• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

বিশ্লেষণ

চমকে বছর শুরু, চমকহীনতায় শেষ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

নানা চমকের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সাল শুরু হয় আওয়ামী লীগের। আগের বছরের মাত্র এক দিন আগে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করার মধ্য দিয়ে নতুন বছরে যাত্রা করে দেশের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক দল। দলের নেতৃত্বে ‘চমকের মন্ত্রিসভা’ দিয়ে বছর শুরু।

সহযোগী সংগঠনগুলোর এক শ্রেণির নেতাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম যেমন শীর্ষ নেতৃত্বকে সদ্য বিদায়ী বছরের বিভিন্ন সময় অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে, তেমনই বছরের শেষদিকে এসে শুদ্ধি অভিযান ও সম্মেলনের মধ্য সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্বও আসে। দীর্ঘ বছরের ‘অচলায়তন’ ভেঙে দলের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বছর শেষে দেখা যায় উচ্ছ্বাস, আবেগ ও নতুন সাংগঠনিক তৎপরতা। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া এ দলের নেতৃত্বের সরকার ২০২০ সালে তার জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। পরিকল্পনা গোছানোর লক্ষ্যে বিদায়ী বছরটিও ছিল আওয়ামী লীগের কাছে বিশেষ গুরুত্বের। তবে প্রস্তাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলের জোট ও জাতীয় পার্টি (জাপা) বাদে মহাজোটের শরিক দলকে সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের আসনে বসাতে পারেনি। ‘দৃশ্যমান’ রাখার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েও মাঠের রাজনীতিতে ১৪ দলের জোট বিদায়ী বছর ‘দৃশ্যমান’ হতে পারেনি বলে বিস্তর অভিযোগ আছে।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠিত হলে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙে। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ২৪ পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ৪৬ জন স্থান পান। একই সঙ্গে সদ্য বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রীসহ মোট ৩৬ জন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। মন্ত্রিসভার ৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩১ জনই নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তাদের মধ্যে ২৭ জনই প্রথমবার মন্ত্রী হন। এটাকেই মন্ত্রিসভার ‘বিশেষ চমক’ হিসেবে দেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, শরিক দলগুলো ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এর আগে গঠিত টানা দুটি সরকারের মন্ত্রিসভায় দলের নেতৃত্বের মহাজোট ও ১৪ দলের জোটের নেতারাও ছিলেন। মন্ত্রিসভায় থেকেও দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল মহাজোটের অন্যতম শরিক জাপা। ২০১৯ সালের শুরুতে গঠিত টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো দলের নেতা নেই। ২০২০ সালের শুরুতে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও পুনর্বিন্যাস হতে পারে বলে বিদায়ী বছরের শেষদিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নানাভাবে আভাস দেওয়া হয়। তবে মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের সময়ও মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে কারো ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়।

জাপাসহ মহাজোটের শরিক অন্য দল ও ১৪ দলের জোটকে একাদশ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ। উন্নত গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংসদে বিরোধী দলগুলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে যে ভূমিকা পালন করে থাকে তেমন বিরোধী দলের ভূমিকায় শরিক দলগুলোকে দেখতে চায় ক্ষমতাসীন দল। তবে সংসদে বিরোধী দল হওয়া নিয়ে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে দেখা দেয় মতানৈক্য। কয়েকটি দল বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চাইলেও অন্যান্য দলের নেতারা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। দলগুলোর দোলাচলের কারণে একাদশ সংসদের প্রথম বছরে সেগুলোকে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।  আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেওয়া অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বাদ দেওয়ার শুদ্ধি অভিযান শুরুর কথা সদ্য বিদায়ী বছরের মাঝামাঝি থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যেভাবে বলা হয়, বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে শুরু থেকেই সন্দিহান ছিল তৃণমূলের অনেকে। অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে দলের দাপুটে ও প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে। বহিরাগতদের দলে ভিড়িয়ে তারা নিজেদের অনুসারী ও দলবলের সংখ্যা ভারী করে নানা ফায়দা লুটছেন। এসব নেতা অভিযান চলাকালে নানা কায়দাকানুন করে সুবিধাভোগী ও অনুপ্রবেশকারীদের দলে রাখার চেষ্টা করবেন বলেও তৃণমূল সন্দেহ প্রকাশ করে। তৃণমূলের সন্দেহ ও অন্য নেতাকর্মীদের অভিযান বিষয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের এক যৌথ সভায়। এর এক সপ্তাহ পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দলীয়প্রধান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের দুই নেতার। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তার নির্দেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। বহুল আলোচিত ক্যাসিনো, জুয়া ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads