বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের একটা সমস্যা আছে, সেটা তাদের দোষ। তারা নিজেরা নিজেরা আন্ডারকাট করে প্রাইজটা এমন অবস্থায় নিচ্ছেন, যাতে করে দামও পাচ্ছেন না। পোশাক খাতের নিয়মিত অবনমন হচ্ছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গার্মেন্ট শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে আলোচনার পর সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। তাই আমি জানি, সে ধরনের একটি সমস্যা রয়েছে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় কাজ পাওয়ার জন্য তারা (গার্মেন্ট মালিক) দাম কমিয়ে দিচ্ছে। সেটার প্রভাব পড়ছে মোট রপ্তানি হিসাবের ওপর। তবে তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য সুবিধাগুলো দরকার। যদি ৭ থেকে ১০ দিন ক্লিয়ারেন্স পেতে সময় লেগে যায়, বায়ার যদি দেখে শিডিউল টাইমের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন বেশি লাগে, তাহলে দামের ক্ষেত্রে তারা শর্তে আসতে চান না। এসব কারণে অনেক কারখানাকে বিমানে মাল পাঠাতে হয়। একবারে মাল পাঠাতে সে বছরের সব লাভ চলে যাবে। সময়ের ব্যাপার। সরকার বিবেচনায় নেবেন। ফ্যাক্টরিগুলোর কাছে আবেদন, আমরা নিজেরা আন্ডারকাট না করে আমাদের ব্র্যান্ড ভালো করা দরকার। বাজারে গ্লোবাল পরিচিতি বাড়ানো দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আশাবাদী। সামনের দিনগুলোতে হয়তো ইমপ্রুভ করবে। কিন্তু কবে নাগাদ করবে সেটা বলা মুশকিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, আমরা নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এনআরবির চেয়ারম্যান ও অর্থ সচিব সমস্যাগুলোর বিষয়ে শুনেছেন। সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা কাজ করবেন। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে যে ‘নেগেটিভ গ্রোথ’ সেটা কীভাবে বাড়ে, সেজন্য নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা (এনবিআর ও অর্থ বিভাগ) কাজ করবে। কিছু সমস্যা আমাদের হয় ক্লিয়ারেন্সের জন্য, জাহাজীকরণের জন্য অনেক সময় লাগে, বন্দরে দীর্ঘ সময় থাকে। এ ছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কথা, সবগুলোই বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করে আমরা ব্যবস্থা নেব। মূলত আলোচনা হয়েছে রেডিমেড গার্মেন্টের গত তিন মাসে যে ‘নেগেটিভ গ্রোথ’ সেখান থেকে কীভাবে ফিরে আসতে পারি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ডলারের দাম নিয়ে যে সমস্যা, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটা নিয়ে কী করা যায়, ব্যাংকগুলোর ডলার কেনা-বেচার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটাও আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা তুলে ধরেছেন। ডলারের রিভ্যালুয়েশনের কথা বলেছি। সেগুলো তারা দেখবেন। আর ব্যাংক ইন্টারেস্ট একটি বড় ফ্যাক্টর, বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে বিশাল আলোচনা হয়েছে, কীভাবে সেটি কমানো যায়। কারণ ১২ থেকে ১৪ শতাংশ প্রাইভেট ব্যাংকগুলো এই ইন্টারেস্ট দেয়। সেটা কীভাবে কমানো যায়। আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে ট্যাক্সেশনের রেভিনিউ কালেকশন দরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেটা আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন ট্যাক্সের পরিধি বাড়াতে। যাদের ট্যাক্স দেওয়ার সামর্থ্য আছে, তারা ট্যাক্সেশনের বাইরে রয়েছেন। সেটা কাভার করলে রেগুলার যারা ট্যাক্স দেন তাদের ওপরে চাপ কমবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থ সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিছু বিষয় দেখবেন। অন্যান্য যে ব্যাপার এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছেন ও সাজেশন দিয়েছেন, এসব ছোটখাটো সমস্যা যখনই আসবে আপনারা আমার কাছে আসেন। আমি তাৎক্ষণিক সেগুলোর সমাধান করব।
নগদ সহায়তার বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, যেটুকু নগদ সহায়তা পাচ্ছি, তাতে কিছু ট্যাক্সেশনের ব্যাপার এসেছে। সেটা এনবিআরের চেয়ারম্যান অত্যন্ত সিমপ্যাথিটিক। তিনি বলেছেন সেটা ঠিক করে দেবেন। যেটা ট্যাক্স এসেছে সেটা কমাবে বলে মনে হয়েছে।