• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে এখনো পিছিয়ে দেশ

মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস : প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনার গতকাল অনুষ্ঠিত হয়

ছবি বাংলাদেশের খবর

ব্যাংক

বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে এখনো পিছিয়ে দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০১৮

বিশ্বব্যাপী ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু দেশে আটটি পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংক এবং ১৭টি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো থাকলেও সুকুক এখনো চালু হয়নি। তবে ভিন্ন নামে ইসলামিক বন্ড চালু রয়েছে। তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস : প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর।

বিআইবিএম বলছে, বিশ্বে ইসলামিক বন্ড সুকুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরবে। ইসলামিক বন্ড সুকুকের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ দেশটির দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে সুকুক বন্ড। ২০১৮ সালের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ইসলামিক বন্ড সুকুকের প্রায় ৩৩ শতাংশ মালয়েশিয়ার শেয়ার। এরপর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই, জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে দেশটির। আবার বৃহৎ মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের অধিকাংশ পরিমাপকে পেছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. হায়দার আলী মিঞা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইয়াছিন আলি এতে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন বাংলাদেশের মূলধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে ৮টি ইসলামিক ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭টি উইন্ডো ইসলামিক ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা দিচ্চে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, যাতে আগামী দিনে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সুকুক বন্ড খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশ ঘুরে কীভাবে চালু করলে এ বন্ডটি জনপ্রিয় হবে তা খতিয়ে দেখছে। তিনি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করার ওপর জোর দেন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমাতে প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বড় ধরনের ঋণের সঙ্গে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুকুকের প্রবর্তন জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। এজন্য সেবায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, প্রচলিত ব্যাংকগুলোর চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকের প্রোডাক্ট অনেক বেশি। এগুলো আরো বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। এসব প্রোডাক্ট বৈচিত্র্যের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এক্সিম ব্যাংকের এমডি ড. মো. হায়দার আলী মিঞা বলেন, মালয়েশিয়ার চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ মালয়েশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশের অনেক ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা থেকে মালয়েশিয়ার ভিন্নতা আছে, যাতে গ্রাহকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতদ সত্ত্বেও বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকিং কর্তৃক প্রদানকৃত সেবাসমূহ সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন ইসলামিক পণ্য তৈরি করতে হবে, যা গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads