• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ ছাড় দেবে ব্যাংক

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিশেষ ছাড় দেবে ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৮

সম্প্রতি পদ্মা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বিশেষ ছাড় দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলাসহ কয়েকটি জেলার কৃষি এবং এসএমই ঋণসহ সব গ্রাহক বিশেষ আর্থিক নীতি সহায়তা দিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের আজ বুধবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলা পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বাজার, ঘরবাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্রিজ-কালভার্ট ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার ঋণগ্রহীতা বিশেষত কৃষি এবং এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তা ছাড়া নদী ভাঙনের কারণে আয় করার কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে অনেকের। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হারে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তাদের ঋণের মেয়াদ বাড়ানোও কঠিন হয়ে পড়বে।

এমতাবস্থায়, ওই খাতগুলোর ঋণ হিসাবগুলো বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্থরতা দেখা দিতে পারে। বর্ণিত পরিস্থিতিতে, নদী ভাঙনে শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরিয়ে আনাসহ তাদের পুনর্বাসনে আর্থিক নীতি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও উদ্যোক্তারা যাতে ঋণখেলাপিতে পরিণত না হন, সে লক্ষ্যে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে, ক্ষেত্র বিশেষে ডাউন পেমেন্টের শর্ত শিথিল করে কৃষি এবং এসএমই খাতের ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া যাবে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতারা যাতে প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে যথাসময়ে নতুন ঋণ সুবিধা পেতে পারেন সে লক্ষ্যে কোনো অর্থ জমা ছাড়াই পুনঃতফসিল পরবর্তী নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার নিমিত্তে এবং আবাদযোগ্য (যদি থাকে) স্থানগুলোয় কৃষি কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কৃষকদের প্রকৃত চাহিদার নিরিখে বিশেষ কৃষি ঋণ হিসেবে ৪ শতাংশ রেয়াতি হার সুদে আমদানি বিকল্প ফসলে (ডাল, তৈলবীজ, মসলা ও ভুট্টা) কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আলোকে ঋণ প্রদানে প্রাধান্য দিতে হবে।

চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) নদী ভাঙনে সম্পূর্ণ বিলীন হওয়া নিঃস্ব কৃষকদের ব্যাংকঋণের সুদ মওকুফের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পর্ষদ সুদ মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে,  নতুন করে কোনো সার্টিফিকেট মামলা দায়ের না করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনাদায়ী ঋণগুলো যাতে তামাদি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ এবং দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলাগুলোর তাগাদা ৬ মাস বন্ধ রেখে প্রয়োজনে সোলেনামার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে প্রকৃত চাহিদা মোতাবেক যথাসময়ে নতুন ঋণ পেতে কোনো রূপ হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্ত শরীয়তপুরের পরিবারগুলো কিছুটা নিঃশ্বাস নিতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ব্যাংকগুলো যাতে সঠিকভাবে পরিপালন করে সে লক্ষ্যে তদারকি কার্যক্রম চালাতে হবে বলে অনেকে মনে করছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক আরেক আদেশে শরীয়তপুরের পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা-সিএসআর থেকে অর্থ ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর ব্যাংকগুলোপ তার কর পরবর্তী মুনাফার ৫ শতাংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারে। তবে মোট সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ এককভাবে শিক্ষা খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads