• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রতিবেদন নিয়ে মতবিরোধ

ছবি : সংগৃহীত

দুর্ঘটনা

বরমচালে ট্রেন দুর্ঘটনা

প্রতিবেদন নিয়ে মতবিরোধ

  • জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া
  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০১৯

তদন্ত কমিটির মতে রেলপথ নিয়মিত সংস্কার না করা, প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী জুলহাস ও গ্যাং ইনচার্জ সাইফুল আলমকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ‌তদন্ত প্রতিবেদন কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ক্ষতি উল্লেখ করা হয়েছে

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া থেকে

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া বরমচালে গত ২৩ জুনের ট্রেন দুর্ঘটনার পর গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমে উঠে এসেছে রেলওয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। এ দুর্ঘটনায় রেলওয়ের যান্ত্রিক, সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম, প্রকৌশল বিভাগ সবমিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তদন্ত কমিটির মতে, রেলপথ নিয়মিত সংস্কার না করা, প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। স্থায়ী পরিদর্শক সার্বিক অবস্থার জন্য দায়ী।

তবে বরমচালে ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিবেদন নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। ফলে কমিটির অন্যতম সদস্য রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) আবদুল জলিল তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেননি। কমিটির ৪ সদস্যের মধ্যে তিনজনের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন গত ১ এপ্রিল রেলওয়ের মহাপরিচালকের (ডিজি) দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে রেলপথের মৌলভীবাজার-কুলাউড়া অংশের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী জুলহাস ও গ্যাং ইনচার্জ সাইফুল আলমকে দায়ী করা হয়েছে।

২৩ জুন কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী বড়ছড়ায় ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী। ঘটনার পরদিন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে। ওই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ হিসেবে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল গত ২৬ জুন। তবে নির্ধারিত সময়ের ৫ দিন পর রেলভবনে জমা হয় এ প্রতিবেদন।

সূত্র জানায়, রেলপথ নিয়মিত সংস্কার না করা, প্রকৌশল বিভাগের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। স্থায়ী পরিদর্শক সার্বিক অবস্থার জন্য দায়ী। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ৮ম, ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম কোচের চাকা লাইন থেকে পড়ে যায়। ১৭তম কোচটি রেলসেতুর নিচে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেলপথের যন্ত্রাংশ ‘ক্রসিং বডির নোজ’ ঢিলা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়াও ক্রসিং বডির নোজের দুই পাশের হিল ব্লক লকিং নাট ঢিলা ছিল। সামনের দুটি হিল ব্লকের একটিও ছিল না। নোজের সামনের উইং রেলের সংযোগস্থলে ফিশপ্লেট খুলে পড়েছিল। কাঠের স্লিপারগুলো অত্যন্ত পুরনো ও কিছু স্লিপারের মাথা কেটে লাইন দেবে আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আঞ্চলিক তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবদনে স্বাক্ষর করেননি।

এদিকে ওই রিপোর্টে রেলের প্রকৌশল শাখাকে দায়ী করে ৩ সদস্য সই করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছেন। আর এ নিয়ে সৃষ্টি হয় রেলওয়ের প্রকৌশল ও যান্ত্রিক বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ। গত সোমবার বিকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

তবে প্রতিবেদন জমাকে কেন্দ্র করে রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও রেলপথের দুরবস্থার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সদস্য পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল ওই তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষরই করেননি।

তবে জানা গেছে, রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ব) আবদুল জলিল তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করে সই করেননি। তার মতে, উপবন ট্রেন বরমচালে রেলসেতুতেই দুর্ঘটনায় পড়েছে। ট্রেনচালক ট্রেন থামাতে চেয়েছিলেন দুর্ঘটনা এড়াতে পারেননি।

কিন্তু আঞ্চলিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে শুধু প্রকৌশল বিভাগকে দোষারোপ করায় রেল কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কিছু কর্মকর্তা বলছেন, অতিরিক্ত গতি ও আলাদা বগির মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্তে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন রেলওয়ে ডিজির কাছে জমা হয়েছে। জমা হওয়ার পর অফিসিয়ালি আমাদের কাছে আসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads