• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ভোটের আগে কৃষিঋণে বড় ছাড়

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

ভোটের আগে কৃষিঋণে বড় ছাড়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঠিক এই মুহূর্তে কৃষকদের জন্য ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বড় ছাড় দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কৃষকের মাথায় মামলার খড়গ চাপিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। অথচ বড় ঋণখেলাপি ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস করে না এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ তিন চালিকাশক্তির অন্যতম দেশের সাধারণ কৃষকরা। অন্য দুই চালিকাশক্তি হলো প্রবাসী বাংলাদেশিরা ও আমাদের পোশাক কন্যারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কৃষকদের মামলায় আসামি করতে বেশি উৎসাহী ব্যাংকগুলো। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি ঋণ আদায়কল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মোট মামলার পরিমাণ ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪০৮। ৫০৫ কোটি টাকা আদায়ে এই মামলা করা হয়েছে। প্রায় দুই লাখ কৃষক এই মামলায় আসামি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিসহ নানা কারণে বাংলাদেশের কৃষকরা ফসল উৎপাদন ও আহরণে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে যে সকল কৃষক ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধা গ্রহণ করেছেন তারা বর্ধিত সময়েও ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। ফলে পুনঃতফসিলকৃত কৃষি ঋণের একটি বড় অংশ পুনরায় বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়ে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতদপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাউন পেমেন্ট গ্রহণের শর্ত শিথিল করা যাবে। ক্ষেত্র বিশেষে বিনা ডাউন পেমেন্টেও এ ধরণের ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। ঋণ পুনঃতফসিলের পর কৃষকদের পুনরায় নতুন করে স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণ প্রদান করা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো নতুন জমা ব্যতিরেকেই পুনঃতফসিল পরবর্তী নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে। সার্টিফিকেট মামলা চলাকালীন গ্রাহকের সঙ্গে সমঝোতার (সোলেনামা) মাধ্যমে সার্টিফিকেট মামলা উত্তোলন ও নিষ্পত্তিপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে।

ইতোপূর্বে পুনঃতফসিলকৃত স্বল্পমেয়াদি কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেও উল্লিখিত সুবিধাদি প্রযোজ্য হবে। এই সুবিধা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে সরকার কৃষিকে ব্যাপক জোর দিলেও ব্যাংকগুলোর অনীহায় কমছে কৃষি ঋণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৮৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমলেও আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত অক্টোবর শেষে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই মাস শেষে ছিল ৩৯ হাজার ২২২ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি খাতে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এবারের এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads