• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
আখাউড়ায় জেলেদের সুদিন ফিরছে

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

আখাউড়ায় জেলেদের সুদিন ফিরছে

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নদী খাল বিল জলাশয়ে পানি থৈথৈ করছে। বর্ষ মৌসুম হওয়ায় চারদিকে শুধু পানি আর পানি । এতে জেলে সম্প্রদায়ের  যেন এখন সুদিন ফিরছে। প্রতিদিনই জেলেরা ওইসব জায়গা থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরছে।

এ উপজেলার ভবানিপুর, টেংরাপাড়া, দূর্গাপুর, আমোদাবাদ, ধরখারসহ প্রায় দুশতাধিকের জেলে নানা  প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে  জাল দিয়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।  জেলে পরিবারের লোকজন বলছে, তারা দীর্ঘ বছর ধরে তাদের বাপ-দাদার  মাছ ধরাকেই পেশা হিসাবে  ধরে রেখেছে।  তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় তারা কৃষিসহ অন্যান্য কাজ করলে ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে জালের মাধ্যমে  তারা ৬ মাস মহা আনন্দে মাছ ধরছেন।  জাল নিয়ে বের হলে দৈনিক ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার উপর আয় হয় তাদের।   ওইসব গ্রামে বাড়ির চারদিকে পানি হওয়ায়  অন্য পেশায় না গিয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটানোর জন্যই তারা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন ।  এতে কোনো রকমে পরিবারের জন্য দু’মুঠো ভাতের জোগাড় হলেও  তাদের ভাগ্য বদল হয়নি। 

সরেজমিনে ভবানিপুর ও টেংরাপাড়া  গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জেলে পরিবারের লোকজনরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরমধ্যে কেউ  সুই সুতা দিয়ে জালের খারাপ অংশ ঠিক করছেন, কেউ বা জাল শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ জাল দিয়ে ধরে আনা মাছগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।

টেংরাপাড়া জেলে পল্লীতে দেখা মেলে  শ্রী চন্দ্র দাসের সাথে। তিনি দুপুরে মনের আনন্দে গুণ গুণ করে গান গাইছেন  আর ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। জাল মেরামত করার  ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে।  তিনি বলেন, তার পরিবারে ছেলে ৩ ছেলে ২ মেয়েসহ ৭ জনের সংসার। তিনি তার বাবার সাথে ছোট বেলা থেকেই এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে চলছে তার সংসার। নদী, খাল বিলে পানি থাকায় প্রতিদিনই জাল দিয়ে মাছ ধরতে তিনি।  তার এ কাজে ছেলে সহযোগিতা করছেন বলে জানায়।  দৈনিক ২ হাজার টাকার উপর জাল দিয়ে ধরা মাছ বিক্রি করা হয়।

সুজন চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ মাছ মাছ ধারা যায়। ওই সময় ভালো ভাবেই চলে সংসার। পানি চলে গেলে মাছ ধরা বন্ধ থাকে তখন কৃষিকাজসহ এলাকায় শ্রমিকের কাজ করা হয়। জাল দিয়ে মাছ ধরাই হলো আসল পেশা। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে ভালো টাকা আয় করা যায়।

নীল মোহর দাস বলেন, জন্মের পর ১২ বছর থেকে বাপ দাদার সাথে থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন বলে তিনি জানায়। ছোট বেলা থেকে তাদের পাশে থাকায় এই পেশা আর ছাড়তে পারছি না। তার সংসারে ১ ছেলে ৩ মেয়েসহ ৬ জন সদস্য রয়েছে। এখন সন্তান ও জাল নৌকা মাছ ধরা এই কাজে জড়িয়ে আছে। মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করছেন  তিনি । প্রতিদিন  নৌকার মাধ্যমে জাল দিয় মাছ ধরে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার উপর মাছ বিক্রি হয় । তবে বর্ষা কালে জীবিকা ভালো ভাবে চললেও শুষ্ক মৌসুমে চলা খুবই কষ্ট হয় । ওই সময় জীবন বাঁচাতে কৃষিকাজসহ এলাকায় যখন যে কাজ পাই করা হয়।

প্রদীপ দাস,সুশান্ত দাস, অতুল দাসসহ এখানকার বেশ কয়েকজন জেলে  জানান, তারা বাপ-দাদাকে দেখে নিজেরাও মাছ শিকার করেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাছ শিকার করাই এখন তাদের নেশা ও পেশা। কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেলেও তারা ছাড়তে পারেন নি। নদী খালে বিলে পানি বেশী স্থানীয় থাকলে মাছ ধরা বেশী সময় পাওয়া যায়। এর ওপর নির্ভর করেই তাদের জীবন চললে ও তাদের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।

আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন,  এ উপজেলার ১৪৪১ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছে। ওই সমস্ত মৎস্যজীবীদের  মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বড় নেট জাল ছাড়া নদী খাল জলায়শয় থেকে ছোট নেট ও চট জাল দিয়ে পোনা মাছ না দরতে বলা তাদেরকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট ও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন পোনা মাছ সংরক্ষণ করা গেলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সকলের সচেতনতা হওয়া প্রয়োজন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads