আমরা কি নারীদের এই সাফল্যকে ধরে রাখতে সক্ষম হবো? বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কি নারীদের জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? নাকি নারীদের ফুটবল সাফল্যকে পুঁজি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেবে?

বাংলাদেশে নারী ফুটবলের প্রডি সুদৃষ্টি কখনোই ছিল না। অনেকেই মনে করে নারীদের ফুটবল খেলা মানায় না শারীরিক শক্তির স্বল্পতার কারণে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কিংবা অন্যরা হয়তো মনে করে, পুরুষ দল যেখানে কিছু করতে পারছে না, সেখানে নারীরা কীইবা বয়ে আনবে। আসলে এটা মূর্খতার পরিচায়ক। নারীরা নারীদের জায়গায়, পুরুষরাও তাদের নিজেদের জায়গায় রয়েছে। আবার সন দেশ সব খেলাতে ভালো করেও না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মহিলা ফুটবলে বিশ্বের সেরা দুটি দল, কিন্তু পুরুষ ফুটবলে তারা পাত্তাই পায় না। ফলে ওই দুই দেশে নারী ফুটবলকে অনেক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নারী দল ফুটবলে শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রমাণ করেছে, সুযোগ পেলে তারা দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম। আসলে নারীরা ফুটবলে সঠিক পরিচর্যা পেলে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারতো। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ এক ম্যাচে ১৮-০ গোলে পাকিস্তান দলকে পরাজিত করেছিল। ওই আসরই এখন অনূর্ধ্ব-১৯ নামে পরিচিত। যাক তিন বছর আগের ওই সাফল্যের পর নারীদের জন্য অনেক বেশি সুব্যবস্থা করার দরকার ছিল, যদিও আমাদের কর্মকর্তারা সেটা করেননি। হয়তো ভেবেছেন, নারীরা অঘটন ঘটিয়েছে, বেশি দূর এগুতে পারবে না। কিন্তু দুই বছর আগে ১৮-০ গোল আর এবার ১২-০ গোলে জয়লাভ কিন্তু একটা কথাই প্রমাণ করেছে যে, সুযোগ সুবিধা একটু বাড়িয়ে দিতে পারলে নারী ফুটবল দল শুধু অঘটন ঘটাতে পারবে তা নয়, বাংলাদেশকে বিশাল সম্মান এনে দিতেও সক্ষম হবে।

নারী ফুটবলে আশার আলো জ্বালিয়েছে আঁখিরা। গোলাম রাব্বানী ছোটনের অসাধারণ কোচিংয়ে কিশোরীরা যে স্নপ্নের বীজ বপন করেছে, তাকে লালন-পালন করলে শুধু সাফ অঞ্চলেই নয়, এশিয়ান পর্যায়েও বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। তবে এর জন্য পুরুষদের জন্য যতটা দায়িত্ব পালন করেন কর্মকর্তারা, তার অন্তত ৫০ শতাংশও নারীদের জন্য করা উচিত।

বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল দিনে দিনে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপদের তাালিকায় চলে গেছে। এখন সেই তালিকারও সর্বশেষ স্থানে নেমে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। যারা নতুন নতুন ফুটবলে নাম লেখাচ্ছে, তারাও বাংলাদেশকে হুমকি দিচ্ছে মাঠের লড়াইয়ে। বাংলাদেশ তেমনই এক দল সিসেলাশকেও হারাতে পারেনি। সেখানে ঠিক তার উল্টোটা লক্ষ করা যাচ্ছে নারীদের বেলায়। ফুটবলে নতুন বা দুর্বল দেশ শ্রীলঙ্কা, ভুটানরা পাত্তাই পাচ্ছে না আঁখিদের কাছে। তাই নারী ফুটবল দল এখন অনেক কিছুই লাভের অধিকারী।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads