• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
অর্থ, পুষ্টি ও পরিবেশের সমষ্টি ছাদকৃষি

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

অর্থ, পুষ্টি ও পরিবেশের সমষ্টি ছাদকৃষি

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

সারা পৃথিবীতেই ছাদে চাষ পদ্ধতি জনপ্রিয় করার কাজ চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গের ছাদে ছাদে বাগান তৈরির পাশাপাশি হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পানির অপচয় না করে সেখানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। জার্মানিতে ১২% ছাদ ‘সবুজ’। টোকিও সরকার বলছে, যদি তাদের অর্ধেক ছাদ সবুজ হয় তাহলে প্রতিদিন এয়ারকন্ডিশনে ব্যবহূত জ্বালানি বাবদ এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। তাই টোকিওর আইনে সব বাড়ির নতুন ছাদে অন্তত ২০% সবুজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর গবেষণা করে বের করেছে, পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে প্রতিষ্ঠিত বাগান দ্বারা বছরে জ্বালানি খরচের ০.৬-১৪.৫% সাশ্রয় হতে পারে। অনেক উন্নত দেশে ভবন গরম ও শীতলকরণে ৩০ ভাগ বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে জনগণই সচেতন হয়ে শুরু করেছে ছাদ কৃষি। আশার খবর হচ্ছে, ছাদ কৃষি পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষার পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতিতে নতুন সংযোজন হিসেবে আশা জাগিয়েছে। ছাদ কৃষির মাধ্যমে বাগান বিস্তারে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। দালানকোঠার সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তাপমাত্রা  হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে। ছাদের সবুজ স্তর বিভিন্ন ট্রান্সমিটিং স্টেশন থেকে নিঃসরিত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রতিহত করছে। মোটকথা ছাদ কৃষি নগরজীবনে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সম্ভাবনার উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা অনুযায়ী যে পরিমাণ গাছ থাকার কথা, তার সিকি ভাগের উপস্থিতিও লক্ষ করা যায় না। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পৃথিবীর দেশে দেশে নগর পরিকল্পনায় যোগ হচ্ছে সবুজ প্রকৃতির। গবেষকরা বলছেন, একটা সবজি গাছ তিন মাসের জন্য হলেও বায়ু থেকে তিনজনের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন রিসাইক্লিন করতে পারে। তাহলে তিন মাস কালের সবজি কিংবা বহুবর্ষী ফলের গাছ লাগিয়ে বায়ুর পরিশুদ্ধতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আমাদের উচিত ছাদ কৃষিতে মনোনিবেশ করা।

ছাদে অর্গানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ সম্ভব

শহরে, বিশেষ করে বড় বড় শহরে শাকসবজির বাগান করার মতো জায়গা না থাকায় অনেকেই শাকসবজি বা যেসব ফল ছোট ছোট গাছে জন্মে সেসব ফল আবাদ করার জন্য ছাদকেই বেছে নিয়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অনেকেই এখন বাসার ছাদে শাকসবজির চাষ করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি শহরের বাড়ির ছাদে অর্গানিক ফসল হিসেবে বিভিন্ন শাকসবজির চাষ করে অনেকেই বিষমুক্ত খাবার খাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রশিকার অর্গানিক কৃষি বিভাগের সহযোগী সমন্বয়কারী হাসি রানী বিশ্বাস জানান, ৩০০ বর্গফুট আয়তনের বাড়ির ছাদে ৮ ফুটদ্ধ২ ফুট আকারের ১২টি বেডে ৫-৬ বিশিষ্ট পরিবারের ৩টি ফসল মৌসুমে সারা বছরের বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব। বেডগুলো ছাদ থেকে দুই ইঞ্চি উঁচুতে থাকে যাতে বেডের নিচ দিয়ে সহজে পানি চলাচল করতে পারে। যার ফলে ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বেডের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কিছু পাইপ দেওয়া হয়, যাকে লেভেল পাইপ বলা হয়। পাইপের মাধ্যমে বেডের পানি বের হয়ে যায়। তারা জানান, ৮ ফুট–২ ফুট আকারের বাঁশের ফ্রেম পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে তাতে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ জৈব মাটি দেওয়া হয় (আবর্জনা পচা মাটি)। জৈব মাটির সঙ্গে জৈবসার মিশ্রিত করে তাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা বা বীজ বপন করা হয়। পরে ফলোআপ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়। এমন সামান্য পরিশ্রমে ১২টি বেড থেকে বছরে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

সূত্র : বাসস

হংকংয়ের  অভিনব উদ্যোগ রুফটপ রিপাবলিক

বিশালাকায় সুউচ্চ ভবনের জন্য বেশ পরিচিত দেশ হংকং। সাধারণত হংকংয়ের মানুষ দীর্ঘজীবী হয়ে থাকেন। বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য ছাদে এরকম জায়গাও তৈরি হয়েছে ছাদ কৃষির কল্যাণে। জানলে অবাক হবেন, এই সুউচ্চ ভবনের ছাদে কী আছে! হংকংয়ের অনেক সুউচ্চ দালানের ছাদে ‘রুফটপ রিপাবলিক’ নামে গড়ে উঠেছে ছাদ কৃষি প্রকল্প। ছাদেই চাষ হচ্ছে ফলমূল, সবজিসহ নানা রকমের কৃষি পণ্য। এখান থেকে উৎপন্ন ফসল স্থানীয় গরিব জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছাদ কৃষি জনপ্রিয় হওয়ার ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে এখানে। হংকংয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন ফসলের দাম অনেক বেশি। ৯০ শতাংশেরও বেশি খাবার চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসে। কিন্তু চীন থেকে প্রায়ই ভেজাল খাবার আমদানি হয় বলে হংকংয়ে উৎপন্ন ফসলের চাহিদা বেশি। ফসল উৎপাদনে ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায়, বিকল্প ব্যবস্থা ছাদ কৃষি অনেকটা আশার মুখ দেখিয়েছে। কেবল ফসল উৎপাদনই নয়, হংকংবাসী চান এর মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে। হংকংয়ের অধিকাংশ মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। তারা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত বেশি। রুফটপ রিপাবলিকের উদ্যোক্তারা গ্রামাঞ্চল থেকে কৃষকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ছাদ কৃষিতে যোগ দেওয়ার জন্য। এতে করে অর্গানিক খামারের উন্নত পদ্ধতির কারণে উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষকদের অবস্থারও উন্নতি হবে বলে মনে করেন তারা।

ঢাকায় স্কুলে স্কুলে ছাদবাগান

রাজধানীর ২৭টি স্কুলে ছাদবাগান গড়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের যত্ন-ভালোবাসায়। সবুজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, গাছের প্রতি মমতা তৈরি আর পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে- এমন বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজধানীর স্কুলগুলোতে স্থান সংকটের কারণে ছাদেই গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বাগান। বাগান গড়ার কাজে যৌথভাবে সহায়তা করছে পোশাক প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড সেইলর ও পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশন। উদ্যোক্তারা জানান, প্রথম অবস্থায় স্কুলগুলোকে ২০টি করে গাছ দেওয়া হয়। সুদৃশ্য ড্রামে গাছ লাগায় শিক্ষার্থীরা। এমনকি ড্রামটিকে সুন্দরভাবে রং দিয়ে সাজিয়ে তোলেও শিক্ষার্থীরা। যে রং করে ও গাছ লাগায়, তার নাম লেখা থাকে ড্রামটিতে। স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি কমিটি। ওই কমিটি পরবর্তী সময়ে গাছের পরিচর্যা বা নতুন গাছ কেনার কাজটি করে। গাছ কেনার জন্য ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ নামে একটি তহবিল করা হয়। সেই তহবিলে টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে অর্থ জমা করে শিক্ষার্থীরা। গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সংগঠনটি ‘সেইলর গ্রিন সেভার্স প্ল্যান্ট ফর প্ল্যানেট’ শিরোনামে বিনা মূল্যে ভিন্নধর্মী বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সালে ঢাকার আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাদবাগান করার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০ সালের মধ্যে ১০০টি স্কুলে ছাদবাগান করে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সংগঠনের।

ছাদকৃষিতে সবুজ অর্থনীতির সম্ভাবনা

বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই অন্যতম দেশ যার ভূভাগের মধ্যে সিংহভাগই চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। তাই হয়তো ছাদ কৃষির প্রতি নগরবাসীর আগ্রহ বাড়ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শহরগুলোর ১০ লাখেরও বেশি বাড়ির ছাদের আয়তন প্রায় একটি জেলার আয়তনের সমান। এক হিসাবে আড়াই কাঠার একটি বাড়ির ছাদে বাগান করে নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে বছরে ৫০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করা সম্ভব। ছাদগুলো চাষাবাদের আওতায় আনলে বছরে একটা ছাদ থেকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার সবজি পাওয়া সম্ভব। নগরীর প্রতিটি বাড়ির ছাদ আঙিনা ও বারান্দা কৃষি উৎপাদনের আওতায় আনা হলে তা থেকে বিপুল পরিমাণ শাকসবিজ, ফল-ফুল, ঔষধি গাছ উৎপাদনসহ ছোট, মাঝারি খামার গড়ে শতকোটি টাকার আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে। যার ফলে নগরবাসীর বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং বাড়তি আয়ের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। শখ ও অবসরকে কাজে লাগাতেও অনেকে ছাদে ফুলের বাগান, সবজি ও ফলের বাগান করছেন। এর ফলে বিষমুক্ত টাটকা শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন পরিবারের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করছে। অনেকে বহুমাত্রিক ছাদ কৃষির মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবজি ও ফল বিক্রি করে অর্থ আয় করছেন। তাই ছাদ কৃষির ফলে বহুমাত্রিক সুবিধা ও সাফল্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ছাদ কৃষিতে একদিকে যেমন বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা আসবে, তেমনি ছাদে সবুজ আভরণে পরিবেশের মলিনতা কাটিয়ে সবুজ সতেজতা আনবে।

সবুজ সাজে সাজুক অট্টালিকা

শহরকে সারি সারি অট্টালিকার ছাদে, বারান্দা ব্যালকনিতে গড়ে তুলতে হবে সবুজ বাগান। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সবজির চাষ করতে পারেন নিজের মতো করে যার যতটুকু জায়গা ব্যবহার করার মতো আছে। ফুলের টব, অকেজো বালতি, অকেজো ড্রামে করতে পারেন মৌসুমি শাকসবজি চাষ, খেতে পারেন বারো মাস। আশার খবর হলো ছাদ কৃষিসহ শহরের বাসাবাড়িতে ফুলের গাছ ও অন্যান্য গাছগাছালি লাগানোর প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এখন অনেক বাসাবাড়ির ছাদ, বারান্দা ও ব্যালকনিতে দেখা যায় সবুজ গাছ আর রঙিন ফুল, ফল ও সবজির নান্দনিক শোভা।  শহরের মানুষের এই প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টাকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে অনেক অনেক নার্সারি। রাসায়নিক ব্যবহার না করেই বেগুন, টমেটো, বরবটি, ক্যাপসিকাম, ঝিঙা, ধুন্দল. ঢ্যাঁড়শ, পুঁইশাক, পাটশাক, চিচিঙ্গা, ধনেপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, শিম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, কলমি শাক, লাউ, করলা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান জাতের সবজি চাষ হচ্ছে ছাদে। ফলের মধ্যে পেয়ারা, আম, কলা, লেবু, বাতাবি লেবু, জলপাই, বড়ই, আতাফল, কামরাঙা, স্ট্রবেরি, লটকন, জাম, পেঁপে, লিচু, শরিফা, সফেদা, কতবেল, ডালিম, কমলা, মালটা, আমড়াসহ দেশীয় জাতের প্রায় সব ফলেরই ছাদে চাষাবাদ হচ্ছে। বাহারি দেশি-বিদেশি ফুলের চাষ আরো অনেক বছর আগে থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকে ছাদে ফুল, ফল ও সবজির মিশ্র ছাষ করেও সফল হয়েছেন। ঘরে, বারান্দায়, ব্যালকনিতে বহুবর্ষজীবী বাহারি পাতা বা ফুলজাতীয় গাছ, অকির্ড, বনসাইয়ের মধ্যে ফিলোডেনড্রন, হেডেরা, অরোকেরিয়া, ফার্ন, পাতাবাহার, ড্রাসেনা, কলিয়াস, ক্রোটন, বাহারি কচু, পাম, ম্যারেন্টা, ড্রাসেনা, কোলিয়াস, ডাইফেনবেকিয়া, বেলি, জুঁই, হাসনাহেনা, নয়নতারা, জাপানিজ টগর, মুসান্ডা, মর্নিং গ্লোরি, অপরাজিতা, মাধবীলতা, বাগানবিলাস, কোরাল ভাইন, ঝুমকোলতা, মানিপ্ল্যান্ট, অ্যাস্টার, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গ্ল্যাডিওলাস, জার্বেরা, গোলাপ,  গাঁদা, দোলনচাঁপা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা এরিডিস, গ্রিলে ফার্ন বা পর্টুলেকা, রিনকোস্টাইল, কেটেলিয়া বা ডেনড্রোরিয়াম, আইভি, ম্যারেন্টা, জ্যাকোবিনিয়া সহজেই সবার নজর কাড়ে। ছোট একটা চৌবাচ্চায় করতে পারেন মাছ চাষ। ছাদে খরগোশ, কবুতর কিংবা কোয়েল পালনও করা যায়।

উদ্যোক্তাদের পাশে আছেন যারা

যারা বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন বা করতে চান তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ‘সবুজ ঢাকা’ নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। সবুজ ঢাকার পক্ষ থেকে ছাদ কৃষির মালিকদের পুরস্কার ছাড়াও ছাদ বাগানকারী মালিক সবুজ ঢাকার সঙ্গে নিবন্ধিত হলে তাদের বিনামূল্যে গাছের চারা দিচ্ছে। আগ্রহীরা মৎববহ.ফযধশধ১৫—মসধরষ.পড়স অথবা ফেসবুক পেজ .িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ ংযড়নঁলউযধশধ১৫। ছাদে বাগানে আগ্রহীদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে ‘গ্রিন বাংলা’। কেউ যদি ছাদে বাগান গড়ে তোলার পুরো দায়িত্ব দিতে চায় সে ক্ষেত্রে ফি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে ফি ছাড়াও ছাদে বাগান করতে পরামর্শ সহায়তা  নিতে  যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১১৪৩৪৬৪৭ নম্বরে। গ্রিনসেভারস নামে আরেকটি সংগঠন ছাদ বাগানের আন্দোলনকে সামাজিকীকরণে প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কাজ করছে। রাজধানীর রাইফেলস, রাজউকসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ে অক্সিজেন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে গ্রিনসেভারস। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন টিফিনের টাকা থেকে কিছু বাঁচিয়ে অক্সিজেন ব্যাংকে ফেলে। নির্দিষ্ট সময় পরে সেখানে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে সেই স্কুলে বাগান করা হয়। ঋণ দিয়ে ছাদ বাগান কার্যক্রমকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের অন্যান্য ব্যাংকেও পরিবেশ রক্ষার এ উদ্যোগে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

হাসপাতালের ছাদ বাগানে জাতীয় পুরস্কার

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় দক্ষিণ হালিশহরে হাসপাতালের ছাদে বাগান করে জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারী মানিক চন্দ্র দাশ ও মো. রাশেদ। এ হাসপাতালের ছাদে উঠলেই চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের ছাদে সারি সারি গাছ। ছাদে এমন বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারী মানিক চন্দ্র দাশ। এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কারের পেয়েছেন তিনি। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে হাসপাতালের ছাদে বাগান করার কাজ শুরু করেন মানিক। বেতনের টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা জমিয়ে গাছের চারা ও টব সংগ্রহ করে বাগান শুরু করেন।

সব ভবনের ছাদে বাগান চাই

নগরীর বায়ু দূষণরোধে এবং গ্রীষ্মকালের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানীর সব ভবনের ছাদে বাগান করার কথা বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গ্রীষ্মকালের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং বাতাসে দূষণ মাত্রা বৃদ্ধি রোধে ছাদে বাগান হতে পারে উত্তম সমাধান। শহরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা, নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বিষমুক্ত সবজি প্রাপ্তিতে ছাদে বাগান তৈরির জন্য বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানান তারা। পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ছাদ বাগানের মাধ্যমে কম খরচে স্থায়ীভাবে জ্বালানি ব্যবহার কমানো, ভবনের বাহ্য রূপের উন্নতি, তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব। ছাদে বাগান জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। বিষমুক্ত টাটকা শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদনেও ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে জলাবদ্ধতা রোধে ভূমিকা রাখবে। ছাদের সবুজ স্তর বিভিন্ন ট্রান্সমিটিং স্টেশন থেকে নিঃসরিত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রতিহত করে।

এই সময়ে দরকার উদ্যোগ নিন সরকার

ছাদ কৃষি বহুমাত্রিক সুবিধা ও সুফল পাওয়ার জন্য এবং পরিবেশকে সহনীয় করতে শুধু বাড়ির ছাদে নয়, চীন বা কোরিয়ার মতো অফিসের বিশাল ছাদগুলোকেও ছাদ কৃষির আওতায় আনতে হবে। জাপান ও চীনে ছাদে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তেমনি ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য শহরে ছাদে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করতে পারে সরকার। প্রথমে সরকারি অফিস বা ভবনের ছাদে, বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে, বারান্দায়, সিটি করপোরেশনের মার্কেটের ছাদে বাগান বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। ছাদ কৃষি উদ্যোক্তাদের জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কার প্রবর্তন, হোম ট্যাক্স মওকুফ, গ্রিন সেভারস লোন সুবিধা দিয়ে গ্রিন সেভার্স উদ্যোক্তা কার্ড দেওয়া যেতে পারে। ছাদে বাগানের উপকারিতার দিকসমূহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা। নতুন বাড়ি তৈরির অনুমোদনে প্রত্যক ছাদের ৫০ ভাগ ছাদ কৃষির আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করে আইন করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে ছাদ কৃষির জন্য নামমাত্র সুদে লোন সহায়তার নির্দেশনা দিতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে ছাদ কৃষি জনপ্রিয়করণে সহায়তা ও প্রচারণা বাড়াতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, কৃষিবিদ, উপকরণ সরবরাহকারীদের প্রতিনিধি, ছাদে বাগানকারী সংগঠনের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন, নগর উন্নয়ন করপোরেশন, পরিবেশবিদ ও অন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ‘গ্রিন সিটি ডেভেলপার ফোরাম’ গঠন করা যেতে পারে।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক

writetomukul36@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads