• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের দাম কম : হতাশ কৃষক 

কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে তবে দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

ধান কাটা ও কেনাবেচা শুরু

কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের দাম কম : হতাশ কৃষক 

  • কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ মে ২০১৯

কুষ্টিয়ায় রবি মৌসুমে বোরো ধান কাটা ও কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ফলন ভালো পাচ্ছে কৃষক। কিন্তু গত বছরের তুলনায় দাম কম পেয়ে হতাশ তারা। গত বছর মৌসুমের শুরুতে যে ধান বিক্রি হয়েছে ৭৪০ টাকা মণ দরে, সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এবার বোরোর ফলন ভালো হলেও বাজার কৃষকেরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। দাম না পেলে কষ্ট করে আাবাদ করা ধান চাষ থেকে কারা বিমুখ হবেন। বাজার মন্দার বিষয়টি খতিয়ে দেখা অতীবও প্রয়োজন।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় যেকোন ফসল আবাদের জন্য মাটির গুনগত মান খুবই ভালো। এজন্য কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে ধান আবাদ করে থাকে। ফলনও ভালো পায়। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ৯০ ভাগ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ হয়েছিল। আবহাওয়া ভালো ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ করেছে কৃষক। জেলার কয়েকটি বাজারেও নতুন ধান উঠেছে। কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে হাটে হাটে ঘুরছেন। জেলার মধ্যে ধানের সবচেয়ে বড় হাট সদর উপজেলার আইলচারা ধানের হাট। এখানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চালের মোকাম খাজানগর এলাকার চাল ব্যবসায়ীরা ধান কিনে থাকে। আইলচারা হাটে সপ্তাহের দুই দিন ধান কেনাবেচা হয়। এই হাটে গত বছরের আজকের দিনে (১৫মে) বোরো ধান মণ প্রতি বিক্রি হয়েছিল ৭৪০ টাকা। হাটে বোরো ধানের উঠেছিল মণ প্রতি ৬৮০ টাকা। মৌসুমের শুরুতে এমন দাম পেয়ে হতাশ কৃষক। আইলচারা হাটে ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও ট্রলিতে করে কৃষকেরা হাটে ধান নিয়ে হাজির হয়।

এসময় কৃষকেরা বলেন, হাটে ধানের আমদানি বাড়লেও দাম বাড়ছে না। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তখন আমদানী আরও বেড়ে যাবে, সঙ্গে দাম আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর কৃষকেরা দ্রুত টাকা পাবার আশায় ধান কাটার সাথে সাথেই বিক্রির জন্য হাটে ছোটেন।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করে ঘরে তুলতে (জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে মাড়াই শেষ করে) প্রায় ১৫ হাজার ৮৪৪ টাকা খরচ হয়েছে। ধান ও বিচালি বিক্রি করে ঘরে আসছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৫০ টাকা। অর্থ্যাৎ চার মাস জমিতে খাটুনিতে বিঘা প্রতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। এই লাভ দিয়ে কিছুই হয় না।

জেলা বাজার তদারকি কার্যালয় সূত্র জানায়, আইলচারা হাটে স্থানীয়ভাবে সরু ধান বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ৭৮০ টাকা দরে, মাঝারী ধান বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা দরে ও মোটা ধান বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ৫৮০ টাকা দরে। কুষ্টিয়ায় মাঝারি ধানের আবাদই বেশি হয়ে থাকে। গত বছরের আজকের দিনে একই হাটে সরু, মাঝারী ও মোটা ধান মণ প্রতি বিক্রি হয়েছিল যথাক্রমে ৯৫০ টাকা, ৭৪০ টাকা ও ৬৮০ টাকা দরে। বাজারে দাম বৃদ্ধি না পেলে কৃষকেরা লোকসানের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন এই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

কৃষক মোশারফ বলেন, তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। পুরোটায় কেটে ঘরে তুলেছেন। হাটে দাম না পেয়ে হতাশ তিনি। এবার অতিরিক্ত খরার কারণে সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরোর উৎপাদন খরচও পড়েছে বেশি। গত বছর মৌসুমের শুরুতে চড়া দামে ধানবিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন। এবার তা ভিন্ন। এক বিঘায় লাভবান হচ্ছেন মাত্র তিন হাজার টাকা।

লোকমান ক্ষোভের সাথে বলেন,‘রোদে পুড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান চাষ করা হয়। অথচ কোন দাম পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়। কৃষকের দিকে কেউ খেয়াল রাখে না।

কৃষি সম্প্রাসারণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিকের পরামর্শ কৃষকদের কৌশলী হতে হবে। দাম যেহেতু কম সেহেতু ধান বিক্রি না করে বাড়িতে কয়েকদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারে কৃষক। দাম বাড়লে সেসময় বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তবে দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে থাকেন।

জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, কৃষকের ধানের নায্য মূল্যে নিশ্চিত করতে হাটগুলোতে তদারকি বাড়ানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads