• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের অধিকৃত কাশ্মিরের সীমান্ত এলাকায় বাঙ্কার তৈরি করছে ভারত

ছবি : সংগৃহীত

এশিয়া

মোদির সঙ্গে ফোনালাপ চান ইমরান

ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি

# সীমান্তের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান # দক্ষিণ এশিয়ায় আতঙ্ক # আটক পাইলটের মুক্তি আজ # বিশ্ব সম্প্রদায় চায় সমঝোতা

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৯

টান টান উত্তেজনা আর যুদ্ধাতঙ্কে রয়েছে জুম্ম-কাশ্মিরের উভয় সীমান্তের জনগণ। দেশ দুটি একে-অপরের সীমান্ত অতিক্রম করে বিমান হামলা চালিয়েছে। বিজেপি জোটের নেতারা পাকিস্তানকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সীতারমণ যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে তিন বাহনীপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে পুরো সীমান্ত এলাকায় বাঙ্কার তৈরি অব্যাহত রেখেছে ভারত। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন যুদ্ধের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। গত বুধবার দু’দেশের  পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই গতকাল বৃহস্পতিবার ফের ভারতের আকাশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান। খবর : বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ডন, এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪৪ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর থেকেই চির বৈরী ভারত-পািকস্তানের মধ্যে নতুন করে এই উত্তেজনা তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মিরের পুঞ্চ সেক্টরে ভারতের আকাশে পাকিস্তানের দুটি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে তাড়া করে। শুধু তাই নয়, ভারতের আকাশে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ঢোকার চেষ্টা করছে- এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ ছাড়া এ দিন সকালে কাশ্মির সীমান্তে উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। যদিও ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়া। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দু’দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কোথায় গিয়ে থামবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববাসী। তবে ভারতীয় বিমান হামলার পর থেকে কাশ্মির সীমান্তজুড়ে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার যে প্রদর্শনী চলছে তা এড়াতে দুই পক্ষের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

যেকোনো মূল্যে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। উভয়ের সঙ্গে আলোচনাকালেই তিনি উত্তেজনা কমাতে দু’দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা চাই ভারত-পাকিস্তান পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখুক। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। দেশটির সরকারের শীর্ষ কূটনীতিক রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ওয়াং ই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে ফোনে কথা বলেছেন। আলাপকালে পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ ছাড়া জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, তারা সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন। উভয় দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দু’দেশের সঙ্গেই নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মধ্য দিয়ে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের তাগিদ দিয়েছে তারা। 

ইইউ সদস্য রাষ্ট্র জার্মানি পৃথক বিবৃতিতে একই ধরনের অবস্থান প্রকাশ করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক দূত সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া ও ইরান। বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশিকে এই প্রস্তাব দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রস্তাব দিয়েছেন যেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান আজহার মাহমুদকে কালোতালিকাভুক্ত করে। তবে চীন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সীমান্তে ১৪ হাজার বাঙ্কার নির্মাণ করছে ভারত। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরে এসব বাঙ্কার নির্মাণ হচ্ছে। বাঙ্কারে স্থানীয় বাসিন্দাদের রাখা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোনো যুদ্ধ বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে বাসিন্দাদের যাতে স্থানান্তর না করেই নিরাপদে সেখানে রাখা যায় তাই এই ব্যবস্থা।

গত সপ্তাহ থেকেই বাঙ্কার নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানায় মোদি সরকার। দু’দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও হামলার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তা কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভারতের বিমান হামলার পর পাকিস্তান পাল্টা হামলা করলে দু’দেশ থেকেই প্রতিরোধের ঘোষণা আসে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত যেকোনো সময় পাকিস্তানের হামলার আশঙ্কা করছে। ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মির থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ নিয়ে তারা একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সকালে ভারতের আকাশে চারটি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ঢুকে পড়ে। যার মধ্যে একটিকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করে ভারত। একই দিন কাশ্মিরে আকাশ সীমানা লঙ্ঘন করায় ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এর মধ্যে একটি বিমান কাশ্মিরের ভারত সীমান্তে পড়লেও অপরটি পড়ে পাকিস্তানের মধ্যে। ওই বিমানে থাকা পাইলটকে আটক করা হয়। এদিন ভারতীয় বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয় বলে খবর পাওয়া যায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আটক ভারতীয় পাইলটকে আজ মুক্তি দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে যৌথ সেশনে এ কথা বলেন তিনি। সীমান্তে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সেই অধিবেশনেই ইমরান বলেন, আমাদের হাতে ভারতের একজন পাইলট বন্দি আছেন। শান্তির বার্তা হিসেবে আমরা তাকে মুক্তি দেব। সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে ফেটে পড়ে পাকিস্তানের সংসদ। সবাই বিনাবাক্যে অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।

অধিবেশনের শুরুতেই নিজের বক্তব্য পেশ করেন ইমরান। তার ভাষণে ছিল বিনয়ের সুর। তিনি বার বার বলছিলেন, শান্তি চান। পাকিস্তান শান্তির দেশ। আমরা কখনোই যুদ্ধের পথে যেতে চাই না। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ফিরে আসুক। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ রাখতে চায় না তার দেশ। তবে ভারত যদি পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করে, তাহলে আমরা তার উত্তর দিতে বাধ্য হব। তখন আমাদের কিছু বলতে পারবেন না। 

ভারত যদি বিমানবাহিনী না পাঠাত, তাহলে আমাদের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কোনো সেনা পাঠানো হতো না। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েই বিমানবাহিনী পাঠিয়েছি। কারণ এটা প্রমাণ করা দরকার ছিল, আমরাও শক্তিশালী। তবে, আমাদের মাথায় একটা বিষয় ছিল- ভারতের আক্রমণে আমাদের দেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিই ভারতের ক্ষতি হয় এ ধরনের হামলা আমরা করব না। আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। আমরা কাউকে মারিনি। শুরু থেকেই শান্তির প্রতি আমাদের আস্থা প্রদর্শন করেছি। ভবিষ্যতেও তাই হবে। শান্তির বার্তা দিতেই আমরা অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে পাঠিয়ে দেব।

এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন ইমরান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এ কথা জানান। দু’দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যে এই আগ্রহের কথা জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও ইমরান ভারতের প্রতি শান্তি ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভারত যা করছে (হামলা), পাকিস্তানেরও সেটা করার ক্ষমতা রয়েছে।

জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কোরেশি বলেন, টেলিফোনে মোদির সঙ্গে কথা বলে শান্তির প্রস্তাব দিতে চান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সেই সাক্ষাৎকারেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ভারত শান্তি প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত আছে কি? তবে আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। ভারত যদি শান্তিকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে আমরাও শান্তির জন্য প্রস্তুত। যদি সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত থাকে, তাহলে আমরা তাতেও রাজি। 

পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে আমরা ভারতের কাছ থেকে বেশকিছু নথিপত্র পেয়েছি। সেই নথিপত্রের ভিত্তিতে তিনি ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। আমরা কথা বলতে প্রস্তুত। আসুন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করি। যেকোনো বিষয় নিয়েই আলোচনায় বসতে রাজি আমি। ভারতের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আসলে কী চান? আপনারা আঞ্চলিক রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা চান? নিরীহ মানুষের প্রাণহানি চান? এটা হবে বোকামি। এটা কোনো বিচক্ষণ নেতৃত্বের বিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক ফোনালাপে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগ্লুর সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির টেলিফোনে কথা হয়। সেই ফোনালাপে পাকিস্তানকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ার কথা জানানো হয় তুরস্কের পক্ষ থেকে। চলমান উত্তেজনা নিয়ে সৌদি আরব এখনো কোনো কথা না বললেও সৌদি যুবরাজের জরুরি বার্তা নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে গেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার রাতে সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি পাকিস্তান সফরের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। আমি তাকে স্বাগত জানিয়েছি।

উত্তেজনা নিরসনের ইঙ্গিত ট্রাম্পের

বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে দু’দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া উত্তেজনা নিরসনের ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম  জং উনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণেই দেশ দুটি থেকে আমাদের কাছে ইতিবাচক খবর আসছে। তাদের নিবৃত্ত করার প্রচেষ্টায় আমরা যুক্ত ছিলাম। আমাদের কাছে ভালো খবর আছে। আশা করছি বিদ্যমান পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এর আগে পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় দু’দেশকেই যেকোনো মূল্যে উত্তেজনা এড়িয়ে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পাকিস্তান দুই ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করার পর এ আহ্বান জানান তিনি।

আকাশসীমা বন্ধে বিপাকে যাত্রীরা

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও বিমান যুদ্ধের পর পাকিস্তানের নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিমান যাত্রীরা। কয়েকটি এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট বাতিল করে। তবে আজ দুপুর ১টায় আকাশসীমা পুনরায় খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় যেসব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে তাদের মধ্যে থাই এয়ারওয়েজ, এমিরেটস ও কাতার এয়ারওয়েজ অন্যতম। এসব এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমা দিয়ে ওড়ার সূচি ছিল। পাশাপাশি ইতিহাদ, ফ্লাইদুবাই, গাল্ফ এয়ার, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স ও এয়ার কানাডাও ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়।

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইগুলোকে ঘুর পথে যেতে হয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্রাঙ্কফুর্টগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। থাই এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্তে তাদের অন্তত ৩০টি ফ্লাইটের সূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ইউরোপগামী বা ইউরোপ থেকে ফেরার ফ্লাইট ছিল। ফলে বৃহস্পতিবার ব্যাংককে এয়ারওয়েজটির প্রায় পাঁচ হাজার যাত্রী আটকা পড়ে।

থাই এয়ারওয়েজের এক মুখপাত্র জানান, ইউরোপের ফ্লাইটগুলোর চার হাজার যাত্রী ও পাকিস্তানগামী ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী আটকা পড়েছে। থাইল্যান্ডের ফুকেটে ছুটি কাটিয়ে মিউনিখে ফিরতে চাওয়া জার্মান পর্যটক ৫৫ বছর বয়সী গেদা হাইনজেল বলেন, ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি আমরা। আমাদের কিছু খেতে দেওয়া হয়নি, থাকারও কোনো ব্যবস্থা করেনি।

জম্মু-কাশ্মির ছাড়ছেন পর্যটকরা

সীমান্তে উত্তেজনার জেরে এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন নিয়ন্ত্রণ রেখার আশপাশে থাকা সাধারণ কাশ্মিরিরা। এ ছাড়া ভারতের জম্মু-কাশ্মির ছাড়তে শুরু করেছেন পর্যটকরাও। উত্তেজনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দু’দেশের শেয়ার বাজারেও। জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিবেশী দেশ দুটির বিরোধের অন্যতম প্রধান কারণ কাশ্মির। এই কাশ্মির নিয়েই কয়েকদফা সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর দু’দেশ।

ভারক-পাকিস্তানের মুখোমুখি অবস্থানে বরাবরই বিপাকে পড়েছে সীমান্তবর্তী মানুষ। এবারের উত্তেজনায় ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকার অনেক গ্রাম খালি করে দিয়েছে ভারত। ভারতের হামলার ভয়ে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরের সীমান্তবর্তী মানুষও। বন্ধ রয়েছে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আজাদ কাশ্মিরের হাত্তিয়ান বালার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার উসমান সারাম বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে। হাত্তিয়ান বালায় স্থাপন করা ক্যাম্পে আশ্রয় ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads