• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
কারো হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কারো সঙ্কট

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

সংরক্ষিত ছবি

ব্যাংক

কারো হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য কারো সঙ্কট

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৬ মার্চ ২০১৯

ব্যাংক খাতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কারো কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো ব্যাংক রয়েছে গভীর তারল্য সঙ্কটে। তবে জানুয়ারি শেষে তফসিলি ব্যাংকগুলোয় উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার কোটি টাকা।

অবশ্য নানা কারণে ব্যাংক খাত নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। খোদ অর্থমন্ত্রীও ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যাংক খাত এখন সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখতে ভয় পাচ্ছে।

ব্যাংক খাতে আমানতের তুলনায় ঋণ বাড়ছে। এতে তারল্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। চাপ সামলাতে অন্য ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো কোনো ব্যাংককে ধার করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য কিছুটা কমছে। গত জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে মোট উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ৭৯ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উদ্বৃত্ত তারল্য এত কমতে দেখা যায়নি। তারল্যের ওপর চাপের কারণে সুদহার বাড়তির দিকে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগদ টাকার সঙ্কটের কারণে গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংক শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ৫৭১ কোটি টাকা। এর বাইরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বা কলমানি থেকে কয়েকটি ব্যাংক নিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এর আগের কার্যদিবস বুধবার কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা।

কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দু-একটি করে ব্যাংক একশ কোটি টাকার মতো ধার নিচ্ছিল। হঠাৎ ধারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংক কলমানিতে টাকা না পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপো, বিশেষ রেপো বা তারল্য সহায়তা দিয়ে থাকে।

নগদ প্রয়োজন মেটাতে তারল্য সহায়তা বাবদ চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে রেপোরে মাধ্যমে ১৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। এ ছাড়া আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে কিনেছে ১১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থের ডলার।

২০১৭ সালে আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় নগদ টাকার সঙ্কটে পড়তে হয় দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংককে। এর ঢেউ এসে আঘাত করে পরের অর্থবছরেও। বর্তমানে নিজ প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও নেই অনেক ব্যাংকের। টাকা ধার নেওয়ার এ তালিকায় আছে— এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল, অগ্রণী, সিটি, ওয়ান, ইউনিয়ন, এনসিসি, প্রিমিয়ার, প্রাইম, স্ট্যান্ডার্ড, এনআরবি ও উত্তরা ব্যাংক।

বিদ্যমান নিয়মে, ব্যাংকগুলোর সব ধরনের তলবি ও মেয়াদি আমানতের একটি অংশ নগদে এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনে সরকারকে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে বিধিবদ্ধ জমা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংকের বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখতে হয় আমানতের সাড়ে ১৮ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকগুলোকে রাখতে হয় ১১ শতাংশ। উভয় ধারার ব্যাংকগুলোকে নগদে রাখতে হয় সাড়ে ৫ শতাংশ। বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে অতিরিক্ত অংশ উদ্বৃত্ত তারল্য। এর একটি অংশও বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ থাকে। বাকি অংশ ব্যাংকের ঋণযোগ্য তহবিল।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি শেষে এসএলআর সংরক্ষণের পর ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ৮৬ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ছিল। এর আগের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বছর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য এক লাখ কোটি টাকার ওপরে ছিল। ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৭৯ লাখ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন আমানত আসছে কম। অনেকে মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমানত ভাঙিয়ে ফেলছেন। অথচ ঋণ দেওয়ার চাপ রয়েছে। এতে অনেক ব্যাংক হয়তো এসএলআরের অতিরিক্ত বিল ও বন্ড নগদায়ন করে ফেলছে। এ ধরনের প্রবণতায় স্বাভাবিকভাবে সুদহার বাড়ছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত টাকা রয়েছে। তারা কলমানিতে বিনিয়োগ করে আয় করতে পারছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads