ঢাকায় বীরোচিত সংবর্ধনা পেল সাফ জয়ী নারী ফুটবল দল। গতকাল বুধবার বিমানবন্দরে অবতরণের পর গোটা দলকে কেক খাইয়ে ফুলের মালা পরিয়ে তাদের বরণ করেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। কেক কেটে অধিনায়ক সাবিনা, কোচ ছোটন, ওমেন উইং এর চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনকে এ সময় কেক খাইয়ে দেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এর পর তাদের পরিয়ে দেওয়া হয় ফুলের মালা।
ছাদখোলা ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাস। ইতিহাস গড়া নারী ফুটবলারদের নিয়ে ছুটে চলছে। আর বাঘিনীদের হাতে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের এই স্বর্ণকন্যাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। মেয়েরাও এই আবেগ ও ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন হাত নেড়ে। এ এক চোখ জুড়ানো দৃশ্য।
গতকাল দুপুর ঠিক ১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সংগে সংগেই আরেক দফা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে সাফ বিজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্যরা। বিকেল সাড়ে ৩টায় ইতিহাসগড়া মেয়েরা যখন শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে আসেন, তখনই শুরু হয় মানুষের উচ্ছ্বাস। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগানে ফুটবলারদের স্বাগত জানায় জনতা।
এরপর একে একে মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন বাসে ওঠেন। বাস যখন চলতে শুরু করে তখন পেছনে পেছনে ছুটে চলে মানুষ। এরপর যে সড়ক দিয়েই সাবিনাদের বাস যায় সেখানেই তাদের অভিবাদন জানাতে থাকে জনতা। এসময় সাবিনাদের সঙ্গে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।
বিমানবন্দর থেকে মেয়েদের বহনকারী বাসটি কাকলী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মৌচাক, কাকরাইল, আরামবাগ, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবনে যায়।
বিমানবন্দরে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি চ্যাম্পিয়ন দল। তবে বের হওয়ার সময় সংবাদমাধ্যমে ছোট্ট করে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন দলের অধিনায়ক সাবিনা।
তিনি বলেন, সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটি এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের। সাবিনা বলেন, আমাদের এত সুন্দর করে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। স্মরণীয় এই জয়ে শামসুন্নাহার করেন একটি গোল। আর দুটি গোল করেন কৃষ্ণা রানী সরকার।
এর আগে কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর থেকে মেয়েরা উদগ্রীব হয়েছিল দেশে ফেরার জন্য। অধিনায়ক সাবিনা বলেন, ‘এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। একটি জয় নিয়ে দেশে ফিরছি। দারুণ উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে দেশবাসী। আমরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। ’
বিমানে উঠার পরেই তাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। বিমানে বারবার ঘোষণা আসতে থাকে, শিরোপা জয়ের জন্য বাংলাদেশ নারী দলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস জানতে থাকে। স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া একটায় কাঠমান্ডুর ত্রিভুভন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ৩৭২ বিমানটি। চলন্ত বিমানেই তাদের মিষ্টিমুখ করায় বিমান কর্তৃপক্ষ। এই সময় বিমানের ক্রুরাও মেয়েদের সংগে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
পার সোনালী মেয়েদের চাহিদা অনুযায়ী ছাদ খোলা বাসে করে বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে সাফ চ্যম্পিয়নরা। এই সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে পতাকা নেড়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তাদের অভিনন্দন জানায় ফুটবল অনুরাগীরা।