• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমছে, বাড়ছে খেলাপি

কৃষি খাতে ঋণ

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমছে, বাড়ছে খেলাপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

উদ্বেগজনকভাবে ব্যাংকগুলোতে কমেছে কৃষি ঋণ এবং বাড়ছে খেলাপি ঋণ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ দিয়েছে ৩ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময় ছিল ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৭৪২ কোটি টাকা। অন্যদিকে খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ এখন ৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের প্রতি মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ কৃষি ঋণ প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

অর্থবছরের শুরুতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তা ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের থেকে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ আরো বেশি ছিল। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কৃষি খাতে ২ হাজার ৯০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। তবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ করা অর্থ যোগ করলে মোট কৃষি ঋণ দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময় থেকে ৭০৪ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষকদের মাঝে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, গত দুই মাসে মোট কৃষি ঋণ গেছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বিতরণ করেছে ১৪৫ কোটি টাকা।

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমলেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ এখন ৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের সিংহভাগ সরকারি ব্যাংকগুলোর। একই সঙ্গে ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর মামলার পরিমাণও বাড়ছে। প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মামলা রয়েছে কৃষি ঋণ আদায়ে। বন্যা, নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ঋণ সঠিক সময়ে আদায় হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মামলা দায়েরের ফলে অনেক কৃষক হয়রানিও হচ্ছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে কৃষি খাতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ খেলাপি। আলোচ্য সময় পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর ২৯ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি রয়েছে ৫ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশ। যা ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ স্থিতির ১৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মোট ৯ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার কৃষি ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা এখন খেলাপি। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৮৯৩ কোটি, জনতা ব্যাংকে ৪৭৭ কোটি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২১২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে উত্তরা ব্যাংক। এ ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে।

আলোচিত সময়ে দেশি-বিদেশি খাতের ৮টি ব্যাংক এ অর্থবছরে কৃষি খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং ওরি ব্যাংক। এ ছাড়া মধুমতি এবং সীমান্ত ব্যাংক গত তিন মাসে একটি টাকাও কৃষি খাতে ঋণ দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ কৃষি খাতে বিতরণ করতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবস্থা চালু করে। লক্ষ্য অর্জন করতে না পারলে সম পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই অর্থের জন্য কোনো সুদ পরিশোধ করে না।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার কৃষি ঋণ দিয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ জন কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের অর্থনীতি চলছে তিনটি চালিকার ওপর ভর করে। কৃষক, পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়। তাই আমরা কৃষি খাত যাতে আরো বেশি উন্নতি করে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যাতে কৃষি খাতের অবদান বাড়ে সেজন্য প্রতি বছর কৃষি ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করি। আশা করি, অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলো বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুটি কারণে ঋণ কমতে পারে। এক, কৃষকরা আগ্রহ পাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলো ঋণের প্রবাহ টেনে ধরতে পারে। কৃষকরা ঋণ পেতে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এটি বন্ধ করতে পারলে ঋণপ্রবাহ বাড়বে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads