• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
এবার ব্যাংক খাতে শুদ্ধি অভিযান

লোগো বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক

এবার ব্যাংক খাতে শুদ্ধি অভিযান

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

ব্যাংক খাতে শুদ্ধি অভিযানে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। শিগগিরই তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হবে। ওইসব বৈঠকে আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে। আর এতে আইনি সহায়তা দিতে ডাকা হতে পারে আইনজ্ঞদের।

জানা গেছে, এই খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন স্তরে। বিগত দিনগুলোতে ব্যাংক মালিকদের চাপে সরকার একাধিকবার ব্যাংক-কোম্পানি আইনের সংস্কার করলেও এবার সুশাসন প্রশ্নে বিদ্যমান আইনটি আবারো সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুদ্ধি অভিযান কি না বলতে পারব না। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একসঙ্গে বসতে চাই। নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তাই সবাই বসে ব্যাংকিং খাতের আগামী দিনের সম্ভাবনা ও ঝুঁকিগুলা শনাক্ত করা হবে। একই সঙ্গে করণীয় ঠিক করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, সরকার ব্যাংক খাতের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করতে পারে। যার আওতায় ব্যাংক খাতের অগ্রগতি ও সুশাসন নিয়ে সুপারিশ ও কার্যক্রম শনাক্ত করা হবে।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম দুই মেয়াদ ব্যাংক খাত ছিল ঘটনাবহুল। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক সূচকে এই খাতের অবনতি হয়েছে। বেড়েছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। সুশাসন কমে যাওয়া অনেক ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে গত দশ বছরে। অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। ফলে বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংক নির্ধারিত প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। মূলধন পর্যন্ত খেয়ে ফেলছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি, বিসমিল্লাহ, অ্যাননটেক্স, ফারমার্স, বেক্সিমকো, বসুন্ধরাগ্রুপ সহ  শেয়ার বাজারের বেশ কিছু বড় ঘটনা ও আরালেও আছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি বলছে, গত দশ বছরে ব্যাংক খাত থেকে ২২ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ। মূলধন ঘাটতিও বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি আরো নাজুক। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। যার অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ ব্যাংকে।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেগুলো আলোচনা করতে ৬ ফেব্রুয়ারি বসছে বৈঠক। ব্যাংক-কোম্পানি আইন, অর্থঋণ আইন, নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট ও দেউলিয়া আইনকে কীভাবে কার্যকর করা যায় তা পর্যালোচনা করা হবে। কোথায় সংশোধন করতে হবে সে বিষয়ে উপায় খোঁজা হবে ওইদিনের বৈঠকে। এছাড়া আইন সংশোধনের পাশাপাশি এ খাতে ঝুলে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তির উপায়ও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। 

জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক প্রতিবেদককে গতকাল বলেন, আমরা ব্যাংক খাতের জন্য একটি বিশদ ছক তৈরি করতে চাই। সুশাসনকে সামনে রেখে এই ছক তৈরি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেখানে পরিবর্তন দরকার সেখানে করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। তবে আইন সংশোধনের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ও ৪৭- এই দুটি ধারা সংশোধন করা হতে পারে। এই আইনের ৪৬ ধারায় বলা আছে, রীতির বিরুদ্ধে কাজ করলে শাস্তিমূলক হিসেবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি ও পরিচালকদের অপসারণ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে এ নিয়ম শুধু বেসরকারি ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য। এ জায়গাটি পরিবর্তন করে সরকারি বেসরকারিসহ সব তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই আইন করা জরুরি। অন্য ধারায়, সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন বাড়াতে চাইলে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আলাদা করতে হবে। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পর্ষদের চাপে এমডিরা এখন কাজ করতে পারেন না অনেক ব্যাংকেই। এটি উদ্বেগজনক। এমন ঘটনা বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads