• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ছড়িয়ে পড়ছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ

খামারে ল্যাম্পি স্কিত ডিজিজে আক্রন্ত পশুকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের লোকজন ইনজেকশন দিচ্ছে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

ছড়িয়ে পড়ছে গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ

  • সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৯

নওগাঁর সাপাহারে গবাদি পশুর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ' ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ' এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় চরম আতঙ্কিত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার সব খামারি ও গবাদি পশু লালন পালনকারিরা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নে।

গরু খামারিরা বলছেন এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা ও আতঙ্ক আরো বাড়ছে তাদের মধ্যে। তবে শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তারা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারি ও গরু পালনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রথমে গরুর চামড়ার উপরিভাগের অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি দেখা যাচ্ছে। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর সারা শরীর জুড়ে অসংখ্য গুটি গুটি হয়ে ঘা-এ পরিণত হচ্ছে।

এ সময় গরুর শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রী তাপমাত্রায় জ্বর ও লক্ষ করা যাচ্ছে, যার ফলে আক্রান্ত গরু খাওয়া দাওয়াও ছেড়ে দিচ্ছে। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে বা পেটের উপরিভাগে পানি জমে ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষতস্থান থেকে মাংস খুলে-খুলে পড়ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, 'ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ' রোগটি প্রথম ১৯২৯ সালে জাম্বিয়াতে দেখা দেয়। পরে আফ্রিকা মহাদেশের সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এবং ২০১৪-২০১৫ সালে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাকিস্থানসহ আশেপাশের দেশসমূহে এ রোগ দেখা দেয়।

২০১৬ সালে গ্রীস, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কসোভো সহ আশেপাশের দেশসমূহে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। ২০১৯ সালে চীন ও ভারতে আক্রান্তের পর পরই বাংলাদেশে এ রোগটি অতি সম্প্রতি প্রথম বারের মতো দেখা দিয়েছে। পশুসম্পদ ভেটেনারী সার্জন বলেছেন এ রোগ সাধারণত মশা, মাছি, আটালি, আক্রান্ত পশুর লালা, নাক-চোখের ডিসচার্জ, ষাড়ের বীর্য, আক্রান্ত গরু-মহিষের দুধ এবং বহুবার ব্যবহারিত ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মধ্যমে ছড়ায়।

অনুকূল পরিবেশে কোন এলাকায় এ ভাইরাজ ছয় মাস পর্যন্ত জীবিতি থাকে। ভাইরাস জনিত এ চর্মরোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। 'লাম্পি স্কিন ডিজিজ' রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু অত্যান্ত দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং চামড়ার গুনগতমান নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ভেটেনারী সার্জন ডা.আশীষ কুমার দেবনাথ বলেন, উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নেই এই রোগ ছড়িয়ে গেছে এবং ‘ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে' এ পর্যন্ত প্রায় ১শ’ থেকে দেড়শ গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কোথাও কোন গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সাধারণত এ রোগে গরু মারা যায়না। লোকজনকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে সচেতনতা মুলক লিফলেট বিতরণ চলছে এবং আক্রান্ত গবাদি পশুকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রাণী সম্পদ অফিসে জনবল অপ্রতুল থাকার পরেও সরকারী ছুটির দিনেও তারা নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে। তবে ভয়ের কিছু নেই কিছু দিনের মধ্যেই রোগটি ভাল হয়ে যাবে এবং ইতোমধ্যে চিকিৎসা দেয়া অনেক গরুই ভাল হয়ে গেছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষই আক্রান্ত হয় কিন্তু মানুষ আক্রান্ত হয় না।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads