• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
চলনবিলে রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন

চলনবিলে রসুন বীজ রোপণে ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা।

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

চলনবিলে রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন

  • চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

চলনবিলে আমন ধান কাটার পর অর্থকরী ফসল রসুন বীজ রোপণে ব্যস্ত নারী শ্রমিকরা। পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত চাটমোহরসহ চলনবিলে চলতি রবি মৌসুমে রসুন আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে সাত হাজার হেক্টর বেশি। বর্ষা শেষে বিল-নদী-খাঁড়ি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর চাষিরা বিনা চাষে রসুন বীজ রোপণ করেন। এবার বন্যার পানি বিলম্বে নেমে যাওয়ায় রসুন আবাদ পিছিয়ে গেছে।

এ অঞ্চলের ব্যাপকভাবে রসুন আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে রসুনের দাম প্রায় চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা রসুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

নাটোর ও পাবনা জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৮৮০ মেট্রিকটন। গত বছরে রসুনের আবাদ কম ও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় বাজারে রসুনের দাম বেশি ছিল। এ বছর চলনবিল অঞ্চলের কৃষকরা রসুন আবাদে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানিয়েছে।

চলনবিলের মাঠে মাঠে কৃষকরা স্ত্রী-সন্তানদের সাথে নিয়ে রসুন চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ দিকে শ্রমিক সঙ্কটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজেরাই নিজ জমিতে রসুন বীজ রোপণ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরের চলনবিল অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয়। এ অঞ্চলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ ও রায়গঞ্জে রসুন অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। এখন রসুনের বীজ রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার রসুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে বিল-নদী-খাঁড়ির পানি বিলম্বে নেমে যাওয়ায় রসুন আবাদ পিছিয়ে গেছে। এতে রসুনের ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে কৃষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাবনার চাটমোহরে আট হাজার ২০০ হেক্টরে ৬৫ হাজার ৬০০ টন, পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া, সাঁথিয়া, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ৪০০ হেক্টরে তিন হাজার ২০০ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ১১ হাজার ৬০০ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৮০০ টন, গুরুদাসপুরে ৯ হাজার ৮০০ হেক্টরে ৭৮ হাজার ৪০০ টন, সিংড়ায় ৪০০ হেক্টরে তিন হাজার ২০০ টন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জে এক হাজার হেক্টরে আট হাজার টন, এসব এলাকায় প্রতি বছরই রসুন আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। চলনবিলে চাটমোহর, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয়ে থাকে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ সালে চলনবিলের পাবনার চাটমোহর নাটোরের বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর কৃষকরা স্ব-উদ্যোগে প্রথম বিনা চাষে রসুন আবাদের প্রচলন করেন।

চাটমোহর উপজেলার কৃষক নায়েব আলী জানান, চলনবিল অঞ্চলের জমিতে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে নরম জমিতে বিনা চাষে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। এ জন্য প্রচলিত নিয়মে জমি চাষ করার প্রয়োজন পড়ে না। এ পদ্ধতিতে ক্ষেতে আগাছা কম জন্মে। সার প্রযোগ করতে হয় কম। রোপণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত ১২০ দিনের এই রসুন উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে পুরনো পদ্ধতির রসুন আবাদের চেয়ে অনেক কম। বিনা চাষ পদ্ধতিতে রসুনের ফলন বেশি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। সাধারণত চৈত্র মাসে জমি থেকে রসুন তুলে আনা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাটমোহরের হরিপুর, অমৃতকুন্ডা, নতুন বাজার, ছাইকোলা, নাটোরের লক্ষ্মীকোল বাজার, রয়না ভরট হাট, মৌখাড়া হাট, জালশুকা হাট, চাঁচকৈড় হাট হাট রসুন বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। রসুন বেচাকেনার জন্য বিভিন্ন হাটবাজারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য আড়ত। চট্রগ্রাম, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারি আড়তদারের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী রসুন কিনছেন। পরে রসুন বস্তায় ভরে ট্রাকে করে সড়কপথে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বতমানে হাটবাজারে মানভেদে প্রতি মণ রসুন সাত হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান রশীদ হোসাইনী বলেন, গত মৌসুমে রসুনের ভালো দাম পাওয়ায় চলনবিলের অঞ্চলের রসুন চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। এবার সবাই অন্য ফসল আবাদের চেয়ে রসুন চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে রসুন আবাদ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালাক আজাহার আলী জানান, দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি রসুন চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এ জন্য অঞ্চলে সর্বাধিক জমিতে রসুন চাষ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ ও ১৫ কেজি জিপসাম ছিটানোর দুই-এক দিনের মধ্যে নরম জমিতে সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপণ করতে হয়। রোপণের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে দুই মণ রসুনের প্রয়োজন হয়। জমিতে রসুন রোপণের দিনই খড় বা বিচালি দিয়ে জমি ঢেকে দিতে হয়। বীজ রোপণের এক মাস পরে পানি সেচ দিয়ে বিঘায় ১০ কেজি হারে ইউরিয়া ও পাঁচ কেজি হারে এমওপি ছিটিয়ে দিলে ফলন ভালো হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads