মুন্সীগঞ্জের চরঝাঁপটার মেঘনা নদীতে তেলবাহী জাহাজের ধাক্কায় মাটিভর্তি ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি পাঁচ দিনেও। গতকাল শনিবার চতুর্থ দিনের মতো নদীর বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের খোঁজে তল্লাশি চালায়। ট্রলার চালকের অনুপস্থিতি এবং ঘাতক তেলবাহী জাহাজটিকে শনাক্ত করা না যাওয়ায় ট্রলারডুবির নিদিষ্ট স্থানও নিশ্চিত করতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা। ঘটনার পর থেকেই ট্রলার চালক পলাতক রয়েছেন।
এ ছাড়া উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়, নৌযান শনাক্তকারী বিশেষ জাহাজ অগ্নিশাসকও রয়েছে উদ্ধার অভিযানে। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সাইড স্ক্যান সোনার মাধ্যমে ট্রলারটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। নৌবাহিনীর ১টি, বিআইডব্লিউটিএর ২টি ও ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদিক জানান, শনিবার সকাল থেকে চতুর্থ দিনের মতো বিআইডব্লিউটিএ ও নৌবাহিনীর এক্সপার্ট টিম মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। নির্দিষ্ট স্থান না জানায় পুরো মেঘনা নদী চষে বেড়ানো সম্ভব নয়। তারপরও দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খোঁজা হয়েছে। কিন্তু কোন সন্ধান মেলেনি। তাদের খোঁজ পেতে ট্রলার চালককে আটক বা ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি দরকার।
এদিকে মেঘনায় ট্রলার ডুবে ২০ শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে গজারিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ট্রলারের সারেংকে প্রধান আসামি করে ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিক শাহ আলম এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলো মাদারীপুরের শিবচর থানার হাজী শুকুর হাওলাদারকান্দি গ্রামের মৃত করিম বেপারির ছেলে ট্রলারের সারেং (চালক) মো. হাবিব (৫৫), ট্রলার মালিক নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আকবরনগর গ্রামের মন্নাম দেওয়ানের ছেলে জাকির দেওয়ান (৪৫) ও মালবাহী জাহাজের অজ্ঞাতনামা চালক। মামলার আসামি হাবিব ও জাকির পলাতক রয়েছে। গজারিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ জানান, বেপরোয়াভাবে নৌযান চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহানির অপরাধে ২৮০/৩০৪ এর (ক) ধারায় মামলাটি রুজু হয়েছে। এ মামলার আসামিদের গ্রেফারের চেষ্টা চলছে।
গত সোমবার কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ট্রলারে মাটি তুলে ৩৪ শ্রমিক নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী যাচ্ছিলেন। ট্রলারটি ওই দিন রাত ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের চরঝাঁপটার মেঘনা নদীতে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি তেলবাহী জাহাজ সেটিকে ধাক্কা দিয়ে চাঁদপুরের দিকে চলে যায়। এতে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে প্রাণে বাঁচলেও ট্রলারটির কেবিনে ঘুমন্ত ২০ শ্রমিকের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। নিখোঁজ শ্রমিকদের অধিকাংশেরই বাড়ি পাবনা জেলায়।
